সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর প্রথম মাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সেবা সংস্থা ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার (এমএসএফ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, কম করে হলেও অন্তত ৬,৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৩০টি পাঁচ বছরেরও কম বয়সী শিশু। এমএসএফের এক সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ২৫ আগস্ট ভোরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানকালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়। ভয়াবহ এ সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত আট লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যাকে পাঠ্যপুস্তকে লিখে রাখার জাতিগত নিধনের আদর্শরূপ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মায়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেছে।
[জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় আকায়েদ]
প্রসঙ্গত, মায়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আট লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৪৭১ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু নোমান মহাম্মদ জাকের হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মায়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ছয় লক্ষ ৩৯ হাজার ৩২০ জন। আর ২৫ আগস্ট ২০১৭-এর আগে আগত মায়ানমার নাগরিকের সংখ্যা দুই লক্ষ চার হাজার ৬০ জন। সব মিলিয়ে আট লক্ষ ৪৭১ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছেন। এদিকে চলতি বছরে মায়ানমারে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন শুরু হলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২ অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়। অবশ্য রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ-মায়ানমার চুক্তি হলেও খোদ রাষ্ট্রসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলিতে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা আগমন ঘটেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে ৬ লক্ষ ২৬ হাজার রোহিঙ্গা থাকলেও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তা ৬ লক্ষ ৪৬ হাজারে এসে দাঁড়ায়।