অর্ণব আইচ: স্থানীয়রা ইতিমধ্যেই ছুটির আবেদন করে ফেলেছেন। অন্তত দিন দু’য়েকের ছুটি চাই। ভোট দিয়ে ফিরে আসতেও সময় লাগে বৈকি। কিন্তু বাড়ি যাঁদের দূরে, তাঁদের আর বুথে লাইন দিয়ে ভোট দেওয়া হবে না। তাঁরা অপেক্ষা করছেন পোস্টাল ব্যালটের জন্য। কেউ অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে গেটের কাছে টহল দিচ্ছেন৷ আবার কেউ বা ব্যস্ত অফিসের কাজে। কিন্তু ভোটের দামামা বাজতে শুরু করেছে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ামেও। কার দিকে পাল্লা ভারী? মোদি না রাহুল? না কি তৃতীয় কেউ ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন দিল্লির দিকে? সেই আলোচনা শুরু হয়েছে সেনাকর্মীদের মধ্যেও।
এক কথায় মিনি ভারত। কেউ জম্মু-কাশ্মীরের। আবার কেউ মহারাষ্ট্রের। কেউ বিহার বা উত্তরপ্রদেশের। আবার কেউ তামিলনাড়ুর। রয়েছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু সেনা কর্মীও। সারা দেশ থেকে আসা এই সেনাকর্মীরা কর্তব্যরত ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর ফোর্ট উইলিয়ামে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে থেকেই প্রত্যেকটি ইউনিটের সেনাকর্মী ও আধিকারিকদের কার কোন রাজ্যের কোন অঞ্চলে ভোট রয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। এক সেনাকর্তা জানান, বহু সেনাকর্মী আছেন, যাঁরা এই রাজ্যেরই বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভোটের দিন ছুটির আবেদন করেছেন। ১১ এপ্রিল থেকে যে দিন যে অঞ্চলে ভোট, সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা ছুটি নিয়েই বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে চান। যেহেতু ভোটে সরাসরি সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করে না, তাই ফোর্ট উইলিয়াম থেকে অল্পদিনের জন্য সেই সেনাকর্মীরা ছুটিও নিতে পারেন।
কিন্তু কলকাতা থেকে যাঁদের বাড়ি অনেকটাই দূরে, তাঁদের আর ফেরার উপায় নেই। তাঁরা অপেক্ষা করে রয়েছেন পোস্টাল ব্যালট অথবা ইটিপিবিএস-এর জন্য। জানা গিয়েছে, ভোটের কয়েকদিন আগেই এই ব্যালট চলে আসবে তাঁদের কাছে। তাই ফোর্ট উইলিয়াম সূত্রের খবর, এখন থেকেই সেনাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে ভোট নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। এক সেনা আধিকারিক জানান, কিছুদিন আগে পর্যন্তও তাঁদের মূল আলোচনা ছিল পুলওয়ামায় সিআরপিএফের উপর জঙ্গি হামলা। এখন কলকাতায় কর্মরত সেনাদের একটি বড় অংশ একসময় কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার ছিলেন পুলওয়ামা অথবা তার সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করতে হয়েছে অনেককেই।
পুলওয়ামার ঘটনার পর তাঁদের মধ্যে জ্বলে উঠেছিল প্রতিশোধের আগুন। এর পর এয়ারস্ট্রাইকের পর সেই জ্বালা তাঁদের কিছুটা মিটেছে। এবার কাজের সঙ্গে সঙ্গেই সেনাকর্মীরা ভোট নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছেন। তাঁদের নিজের জায়গায় যে প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন, রাজনৈতিকভাবে তাঁদের কী অবস্থা, তাঁদের মধ্যে কে জিততে পারেন, আগের সাংসদ তাঁদের এলাকায় কী কাজ করেছেন, সেই বিষয়গুলি বারবার উঠে আসছে তাঁদের আলোচনায়। তবে বেশ কিছু সেনাকর্মী ও আধিকারিক আছেন, যাঁরা কোনওদিন এর আগেও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেননি। আবার দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকার ফলে ভোটার তালিকায় অনেকে আর নাম তোলার সময় পাননি বলে জানিয়েছেন সেনা আধিকারিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.