Advertisement
Advertisement

Breaking News

Rasputin

রাশিয়ার রানি পাগল ছিলেন প্রেমে! জারের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠা রাসপুতিন আজও রহস্যময়

রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে খোদ জারের চেয়েও ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন তিনি!

Here is who was Grigori Rasputin, the self-proclaimed holy man of Russia। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 29, 2023 8:44 pm
  • Updated:July 29, 2023 8:44 pm

বিশ্বদীপ দে: ‘রা-রা-রাসপুতিন/ রাশিয়াজ গ্রেটেস্ট লাভ মেশিন’… গত শতকের সাতের দশকের একেবারে শেষে ঝড় তুলেছিলেন বনি এম নামের এক গায়ক। তাঁর সবচেয়ে হিট গানের অন্যতম ছিল এই গান। রাসপুতিন। কিন্তু কে এই ব্যক্তি? যাঁর কথা বলতে গিয়ে বনি গেয়েছিলেন, ‘হি ওয়াজ বিগ অ্যান্ড স্ট্রং, ইন হিজ আইজ আ ফ্লেমিং গ্লো/ মোস্ট পিপল লুকড অ্যাট হিম উইথ টেরর অ্যান্ড উইথ ফিয়ার।’ তবে তাঁর সম্পর্কে সবচেয়ে চমকপ্রদ লাইন বোধহয় এটাই- ‘রা রা রাসপুতিন/ লাভার অফ দ্য রাশিয়ান কুইন।’ হ্যাঁ, খোদ রুশ সম্রাজ্ঞী নাকি ছিলেন এই মানুষটির বাহুসংলগ্না। মেয়েরা নাকি পতঙ্গের মতো আকৃষ্ট হয়ে ঝাঁপ দিত এই অগ্নিপুরুষটির দিকে। কে এই ক্যাসানোভা? রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে খোদ জারের চেয়েও যিনি ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন রুশ ভূমে?

রাসপুতিনের (Rasputin) কথা বলতে বসে একবার ছুঁয়ে আসা দরকার তাঁর শৈশবকে। ১৮৬৯ সালে জন্ম রাসপুতিনের। আট ভাইবোনের অন্যতম ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর বাকি ভাইবোনরা একে একে সকলেই মারা যায়। তবে ইতিহাসবিদ জোসেফ টি ফুরমানের দাবি, ফেডোসিয়া নামে একটি বোন ছিল রাসপুতিনের। যাই হোক, তাঁর কৈশোর ও প্রথম তারুণ্যের সময়টা যেন কোন ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়েছে। সেই সময়ের কাগজপত্র থেকে কিছুই তেমন জানা যায় না। এমনই দাবি ইতিহাসবিদদের। তবে যেটুকু জানা যায় তা এরকম- খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন না তিনি। উলটে ছোট বয়স থেকেই চুরিচামারি, মদ্যপানের মতো ‘গুণের’ও প্রকাশ নাকি ঘটে গিয়েছিল তাঁর মধ্যে। তবে ঘোড়াচুরি, মিথ্যা সাক্ষ্যদানের মতো নানা অভিযোগ থাকলেও কিছুই প্রমাণ করা যায়নি। এরই পাশাপাশি তৈরি হচ্ছিল লোকশ্রুতি। আঠেরো বছর বয়সেই নাকি তিনি নিজের ‘অতীন্দ্রিয়’ শক্তি টের পেয়েছিলেন। এর মধ্যেই ১৮৮৬ সালে তাঁর সঙ্গে দেখা হল প্রাসকোভিয়া ফিয়োদরোনভার। পরের বছরই বিয়ে। এবং অচিরেই তিন সন্তানের জন্ম।

Advertisement

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ওরা সরকারের উপর ভরসা হারিয়েছেন’, মণিপুরবাসীর দুঃখ শুনলেন INDIA’র প্রতিনিধিরা]

কিন্তু সংসারধর্ম কপালে টেকেনি রাসপুতিনের। ক্রমেই ‘সাধু’ তকমা জ্বলজ্বল করে উঠতে থাকে তাঁর নামের সঙ্গে। তরুণটির নাকি নানা ‘অলৌকিক ক্ষমতা’ রয়েছে। পড়াশোনা না জানা সাধারণ মানুষদের কাছে তিনি প্রায় ‘মসীহা’ হয়ে উঠলেন। নানাজনের নানা সমস্যার সমাধান বাতলে দিতেন। ফলে জুটে গেল চ্যালাচামুণ্ডাও। এইরকম লোকরা যেমন হয় আর কী। জ্বলজ্বলে দৃষ্টি ও গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে লোকের আস্থা অর্জন। নিজেকে আধ্যাত্মিক গুরু ঘোষণা করা। তারপর ক্রমেই মিথ ও মিথ্যের কুয়াশায় জড়িয়ে অবিশ্বাস্য খ্যাতি অর্জন।

‘ম্যাড মঙ্ক’ রাসপুতিন ১৯০৩-০৪ সাল নাগাদ এসে পৌঁছন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। আর এখান থেকেই শুরু তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। রোমানভ-সম্রাট জার দ্বিতীয় নিকোলাসের একমাত্র পুত্র তথা সাম্রাজ্যের আগামী ধারক আলেক্সেই সেই সময় খুব অসুস্থ। হিমোফিলিয়ার মতো বিশ্রী অসুখে আক্রান্ত মাত্র কয়েক সপ্তাহের সেই ছোট্ট শিশুটি। এ এমন এক রোগ, রক্তপাত যেখানে থামতেই চায় না। ফলে সামান্য আঘাতও হতে পারে প্রাণঘাতী! এই রোগে আক্রান্তরা বেশিদিন বাঁচেন না। স্বাভাবিক ভাবেই রাজপ্রাসাদে নেমেছে কান্নার ঢল। বড় বড় চিকিৎসকরা পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়েই সেখানে উপস্থিত হলেন রাসপুতিন। রুশ অভিজাতদের কানেও পৌঁছেছে তাঁর ‘জাদুকরী’ ক্ষমতার কথা। তাঁরাই রাজার অন্তঃপুরে নিয়ে গেলেন রাসপুতিনকে। আর তারপর সত্যিই যেন ঘটে গেল ‘ম্যাজিক’। মুমূর্ষু শিশুটিকে জীবনে ফেরালেন ‘পাগল সাধু’।

[আরও পড়ুন: থাকবে ৯৫০ কক্ষ! ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরতে দিল্লিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর]

কেমন করে অসাধ্যসাধন করেছিলেন রাসপুতিন, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলে, জোঁকের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। আবার কারও মতে, কৃষক পরিবারের থেকে শেখা জড়িবুটি, গাছগাছড়ার নির্যাসেই নাকি কাজ দিয়েছিল। অনেকেই আবার বলেন অ্যাসপিরিনের কথা। ইউরোপে ততদিনে প্রচলিত ওই ওষুধই নাকি সুস্থ করে তুলেছিল একরত্তিকে। তবে যেভাবেই হোক, রাজপুত্রের সুস্থ হয়ে ওঠাটা সত্যি। আর এর ফলে জার ও জারপত্নী আলেকজান্দ্রার কাছে রাসপুতিনের ভাবমূর্তি কোথায় পৌঁছেছিল তা সহজেই অনুমেয়। রাতারাতি প্রভাবশালী হিসেবে তিনি পৌঁছে যান প্রায় শীর্ষে। ক্রমে খোদ জারের উপরেও যেন পৌঁছে গেল তাঁর আধিপত্য। ‘ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর’ হয়ে উঠল তাঁর গলার স্বর! শুরুতে উল্লিখিত বনি এমের সেই গান মনে করুন। লোকেরা তাঁর দিকে আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে তাকাত। জ্বলজ্বলে দৃষ্টি, শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দারুণ ভাবে মিলে গেল অলৌকিকতার জলছাপ।

রাসপুতিনের প্রেমে নাকি পড়ে গেলেন খোদ রাজমহিষী আলেকজান্দ্রা! সেই সঙ্গে আরও রাজমহলের অন্যান্য নারীদের সঙ্গেও জড়িয়ে গেল লোকটার নাম। তিনি হয়ে উঠলেন ‘রাশিয়াজ গ্রেটেস্ট লাভ মেশিন’। তবে সেই সঙ্গে তাঁর নামে নানা অভিযোগও উঠতে থাকে। মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেওয়া থেকে মারামারি। সব অভিযোগই এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতে লাগলেন সম্রাট। তিনি যে ততদিনে নিজেই রাসপুটিনকে ঘোষণা করেছেন ‘রাশিয়া (Russia) ও জার পরিবারের বিশ্বস্ত বান্ধব’ হিসেবে। তাঁরই প্রশ্রয়ে রাজপরিবারের অন্তঃপুরে তখন ‘নারীলোলুপ’ রাসপুতিন হয়ে উঠেছেন চূড়ান্ত ক্ষমতাধর।

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এরপরই। আর পৃথিবীর বহু দেশের মতোই রাশিয়ার ছবিটাও বদলে বদলে যেতে লাগল। যুদ্ধের ছোবলে দেশের অর্থনীতির অবস্থা অচিরেই হল চূড়ান্ত করুণ। সামান্য দু’মুঠো খাবার জোগাতেই নাভিশ্বাস উঠল সাধারণ মানুষের। এমতাবস্থায় সমাজের অভিজাত অংশ তথা রাজ পরিবারের প্রতি বাড়তে লাগল অসন্তোষ। স্বাভাবিক ভাবেই রাসপুতিনের মতো মানুষও সেই ক্ষোভের বাইরে রইলেন না। বলা যায়, তিনিই যেন চলে এলেন বিক্ষোভের কেন্দ্রে। কেবল বিক্ষোভকারীরাই নয়, অভিজাতদের একাংশও রেগে গেলেন। আর তাঁরাই ষড়যন্ত্র করলেন রাসপুতিনকে মেরে ফেলার।

রাসপুটিন যে ‘হোলি ম্যান’! ফিরে যাই বনি এমের গানে। সেখানে রয়েছে ‘দে পুট সাম পয়জন ইনটু হিজ ওয়াইন/… হি ড্র্যাঙ্ক ইট অল অ্যান্ড সেড, আই ফিল ফাইন।’ বোঝাই যাচ্ছে মদে বিষ খাইয়েও তাঁকে মারা যায়নি। কিন্তু সেই রাতে অত সহজে হাল ছাড়তে রাজি ছিল না ষড়যন্ত্রকারীরা। দ্রুত তারা বন্দুক তাক করে গুলি চালাতে লাগল। কিন্তু তাতেও নাকি মরেননি রাসপুতিন! শোনা যায়, ততক্ষণ গুলি চলেছিল, যতক্ষণ না তাঁর রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অতিশিয়োক্তি তো আছেই। তবু রাসপুতিনের অপ্রতিরোধ্য বেঁচে থাকার ক্ষমতার কিছু নিশ্চয়ই ছিল। না হলে এমন লোকশ্রুতি কি তৈরি হত?

শেষ পর্যন্ত নিথর রাসপুতিনকে কম্বলে মুড়ে ফেলে দেওয়া হয় নেভা নদীতে। দিনদুয়েক পরে যখন সেই দেহ মিলল, তখন সবাই নিশ্চিত হলেন, নাহ! এবার সত্যিই মারা গিয়েছেন ‘পাগল সাধু’। কিন্তু মৃত্যুর একশো বছর পেরিয়ে এসেও গল্পে-মিথে-রং চড়ানো লোকশ্রুতিতে দিব্যি টিকে রয়েছেন তিনি। প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে যাকে নিয়ে গান বানিয়ে খ্যাতি পান বনি এম। আজও সেই গান এবং গানের নায়ক হয়ে পুরনো এক পৃথিবীর বুক থেকে বর্তমান দুনিয়ায় ভেসে আসে রাসপুতিনের তীক্ষ্ণ সেই চোখজোড়া।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ