সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিজের শহরেই আঘাত হানল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, উড়ানের মাঝপথে যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে বিপত্তি ঘটে হোয়াসং-১২ নামের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটিতে। তা নিশানা ভুল করে আছড়ে পড়ে তকচন শহরে। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র দুর্ঘটনাটি ঘটে আট মাস আগে।
[নয়াদিল্লির উসকানিতেই বন্ধ মার্কিন অনুদান, ভারতকে তীব্র আক্রমণ পাকিস্তানের]
দীর্ঘ দিন গোপন রাখলেও সম্প্রতি আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগের নজরে এসেছে কিম জং-উনের ‘পথভোলা মিসাইল’ (আইআরবিএম)-এর কীর্তি। জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এর ৯০ মাইল উত্তরে তকচন শহরে আছড়ে পড়ে ওই ক্ষেপণাস্ত্র। উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শিল্প অথবা কৃষি তালুকের একাধিক বহুতল ভবন। তবে এজন্য তকচনেঅনেক বেশি সংখ্যক মানুষের মৃতু্য হয়নি বলে মনে করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
[নিউল্যান্ডসে ভারতীয় পেসারদের দাপটে প্রথম দিনই ধাক্কা খেল দক্ষিণ আফ্রিকা]
তকচন শহরটিতে বাস করেন অন্তত দু’ লক্ষ মানুষ। সূত্রের খবর, ক্ষেপণাস্ত্র দুর্ঘটনার জেরে নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে ধ্বংস হয়েছিল ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পত্তি। মারা যায় বেশ কিছু গবাদি পশু। কিন্তু কত জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন তা জানা যায়নি। কারণ, উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ খবর বাইরের পৃথিবীতে আসা খুবই মুশকিল। কিন্তু বিপর্যয় যে ঘটেছে তা নিশ্চিত করেছে চিনের জিনহুয়া সংবাদসংস্থা এবং কোরিয়ার ইওনহাপ সংবাদসংস্থা।
[নাম পালটে ভারতে হামলার ছক জঙ্গি সংগঠন জইশের]
জানা গিয়েছে, মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষামূলক উড়ান ছিল। তাতে খুব শক্তিশালী ওয়ারহেড বসানো ছিল না। ছিল সাধারণ ওয়ারহেড। ফলে খুব বড় এলাকাজুড়ে বিপর্যয় ঘটেনি। দুর্ঘটনা সীমাবদ্ধ রয়েছে তকচন শহরের মধ্যেই। পুকচ্যাং এয়ারফিল্ড থেকে রওনা হয়ে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৪৩ মাইল উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিক নিশানা করে ২৪ মাইল দূরের গন্তব্যে উড়ে যায় ক্ষেপণাস্ত্রটি। কিন্তু উৎক্ষেপণের মিনিটখানেকের মধ্যে তার প্রথম ইঞ্জিনটি বিকল হয়। তরল জ্বালানি দিয়ে চালিত ক্ষেপণাস্ত্রটি এর পরে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে টার্গেট মিস করে। তা বেস ক্যাম্পের কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ হারায়। ফলে ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্দিষ্ট পাহাড়ের চূড়ায় আঘাত হানার বদলে তকচন শহরের শিল্প ও কৃষি তালুকে আঘাত হানে। গুগল আর্থ-এর উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের অভিঘাতে কয়েকটি বহুতল নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে এবং একটি গ্রিনহাউসের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে বেশ কয়েক একর এলাকা।
[সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ, পাকিস্তানকে আর এক পয়সাও দিতে নারাজ ট্রাম্প]
আমেরিকার বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন বছরের গোড়ায় আবার একটি মিসাইল পরীক্ষা করার তোড়জোড় করছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু কোনও আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই এই ধরনের তড়িঘড়ি পরীক্ষা করলে বিপদের আশঙ্কা তীব্রতর হয়। কিম জং-উনের নিত্যনতুন অস্ত্র পরীক্ষার জেরে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র জাপান।উল্লেখ্য ২০১৭ সালের অাগস্ট মাস থেকে কিমের নিশানায় বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রকে। পিয়ংইয়ং-এর আগ্রাসী মনোভাবের কড়া সমালোচনা করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে জাপান। কারণ হাইড্রোজেন বোমা মেরে শত্রু দেশ জাপানকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন কিম। উত্তর কোরিয়াকে চাপে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শিনজো আবে।