সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজতন্ত্র থেকে মোল্লাতন্ত্র। আফগানভূমে পটপরিবর্তন কম কিছু হয়নি। সম্রাট মহম্মদ জাহির শাহর আমলে গোলাপি স্কার্ট পরা আফগান সুন্দরি থেকে তালিবান জমানায় বোরখা পরিহিত নারীদের সন্ত্রস্ত চোখ বন্দি হয়েছে বহু চিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরায়। বিবর্তনের পথে আফগানিস্তানের (Afghanistan) পিছু হঠায় বারবার বকধার্মিক বর্বরদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে মহিলাদের। কিন্তু এবার নয়া যুগের সূচনা হয়েছে দোহায়। তালিবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছেন চার আফগান নারী।
আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে গত শনিবার থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠকে বসেছে আফগান সরকার ও তালিবানের (Taliban) শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে সরকার পক্ষের হয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন ফজিয়া কুফি, ফতিমা গৈলানি, হাবিবা সারাবি এবং শরিফা জুরমাতি। গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছেন ৬০ পেরোনো এই মহিলারাই। আফগানিস্তানে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে নিজেদের যোগ্যতায় দোহার শান্তি বৈঠকে আফগান সরকারের ১৭ জন পুরুষ প্রতিনিধির পাশে জায়গা করে নিয়েছেন তাঁরা। শুনলে অবাক হতে হয়, তালিবান আমলে নেলপলিশ লাগানোর ‘দোষে’ চাবুক খেতে হয়েছিল ফজিয়া কুফিকে। তবে ওই জমানায় তা ছিল নগণ্য ব্যাপার। শুধুমাত্র পরকীয়ার অভিযোগে প্রকাশ্যে মাথা কেটে নেওয়া হত মহিলাদের।
এই বিষয়ে ফজিয়ার বক্তব্য, “সময় পালটাচ্ছে। এই কথা তালিবানকে বুঝতে হবে। এখন আর তাদের সেই আতঙ্কের রাজত্ব নেই। সেসব দিন পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে আফগানিস্তান। তবে এটাও ঠিক যে আফগানিস্তানের মতো দেশে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালন করা সহজ নয়। মেয়েরাও সব পারে এই কথাটা বাকিদের বোঝানো অনেকটাই শক্ত। কাবুল বা অন্য বড় শহরে মেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। পছন্দের পেশাও বাছতে পারছে তারা। কিন্তু আফগানিস্তানের গ্রাম্য এলাকায় এখনও অনেক পিছিয়ে মহিলারা।”
ফজিয়ার মতোই ভয়াবহ অতীতের ঘটনা সুনিয়েছেন বাকি মহিলা প্রতিনিধিরা। তালিবান আমলে নিজের দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল হাবিবা সারাবিকে। তার একমাত্র কারণ ছিল, তিনি ছিলেন শিক্ষিকা। যে কোনও মূল্যে মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তালিবান শাসকরা সেটা মানেনি। তবে তালিবানের শাসন শেষ হওয়ার পর পরে আফগানিস্তানে ফিরে দেশের প্রথম প্রাদেশিক গভর্নর হয়েছেন। দু’বারের মন্ত্রীও। তবে নিজের অভিজ্ঞতার ফলেই মহিলাদের নিয়ে শীর্ষ তালিবান নেতৃত্ব মনোভাব যে আচমকাই পালটে যাবে সে কথা বিশ্বাস করতে রাজি নন তিনি। যদিও শনিবার থেকে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনাকে সদর্থক বলেই ব্যাখ্যা করলেন হাবিবা।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে দীর্ঘদিনের লড়াই শেষ করতে মরিয়া আমেরিকা। তাই দু’পক্ষের কাছেই শান্তি বজায় রাখার আরজি জানিয়ে আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেও বলেন,”আপনাদের দেশ কীভাবে, কোন রাজনৈতিক রীতিনীতি মেনে চলবে তা আপনাদেরই বেছে নিতে হবে। তবে জেনে রাখুন এই পথে গোটা বিশ্ব আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা চাই এই শান্তিপ্রক্রিয়া সফল হোক।” একই সুরে দু’পক্ষের কাছে বিভেদ ভুলে সদর্থক আলোচনার আরজি জানিয়েছেন কাতারের বিদেশমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.