Advertisement
Advertisement
Prince Philip

৯৯ বছরে যুবরাজ হয়েই প্রয়াণ, কেন ‘রাজা’ হওয়া হল না প্রিন্স ফিলিপের?

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামীর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান বাকিংহাম প্যালেস।

Why wasn't Prince Philip called king । Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 11, 2021 5:23 pm
  • Updated:April 14, 2021 3:54 pm

বিশ্বদীপ দে: এক যে ছিল রাজা। যে কোনও রূপকথার গল্পই শুরু হয় এই অমোঘ ও প্রায় অনতিক্রম্য বাক্যটি দিয়ে। ঘোর অতিমারীর সময়ে প্রায় শতবর্ষ ছুঁয়ে ফেলা নবতিপর ব্রিটিশ রাজপুরুষের মৃত্যুর খবরে আবারও যেন ফরফর করে উড়ে গেল ছোটবেলায় পড়া ‘ঠাকুমার ঝুলি’ কিংবা ‘বাংলার উপকথা’র পাতা। আর ছুঁড়ে দিয়ে গেল প্রশ্ন। কেন বাকিংহাম প্যালেসের জ্যান্ত রূপকথার জগতে প্রিন্স ফিলিপ (Prince Philip), ‘ডিউক অব এডিনবরা’ কোনও দিন রাজা হলেন না? রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের (Queen Elizabeth II) স্বামী ফিলিপকে ‘প্রিন্স’ হয়েই কাটিয়ে দিতে হল গোটা জীবনটা?

আসলে ফিলিপের তো কোনও দিন রাজা হওয়ার কথাই নয়! তেমনটাই নিয়ম ব্রিটিশ রাজ পরিবারের। আমাদের চিরচেনা রূপকথার ছাঁচের সঙ্গে যদিও তা মেলে না! তাই খটকা লাগে। রানির স্বামী রাজা। রাজার স্ত্রী রানি। এটাই তো সহজ নিয়ম। রানি এলিজাবেথের বাবা ছিলেন রাজা ষষ্ঠ জর্জ। তাঁর মৃত্যুর পরে ‘রানি’ উপাধি পান কন্যা এলিজাবেথ। ততদিনে তিনি বিবাহিত। তাহলে তখন থেকে ফিলিপকে ‘রাজা’ বলে ডাকা হল না কেন?

Advertisement

Philip

Advertisement

[আরও পড়ুন : ধর্ম খুইয়ে আরতি হল আয়েষা! পাকিস্তানে ফের প্রকাশ্যে হিন্দু নিপীড়নের ছবি]

সেই উত্তরের আগে আরেকটা কথা বলা যাক। ফিলিপের নামের পাশে সেই অর্থে প্রিন্সও বসার কথা নয়! বাকিংহাম প্যালেসের (Buckingham Palace) নিয়মটাই তেমন। একমাত্র রাজসিংহাসনের দাবিদার উত্তরপুরুষই মসনদে বসলে ‘রাজা’ উপাধি পান। আর ফিলিপ তো সেই দলে কোনও দিনই ছিলেন না। ১৯৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি কেবলই ছিলেন ‘ডিউক অব এডিনবরা’। এই সময় প্রাসাদের তরফে এক বিবৃতি পেশ করে ঘোষণা করা হয় এবার থেকে ফিলিপের পদ ‘প্রিন্স’ তথা যুবরাজ সমতুল করা হল।

তবে ওই পর্যন্তই। ‘রাজা’ হওয়ার সুযোগ তিনি পাননি। আগেই বলেছি, নিয়মটাই তেমন। রাজাকে যিনি বিয়ে করবেন, তাঁকে ‘রানি’ বলা হবে। কিন্তু উলটো ক্ষেত্রে নিয়মটা এক নয়। সিংহাসনে আসীন রানির স্বামী হলেও তাঁরা ‘রাজা’ উপাধি পাবেন না। সেটা কেবল মাত্র রাজসিংহাসনে আসীন পুরুষদেরই প্রাপ্য। সেই কারণেই ফিলিপ-এলিজাবেথের বড় ছেলে ‘প্রিন্স অফ ওয়ালেস’ চার্লস যখন সিংহাসনে বসবেন তাঁকে ‘রাজা’ বলা হবে। ওই উপাধির পরবর্তী দুই দাবিদার চার্লসের বড় ছেলে ‘প্রিন্স’ উইলিয়াম ও উইলিয়ামের ছেলে ‘প্রিন্স’ জর্জ।

Philip

[আরও পড়ুন : যুবরাজ ফিলিপের শেষকৃত্যে আসছেন না মেগান, তবে থাকবেন হ্যারি]

তবে এ তো কেবলই নিয়মের বেড়াজাল। মসনদের দাবিদার না হয়েও যেমন উইলিয়ামের ভাই হ্যারি জনপ্রিয়তায় বড়দাকে হারিয়ে দিয়েছেন, ফিলিপও একই ভাবে রানির ‘সহচর’ হিসেবে থেকেও জনপ্রিয়তার আলোকবৃত্তে থেকে গিয়েছেন প্রায় সারা জীবনই। এর পিছনে অন্যতম ফ্যাক্টর ছিল এলিজাবেথের সঙ্গে তাঁর জমজমাট দাম্পত্যের রসায়ন। রানি তাঁর প্রতিটি বক্তৃতার শুরুতেই বলতেন, ”আমার স্বামী ও আমি…”। এই রসায়ন জন্ম দিয়েছে এক মিথের। ৭৩ বছরের দাম্পত্যের পিছনে রয়ে গিয়েছে এক মিষ্টি ‘টিনএজ লাভ স্টোরি’ও। ফিলিপের প্রয়াণ সেই প্রেমকাহিনিকেও যেন নতুন করে ফিরিয়ে আনছে জনমানসে।

অথচ সময়ের হিসেবে সেটা সত্যিই আদ্যিকালের কথা। তখনও সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পতাকা ঝলমল করছে। হয়তো আগের সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ মহিমা আর নেই। তবু…। এহেন এক সময়ে এক ত্রয়োদশী কিশোরীর সঙ্গে আঠেরো বছরের ঝকঝকে কিশোরের চোখে চোখে স্বপ্নের মিনার রচিত হয়ে গেল। একজন রাজকুমারী। অন্যজন রাজপুত্র। হ্য়াঁ, এলিজাবেথ যেমন ছিলেন রাজার কন্যা, একই ভাবে ফিলিপও ছিলেন গ্রিসের রাজপুত্র। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাসিত! একা একা ইউরোপ জুড়ে ভাগ্যান্বেষণে ব্যস্ত। দুই কিশোর-কিশোরীর মধ্যে অচিরেই শুরু হয়ে যায় চিঠি দেওয়া নেওয়া। একসঙ্গে ক্রোকে ও টেনিস খেলতে খেলতেই কখন যেন মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এরপর কমে গেল দেখাসাক্ষাৎ। যুদ্ধের পৃথিবীতে মাঝে মাঝে দেখা হত। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে তখন দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফিলিপ। আর রাজকুমারীর নিজের ঘরের দেওয়ালে ঝুলছে তাঁরই ছবি!

Philip

বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন ‘বাল্য-প্রণয়ে’ মিশে থাকা ‘অভিসম্পাত’-এর কথা। কিন্তু সেই তত্ত্ব খাটেনি এলিজেবেথ-ফিলিপের জীবনে। যদিও বাধা যে একেবারেই আসেনি তা নয়। ‘শত্রু’ জার্মানির অভিজাত মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ফিলিপের পরিবারের। তাই খানিকটা অনীহা ছিল ব্রিটেনের রাজ পরিবারের। তবে শেষ পর্যন্ত সেই বাধা ধোপে টেকেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বছর দুয়েকের মধ্যে ১৯৪৭ সালে হাজার দুয়েক অতিথির সামনে শুরু হয় তাঁদের দাম্পত্য। ৭৩ বছরের যে সম্পর্কে যবনিকা নেমে এল গত শুক্রবার।

Elizabeth and Philip

কোনও রাজদম্পতির এত দীর্ঘ বিবাহিত জীবন কাটানোর ইতিহাস নেই। কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এর পিছনে? চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন রাজ পরিবারের এক প্রাইভেট সেক্রেটারি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ”প্রিন্স ফিলিপ এই পৃথিবীর একমাত্র পুরুষ ছিলেন যিনি রানিকে আরেকজন মানুষ হিসেবেই দেখতেন। তিনিই একমাত্র মানুষ ছিলেন যিনি এটা করতে পারতেন।” কত সহজ কথা! অথচ কত সত্যি কথা। রাজ পরিবারের গ্ল্যামারের খোলস থেকে এলিজাবেথকে বের করে এনে তাঁকে কেবল এক নারী হিসেবে, নিজের সঙ্গিনী হিসেবেই দেখেছেন ফিলিপ। আর রানি? তিনিও প্রতি পদে স্বীকার করেছেন তাঁর সর্বক্ষণের এই সহচরের ঋণ। দাম্পত্যের সুবর্ণজয়ন্তীতে আবেগঘন ভাষণে জানিয়েছিলেন, ”এককথায় বলতে গেলে উনি এতগুলি বছর ধরে আমার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে থেকেছেন।” কেবল তিনি নন, এলিজাবেথের মতে, তাঁর পরিবার ও গোটা দেশ আসলে ফিলিপের কাছে ঋণী। অথচ সেই ঋণের বিনিময়ে তিনি কিছুই দাবি করেননি। এই শ্রদ্ধা, রাজকীয় আড়ম্বরপূর্ণ জীবনের অন্তরালে থাকা পারস্পরিক সম্মানই আসলে তাঁদের একজোট করে রেখেছিল এত বছর ধরে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ