Advertisement
Advertisement
Abhishek Banerjee

আক্রমণের মুখে পড়েও লক্ষ্যে স্থির, ঈর্ষণীয় দূরদর্শিতায় বিজেপিকে কুপোকাত অভিষেকের

তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, সমস্ত সমালোচনার মুখে লেটার মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন অভিষেক।

Bengal polls: Abhishek Banerjee steers TMC to victory in West Bengal | Sangbad Pratidin

ছবি: অরিজিৎ সাহা।

Published by: Paramita Paul
  • Posted:May 3, 2021 2:24 pm
  • Updated:May 3, 2021 2:30 pm

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একুশের ভোটে যতবার ‘দিদি’কে আক্রমণ করেছে বিজেপি, তার থেকে বোধহয় অনেক বেশিবারই ‘ভাইপো’ ডাকে আক্রমণ শুনতে হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abbishek Banerjee)। তৃণমূল নেতৃত্ব বলেছে, কেন্দ্রের সরকার যে হারে অভিষেককে আক্রমণ করেছে তাতে অন্তত এটা প্রমাণিত যে, অভিষেক একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সেই অভিষেকই বারবার দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে তৃতীয়বার তৃণমূলের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন মানুষের মন আমরা বুঝি।

এই পরীক্ষা ছিল তাঁরও পরীক্ষা। দলের ভিতরে-বাইরে তাঁকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। মুখে আলতো হাসি রেখে কখনও-সখনও তার জবাবও তিনি দিয়েছেন। রবিবার ফল বেরনোর পর তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, সমস্ত সমালোচনার মুখে লেটার মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন অভিষেক।

Advertisement

[আরও পড়ুন : মহামারী কালে ফের অমানবিক দৃশ্য কলকাতায়! ২০ ঘণ্টা ধরে পড়ে করোনায় মৃত ব্যক্তির দেহ]

অভিষেক শেষ বক্তৃতা রেখেছেন শেষ দফা ভোটের আগে তাঁর ফেসবুক পেজে। ঘণ্টা দেড়েকের সেই বক্তৃতা শুনলেই বোঝা যায়, গত কয়েক বছরের সমালোচনা অনেক শক্ত করে দিয়েছে তাঁকে। পরিমিত কথা, তাঁর অকাট্য যুক্তির আক্রমণ কখনওই ফেলে দেওয়ার নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, অভিষেক তাঁর থেকেও বেশি সাহসী। সিবিআই বাড়িতে আসছে, কয়লাকান্ড নিয়ে এত আক্রমণ, স্ত্রীর গয়না নিয়ে প্রশ্ন, সোনা থেকে গরু পাচারের মতো নানাস্তরের ভুরি ভুরি অভিযোগ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো ব্যক্তিত্ব যখন তাঁকে কাঠগড়ায় তুলছেন, তখনও তাঁর চোখ স্থির। সামান্য কটাক্ষ ছুড়ে বলেছেন, শাহ তাঁর গুরুজন। বলুন যা ইচ্ছে হয়। সবটাই তাঁর কাছে আশীর্বাদ। এভাবে সমালোচনা হেলায় উড়িয়ে দেওয়া কি তাঁর অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার লক্ষ্মণ?

Advertisement

তৃণমূলের বৈঠকে মমতা যখন উত্তরবঙ্গ নিয়ে কর্মীদের সতর্ক করছেন, তখনই জঙ্গলমহল নিয়ে সতর্ক করছেন অভিষেক। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। জয় আসবে। এটা কি কথার কথা? নাকি আত্মবিশ্বাস আর অভিজ্ঞতার মিশেল?

তিনজনের কথা বলব। একজন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। তৃণমূলের ক্ষমতার উৎসের একটি মেরু এবং দলের নিক্তি। যখন তৃণমূলের প্রাক্তন অভিমানী নেতাদের চোরাস্রোত অভিষেকের নেতৃত্বে উঠে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন সেই ‘বক্সিদাই’ অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, অভিষেকের বয়স কম হতে পারে। কিন্তু সে রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। ওর রাজনীতির জ্ঞান আর বিচক্ষণতা ঈর্ষা করার মতো। তা ছাড়া নিজের কেরিয়ারকে মোটামুটি একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে ওর বয়সী একটা ছেলে যদি রাজনীতিতে আসতে চায়, তো এর থেকে ভাল যুব সমাজের জন্য আর কিছু হতে পারে না।

[আরও পড়ুন : জয়ের পরদিনই দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক মমতার]

আরেকজন মানস ভুঁইয়া। কংগ্রেস এবং পরে তৃণমূলে সংসদীয় রাজনীতির অন্যতম অভিজ্ঞ মুখ। একটা পা-ও অন্তত পাঁচ বছরের রাস্তা না মেপে ফেলেন না। সেই তিনি অভিষেকের অন্যতম গুণগ্রাহী। তিনি একবার বলেছিলেন, অভিষেক ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। ওর রাজনীতির যা জ্ঞান এবং যা দূরদর্শিতা, তা অনেক ভাল ভাল নেতার নেই। অভিষেককে তাঁর ভালবাসার এটাই একমাত্র কারণ বলে দাবি করেছিলেন সবংয়ের ভূমিপুত্র। শেষের জন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অভিষেকের রাজনৈতিক পাঠ এবং তার আত্তীকরণ নিয়ে যিনি অভিভূত। একই কারণে অভিষেককে নিয়ে তিনিও গর্বের কথা জানিয়েছেন। একুশের ভোটের ফলাফলে অভিষেককে নিয়ে প্রশ্নে অন্তত এই তিনজনের দেওয়া সার্টিফিকেট আরও লম্বাই হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মাথায় চোট পান, মমতাই বলেছেন, অভিষেক তখন ছোট। কিন্তু তখনও একটা পতাকা হাতে নিয়ে সিপিএম কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারলে জবাব দাও এসব বলে ঘরে ঘুরতেন। সেই অভিষেকই দলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের সেতু হলেন। দল এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়। কিন্তু নেতৃত্ব তার প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিল। সদ্য তাঁর ইন্টারভিউতে অভিষেক এর ব্যখ্যায় বলেছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করার জন্যই আইপ্যাককে আনা। প্রশান্ত কিশোর কিছু সহযোগিতা করেছেন। প্রচারের কৌশল নির্ধারণ করেছেন। পার্টির নেতৃত্ব কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই।

অভিষেক কি তবে অগ্নিপরীক্ষায় সফল? এর একটা জবাব যদি মমতার কথা থেকে ধার নেওয়া যায়, তবে ইঙ্গিতটা তাই। মমতা বলেছিলেন, “ওকে তো আমি বলেছিলাম তুই রাজ্যসভা থেকে সাংসদ হ। বলেছিল, আমি মানুষের ভোটে লড়াই করে জিতে আসব।” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ৩২ বছরের এক যুবক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আক্রমণের মুখে পড়ে, দলে নানা প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে, সিবিআইয়ের মতো সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা একা করেও যদি দলের ভবিষ্যতের জন্য এত কৌশল নিতে পারেন, আর তা যদি এতটা সফল হয়, তবে তিনি অগ্নিপরীক্ষায় দারুণভাবে পাস শুধু করেননি, ভবিষ্যতে দলের সেরা সম্পদ হয়ে উঠেছেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ