সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘দার-উল-হারব কে দার-উল-ইসলাম করতে হবে।’ অর্থাৎ ইসলামের অধীন নয় যেসব ভূখণ্ড বা জমি সেই সব কাফেরের জমিতে (দার-উল-হারব) ইসলামের বিজয় পতাকা উড়িয়ে ইসলামের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সব মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলির মোটামুটি এটাই একমাত্র লক্ষ্য। সঙ্গে আরও একটি অনুশাসন জুড়ে দেওয়া হয়ে থাকে। তা হল, বিজিত বা হাতিয়ে নেওয়া কাফেরদের ভূখণ্ডে শরিয়তের বা ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
[আরও পড়ুন: ব্রাজিলের জেলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মৃত ৫৭, বন্দিদের মুন্ডু নিয়ে চলল ফুটবল খেলা!]
আদর্শ, সাংগঠনিক ও লড়াইয়ের পদ্ধতিগত দিক থেকে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য থাকলেও ইসলামিক স্টেট, আল কায়দা, লস্কর ই তইবা, জইশ ই মহম্মদ, তালিবান, বোকো হারাম, আল শাবাব, মুসলিম ব্রাদারহুড, জেম্মা ইসলামিয়া ইত্যাদি শতাধিক মুসলিম জঙ্গি সংগঠন এই দার-উল-ইসলাম গঠনের লক্ষ্যেই লড়ছে। রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ওই রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, বেশ কিছু দেশের এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আর্থিক মদতে ফুলে ফেঁপে উঠছে জেহাদের কারবার। শুধু তাই নয়, লক্ষ্য যখন এক তখন রাস্তা আলাদা হবে কেন? এই যুক্তিতে নিজেদের মধ্যে দুর্দান্ত সমন্বয় গড়ে তুলেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। যেমন এখন ভারত বিরোধী লস্কর ই তইবার সঙ্গে আল কায়দার সম্পর্ক মজবুত। আল কায়দাই লস্কর জেহাদিদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
সম্প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছিলেন যে, তাঁর দেশে এখনও ৩০-৪০ হাজার জঙ্গি রয়েছে, যারা আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে লড়াই করছে। তাঁর সরকারই এদের নিষ্ক্রিয় করা ও নিরস্ত্রীকরণে কাজ করে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্টের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধাক্কা খাবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পাক সরকার যে জঙ্গিদমনে আন্তরিক, তা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন ইমরান। তবে এই রিপোর্টর পর জঙ্গিদমনে পাক সরকারের আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
চলতি মাসে রাষ্ট্রসংঘের অ্যানালিটিক্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্যাংশন মনিটরিং টিম তাদের ২৪তম রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই মনিটরিং টিম প্রতি ছ’মাস অন্তর আল কায়দা, আইএস এবং ওই জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীদের নিয়ে এ ধরনের রিপোর্ট রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জমা দেয়। রাষ্ট্রসংঘের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজেদের সংগঠনের জন্য আফগানিস্তানকেই সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে আল কায়েদা নেতৃত্ব। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরেই সেখানকার তালিবানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে আল কায়দার। তবে লাদেনের অনুগামী আয়মান আল জাওয়াহিরি এখন অসুস্থ, প্রায় অকেজো ও বৃদ্ধ। তাই ভবিষ্যতে আল কায়দার রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। লাদেনের ছোট ছেলে আবু হামজা আল কায়দার প্রধান পদে নিযুক্ত হতে পারে।
রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘‘লস্কর-ই-তইবা এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে ক্রমাগত সহযোগিতা করেই চলেছে আল কায়দা।’’ তালিবানের পৃষ্ঠপোষকতায় আফগানিস্তানের বগাশান-সহ, পাকতিকা প্রদেশের বরমালে নিজেদের ঘাঁটি পোক্ত করতে চায় আল কায়দা। ভারতীয় কৌশলগত বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যেভাবে গোপনে লাদেনকে আশ্রয় দিয়ে পরে দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিল পাকিস্তানের সেনা ঠিক সেভাবেই আল কায়দার সঙ্গে লস্করের, আল কায়দার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সমন্বয় গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে পাক সেনাই। আগামী দিনে আফগানিস্তানে ও কাশ্মীরে এই সন্ত্রাসবাদীরা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।
[আরও পড়ুন: ব্রাজিলের জেলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মৃত ৫৭, বন্দিদের মুন্ডু নিয়ে চলল ফুটবল খেলা!]