Advertisement
Advertisement

Breaking News

আফগানিস্তান প্রসঙ্গ টেনে আমেরিকাকে ব্ল্যাকমেল পাকিস্তানের

আফগানিস্তানের শান্তি চাওয়া হলে আগে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে এমনটাই আমেরিকাকে জানিয়েছে পাকিস্তান৷

Pakistan takes up balckmailing as weapon to defeat against forces
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 10, 2016 11:59 am
  • Updated:October 10, 2016 11:59 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উরিতে ভারতীয় সেনা ছাউনিতে হামলার জেরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রীতিমতো কোণঠাসা পাকিস্তান হতাশ হয়ে এবার ব্ল্যাকমেলিংয়ের রাস্তা নিল৷

উরির ঘটনার পর কাশ্মীরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে পাকিস্তানের কথায় কান দেয়নি কোনও দেশ৷ কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সমর্থন ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-সহ মুসলিম দেশগুলির কাছেও৷ বারবার ভারতকে কোণঠাসা করতে গিয়ে নিজেদের যুক্তিজালে নিজেরাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছেন পাক কূটনীতিকরা৷

Advertisement

‘সেরিব্রাল’ ও ‘সাইবার’ যুদ্ধে পর্যুদস্ত পাকিস্তান এখন তাই ঘুর দাঁড়ানোর ‘শেষ অস্ত্র’ হিসাবে আমেরিকাকে ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল’ করতে শুরু করছে বলে মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা৷

Advertisement

ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সামরিক ঘনিষ্ঠতা ও সামরিক জোট গঠনের ফল হিসাবে আমেরিকাকে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ৷ পাক কূটনীতিকদের দাবি ছিল, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের ‘মাখামাখি’ এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে রাশিয়া ও চিন ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক জোট বেঁধেছে৷ ফলে উপমহাদেশে নয়া সমীকরণ তৈরি হচ্ছে যেখানে আমেরিকার লাভ নয়, ক্ষতিই হবে৷  ভারতকেও চরম মূল্য চোকাতে হবে৷ এর পিছনে যুক্তি হিসাবে রাশিয়ার সঙ্গে সদ্যসমাপ্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সামরিক মহড়ার উদাহরণ নিয়ে আমেরিকাকে চাপে রাখার চেষ্টা শুরু করেছিল পাক সেনার অনুগত কূটনীতিকরা৷ কিন্তু রাশিয়া ও চিনের সাম্প্রতিক স্পষ্ট বার্তায় পাকিস্তানের সেই ব্ল্যাকমেলিং ধোপে টিকল না৷ কারণ, দুই দেশই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উরির হামলার নিন্দা করে পাকিস্তানকে বলেছে, কাশ্মীর সমস্যায় তারা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে হস্তক্ষেপ করবে না৷ কিন্তু তারা পাকিস্তানকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ধ্বংস করে ফেলতে হবে৷ ‘নন স্টেট অ্যাক্টর’ জঙ্গিদের পাকিস্তানের জমি ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না৷ জঙ্গি হামলায় পাক সেনার মদত বন্ধ করতে হবে৷

ফলে পাকিস্তান ও সবসময়ের বন্ধু চিন যখন মুখ ফিরিয়েছে তখনই প্রমাদ গুনেছে পাক সেনা৷ এবার রাওয়ালপিন্ডির সেনা কর্তাদের নির্দেশে নয়া ফন্দি এঁটেছেন পাক কূটনীতিকরা৷ তাঁরা মরিয়া হয়ে এবার ‘বৃহৎ শক্তি’কে (আমেরিকাকে) নয়া কায়দায় ব্ল্যাকমেল করা শুরু করেছেন বলে মনে করছে অনেকে৷

আফগানিস্তানের শান্তি চাওয়া হলে আগে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে এমনটাই আমেরিকাকে জানিয়েছে পাকিস্তান৷ অর্থাৎ আফগানিস্তানে নাশকতার পিছনে দায়ী তালিবান ও হক্কানি নেটওয়ার্ককে পাকিস্তান তখনই নিয়ন্ত্রণ করবে যদি কাশ্মীরে ‘তৃতীয় পক্ষ’ হিসাবে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করে এবং পাকিস্তানের দাবি মতো ভারতের বিরুদ্ধে ‘পদক্ষেপ’ নেয়৷

পাকিস্তানের এই নয়া দাবি নিয়ে আমেরিকায় ফের অতি সক্রিয় হয়ে লবি করতে শুরু করেছেন পাক সেনেটের সদস্য মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ ও শেজরা মনসব৷ পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লির এই দুই সদস্য পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কাশ্মীর সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসাবে আমেরিকায় গিয়েছেন৷ তাঁরা পাকিস্তানের ডিফেন্স কমিটিরও সদস্য৷

মুশাহিদ মার্কিন মুলুকে গিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক স্টিমসন সেণ্টারকে সাফ জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা আর কাশ্মীর সমস্যার সমাধান আলাদা কোনও বিষয় নয়৷ দুটি ইস্যুই একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে৷ আফগানিস্তানে শান্তি চাইলে, কাশ্মীরে পাকিস্তানের দাবিগুলিকে বৈধতা দিতে হবে (অর্থাৎ কাশ্মীর থেকে ভারতকে সব সেনা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে)৷ তাদের দাবি কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়৷ এটা একটা বিবদমান ও বিতর্কিত বিষয়৷ তারা  চায়, কাশ্মীর-সহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে৷ তবে সবার আগে কাশ্মীর  সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে৷ কিন্তু দিল্লি চায়, শুধু সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করতে৷ স্বাভাবিক ভাবে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করতে নারাজ দিল্লি তাই পাকিস্তানের দাবি, এই কারণেই সব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে৷   কোনও পূর্বশর্ত ছাড়াই পাকিস্তান সব বিষয়ে আলোচনা চায়৷ আর ভারত আগে থেকেই পূর্বশর্ত দিয়ে দিচ্ছে যে, কাশ্মীর নিয়ে কিছুতেই আলোচনা করা যাবে না৷ এভাবে চললে ভারতের জেদের কারণেই সমস্যা আরও জটিল হবে বলে তারা মনে করেন৷ ভারত যাতে আরও নমনীয় হয় সেজন্য আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছে পাকিস্তানের জনতা৷

মুশাহিদ ও শেজরা মনসবের প্রশ্ন, বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ে কথা বলার অধিকার নরেন্দ্র মোদিকে কে দিয়েছে? নওয়াজ শরিফ যদি এখন ভারতের মাওবাদী সমস্যা, খালিস্তান আন্দোলন, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের বিচ্ছিনতাবাদ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন তখন কী হবে?

দুই পাক কূটনীতিকের অতিসক্রিয়তা দমন করতে আমেরিকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভারতীয় লবিও৷ পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদী দেশ’ ঘোষণা করতে ফের জোরালো প্রচার শুরু করছে ভারত৷  সোমবার পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, পাক কূটনীতিকদের এই প্রচার একবোরেই ‘কল্কে’ পায়নি৷ অনেক প্রভাবশালী মার্কিন সেনেটর তাঁদের দু’জনকে দেখা করার সময়ই দেননি৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিটন লবির কোনও নেতা নেত্রীই পাকিস্তানের এই ব্ল্যাকমেলিংকে কার্যত পাত্তাই দিচ্ছেন না৷ তেমনি রুশ ও চিনা কূটনীতিকরাও পাক কূটনীতিকদের কাছ থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছেন৷ ফলে কাশ্মীর ও আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের প্রাপ্তি এখনও শূন্যই৷

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ