সুকুমার সরকার, ঢাকা: একে ওয়ার্টের সংক্রমণ৷ তায় জিনঘটিত গোলমাল৷ রোগীর হাত-পা ফুলে ঠিক গাছের মতো দেখতে হয়ে যাচ্ছে৷ ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে একটি বালিকা৷ অসহ্য যন্ত্রণা৷ ফের বৃক্ষ-মানুষ রোগে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলল বাংলাদেশে৷ আবুল বাজানদারের পর এবার দশ বছরের একটি বালিকার শরীরেও এই রোগের সন্ধান পাওয়া গেল৷ বালিকাটির নাম সাহানা খাতুন৷ কলমামান্দা সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে এই বালিকা৷ মঙ্গলবারই অস্ত্রোপচার করা হল মেয়েটির৷ চিকিৎসক সামন্ত লাল বলেন, দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করা জরুরি নাও হতে পারে এই বালিকার ক্ষেত্রে৷ জন্মের পর থেকে গত ছয় বছরে বৃক্ষ কন্যার গালে, নাকে, থুতনি-সহ একাধিক স্থানে গজিয়েছে শিকড়ের মতো দেখতে কিছু অংশ৷
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক ও চিকিৎসক আবুল কালাম বলেন, এর আগে বছর সাতাশের রিকশাচালক আবুল বাজানদারেরও এই একই রোগ হয়েছিল৷ তিনি সেরে উঠছেন৷ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বিরল এই রোগ হয় এপিডার্মোডিসপ্ল্যাসিয়া ভেরুসিফর্মিসের সংক্রমণে জিনঘটিত বদলের জেরে৷ এই ‘ট্রি ম্যান ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হলে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ৷ কিন্তু সাহানার শরীরে রোগের মাত্রা অনেক কম৷ মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি সারিয়ে ফেলা সম্ভব৷ ছয় সদস্য বিশিষ্ট বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিখরচায় মেয়েটির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে৷ মেয়েটির হাঁটুতে প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে৷ তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ বাবার সঙ্গে মেয়েটি ঢাকা এসে পৌঁছয়৷
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে নেত্রকোনার কলমামান্দা উপজেলার বালুরচর গ্রামের এক কৃষকের কন্যা সাহানা৷ বাবা শাহজাহান মিঁয়ার আর্থিক সংগতি নেই৷ তিনি বলেন, যত দিন যাচ্ছে, তত বেশি শিকড়ের মতো অংশ দেখা দিচ্ছে মেয়েটির শরীরে৷ স্থানীয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ খেয়ে সাহানার কোনও উপকার হয়নি বলেই জানান শাহজাহান৷ আবুলের ক্ষেত্রেও আর্থিক সংগতিও ছিল না চিকিৎসার৷ তখনই চিকিৎসকদের নজরে আসে এই ঘটনাটি৷ কিন্তু সেই অসাধ্যই সাধন করছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা৷ আবুলের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি কো-অর্ডিনেটর সামন্ত লাল সেন বলেছিলেন, তিনি সেরে উঠলে তা বিশ্বের চিকিৎসাশাস্ত্রে এক অন্য দিগন্ত খুলে দেবে৷ বাস্তবেও তাই ঘটে৷ কারণ প্রায় ১৬টি অস্ত্রোপচার করে পাঁচ কিলোগ্রাম ওয়ার্ট সরিয়ে দেওয়া হয় আবুলের হাত থেকে৷ প্রায় এক বছর টানা চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি৷ বিশ্বের মধ্যে আবুলই প্রথম ব্যক্তি যিনি এই বিরল রোগের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ সারা বিশ্বের বিভিন্ন শুভার্থীর থেকে বেশ কিছু অনুদান পেয়েছেন আবুল৷ অনুদানের টাকায় একটা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছাও রয়েছে তাঁর৷ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেই ইন্দোনেশিয়ায় এক ব্যক্তি এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান৷ রোমানিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় আরও দু’জনের সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.