সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন মদতপুষ্ট সরকারকে পরাস্ত করে আফগানিস্তান (Afghanistan) দখল করেছে তালিবান। প্রায় দুই দশক পর ক্ষমতায় ফেরা জেহাদিদের দাপটে সন্ত্রস্ত কাবুলিওয়ালার দেশ। এহেন সংকট কালে তালিবদের জয়রথ থমকে গিয়েছে পঞ্জশির উপত্যকার দোরগোড়ায়। আর বাধা পেয়ে আরও নৃশংস হয়ে উঠেছে জেহাদিরা। এহেন অবস্থায় শিশু ও মহিলাদের নির্বিচারে হত্যা করছে তালিবান (Taliban) জঙ্গিরা বলে খবর।
মঙ্গলবার আফগানিস্তানের প্রাক্তন ইন্টেরিয়র মিনিস্টার মাসুদ আন্দারাবি অভিযোগ করেছেন যে, বাঘলান প্রদেশের আন্দারাব উপত্যকায় নির্বিচারে শিশু ও মহিলাদের হত্যা করছে তালিবান। শুধু তাই নয়, নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের বিদ্রোহী বাহিনীর গুলির মুখে শিশু ও সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। বলে রাখা ভাল, আফগানিস্তানের ৯৮ শতাংশ দখল করলেও প্রবাদপ্রতিম মুজাহিদ কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের গড় পঞ্জশির এখনও স্বাধীন। বর্তমানে ওই উপত্যকা থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন মাসুদের ছেলে বছর বত্রিশের আহমেদ মাসুদ ও আফগানিস্তানের স্বঘোষিত অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ। তাঁদের নেতৃত্বে তালিবদের উপর পালটা হামলা চালাচ্ছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। আন্দারাব-সহ বাঘলান প্রদেশে বেশ কিছু জায়গা দখলও করেছে বিদ্রোহীরা বলে খবর। তবে শেষ পাওয়া খবর মতে হারানো জমি উদ্ধার করে পঞ্জশিরের দোরগোড়ায় জমা হয়েছে হাজার হাজার তালিবান জঙ্গি।
গত সোমবার তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ দাবি করেছিল যে তাদের যোদ্ধারা পঞ্জশির ঘিরে ফেলেছে। শীঘ্রই ওই এলাকার দখল নেবে তারা। তার আগে কাবুলের সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত তালিবান নেতা তথা হক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর হাক্কানি বলে, “আহমেদ মাসুদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র সংবরণে সায় দিয়েছেন।”
আন্দারাবে চলা লড়াই নিয়ে অমরুল্লা সালেহ জানিয়েছেন, গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেছে তালিবান জঙ্গিরা। ওই অঞ্চলে খাবার, পানীয় জল ও ওষুধ কিছুই ঢুকতে দিচ্ছে না তারা। ঘরে ঘরে ঢুকে তল্লাশির নামে জুলুম করছে সন্ত্রাসবাদীরা। জেহাদিদের হাত থেকে বাঁচতে পাহাড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে কয়েক হাজার শিশু ও মহিলা। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, পঞ্জশিরে প্রবেশের পথ সালাং হাইওয়ে বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে তালিবান বিরোধী ‘ন্যাশনাল রেসিস্ট্যানস ফোর্স’-এর অধীনে প্রায় ৯ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। তাদের সংগে যোগ দিচ্ছে আফগান সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে আহমেদ মাসুদের সঙ্গে এবার আলোচনার টেবিলে বসতে চাইছে তালিবরা।
এদিকে, দোহায় শান্তিচুক্তির নামে একপ্রকার ‘শর্তসাপেক্ষে’ জেহাদিদের কবুলের মসনদে বসায় মাস পাঁচেক আগেই সম্মতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। তারপর থেকে ঘরে ও বাইরে সমানে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। এহেন সময়ে কবুলে তালিবান নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র প্রধান। সোমবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালিবানের অন্যতম শীর্ষনেতা আবদুল ঘানি বরাদরের সঙ্গে ‘অত্যন্ত জরুরি’ গোপন বৈঠকে বসেন সিআইএ (CIA) প্রধান উইলিয়াম বার্নস। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিআইএ জানিয়েছে, এজেন্সির চিফ কোথায় যান কী করেন তা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ফৌজ প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বরদর ও বার্নসের মধ্যে। এছাড়াও, গৃহযুদ্ধে জর্জর দেশটি থেকে মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষিত সরিয়ে নেওয়া ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উঠে এসেছে ওই বৈঠকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.