সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে দেশে কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে রাস্তায় ফেলে হাঁটু দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়, প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে সেই দেশের বিশ্বখ্যাত সংস্থাই আবার সম্মানের উচ্চাসনে বসায় কৃষ্ণাঙ্গ মেধাবী মহিলাকে। আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েড হত্যার জের। ক্ষতয় প্রলেপ দিতে সিদ্ধান্ত বদল করে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা (NASA) তাঁদের সদর দপ্তরের নাম রাখছে প্রথম আফ্রো-আমেরিকান মহিলা গবেষকের নামে। একথা ঘোষণা করেছেন নাসার মুখ্য প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন।

এবার থেকে নাসার সদর দপ্তরের নাম – মেরি জ্যাকসন। তিনিই আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা গবেষক। ছয়ের দশকে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে নাসাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন মেরি। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে এই সম্মাননা জ্ঞাপন বলে জানিয়েছেন ব্রিডেনস্টাইন। ওয়াশিংটন ডিসিতে নাসার সদর দপ্তর। সেই দপ্তরের বাইরেই এবার থেকে জ্বলজ্বল করবে নামফলক – মেরি উইলিয়ম জ্যাকসন। পঞ্চাশের দশকে তিনি ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটনে নাসার রিসার্চ সেন্টারে কাজ শুরু করেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনি বহু মহাকাশ গবেষণার কাজে সাহায্য করেন বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থার প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন। শিগগিরই মেরির নামে নামকরণ হয়ে যাবে নাসার সদর দপ্তরের।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে যুদ্ধের সম্ভাবনা, এবার পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে চিনা বায়ুসেনা]
শুধু মেরিই নন, নাসায় যে আফ্রো-আমেরিকার মহিলা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে কাজ করে গিয়েছেন, তাঁদের সকলকে এভাবেই সম্মানিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে নাসা। ব্রিডেনস্টাইন বলছেন, ” মেরি কখনও কোনও স্বীকৃতির ধার ধারেননি। তিনি চাইতেন, তাঁরই মতো আফ্রো-আমেরিকান মেয়েরা বিজ্ঞান ও গবেষণার কাজে এগিয়ে আসুক। সে অর্থে তিনিই অন্যদের আদর্শ।” ২০১৯ সালে তাঁর নামে মরণোত্তর গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়েছিল।
এবার আরও বড় সম্মান। নাসার সদর দপ্তরের দৌলতে মেরির কর্মকাণ্ডের কথা ছড়িয়ে পড়বে গোটা বিশ্বে। মেরির মেয়ে ক্যারোলিন লিউইসের কথায়, ”উনি একাধারে বিজ্ঞানী, মা, স্ত্রী সব ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, একজন বড় মনের মানুষ ছিলেন। শুধু আফ্রো-আমেরিকান মহিলাদের উন্নতিতেই যে কাজ করেছেন, তা নয়। গোটা আমেরিকার জন্যই তাঁর ভাবনা ছিল। তাঁকে এমন সম্মান দেওয়ায় আমরা খুব খুশি।”
[আরও পড়ুন: ISIS-এর নয়া প্রধানের খোঁজে হন্যে আমেরিকা, দ্বিগুণ হল পুরস্কারের অঙ্ক]
নাসার এই পদক্ষেপে খুশি সকলেই। জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড মার্কিন মুলুকে বর্ণবৈষম্যের যে লজ্জাজনক ছবি উঠে এসেছিল গোটা বিশ্বের সামনে, সেই ছবি কিছুটা হলেও আলোকিত করে তুলতে পারল বিশ্বের সর্বোচ্চ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। জর্জের সঙ্গে হওয়া আতরণের প্রতিবাদে ওঠা স্লোগান Black Lives Matter যেন এখানে অন্য মাত্রা পেল। কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনকে অন্ধকার থেকে আলোর বৃত্তে আনার এক মহতী প্রচেষ্টায় নামল নাসা।