সুকুমার সকার, ঢাকা: প্রতি বছরের মতো এবারও দীপালি উৎসবকে ঘিরে সেজে উঠছে বাংলাদেশের বরিশাল। এই আলোর উৎসবে এখানকার মূল আকর্ষণ মহাশ্মশান। ওই রাতে প্রায় ১ লক্ষ সমাধিতে একসঙ্গে জ্বালানো হবে মোম। শুধু তাইই নয়। নিহত প্রিয়জনদের শ্রদ্ধা জানাতে সমাধিগুলির সামনে সাজিয়ে দেওয়া হবে নানা ফুল, ফল-সহ নানা উপাচার। চলতি বছর তিথি অনুযায়ী, ভূত চতুর্দশীর অর্থাৎ দীপালি উৎসব শনিবার। পরেরদিন, রবিবার কালীপুজো। বরিশাল মহাশ্মশানে ওই দিন কালীপুজোও হবে মহাসমারোহে।
প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত এই বরিশাল মহাশ্মশান বহু ইতিহাস বিজড়িত। এখানে বাংলাদেশ-সহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিত্বের সমাধি রয়েছে। আর দীপালি উৎসবে প্রিয়জনের সমাধিতে দীপ জ্বালানো ও নানা উপাচারে সাজানোর প্রথা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে চলে আসছে।প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোমের আলো জ্বালানো ছাড়াও নিহত মানুষটির প্রিয় খাদ্য-সহ নানা ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় সমাধি। পূর্বপুরুষের স্মৃতিতে চলে প্রার্থনা।
তবে যাঁদের স্বজনরা দীপালি উৎসবে এখানে আসে না, সেসবও আঁধারে থাকে না এই দিন। ওইসব সমাধিতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে দীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। দীপালিতে এই শ্মশানে শ্রদ্ধা জানাতে নেপাল এবং ভারত-সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।দীপালি উৎসব ও মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখোপাধ্যায় জানান, ‘প্রায় দুশো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।’ জানা গিয়েছে, গত সোমবার বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি নির্বিঘ্নে এই উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, দমকল বিভাগ-সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতনদের উপস্থিতিতে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সমাধি ধোয়ামোছার কাজ করা চলছে। চলছে নতুন করে রং ও লেখার কাজ। পুরনো সমাধিগুলো নিজ উদ্যোগে সংস্কারের কাজ করছে মহাশ্মশান রক্ষা সমিতি। বিশেষ করে দীপালি উৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যে স্বজনবিহীন সমাধিগুলো প্রতি বছরের মতো মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে রং করা হয়েছে। এছাড়া মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে সেখানে থাকবে বাহারি আলোকসজ্জা। দীপালি উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছরের মতো এবারও পুলিশ ও র্যাব নজরদারি বাড়িয়েছে। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুরো শ্মশানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। এছাড়া শ্মশান এলাকাজুড়ে সিসিটিভি বসানো হবে।
বরিশালের লাকুটিয়া খাল ঘিরে ৪ একর জমির উপর রয়েছে এই মহাশ্মশান। এখানেই রয়েছে ‘রূপসী বাংলা’র কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দ দাশের সমাধি। মহাশ্মশান কমিটির নেতারা জানান, নতুন-পুরনো মিলিয়ে এখন ওই মহাশ্মশানে সমাধি এক লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে হাজার খানেক সমাধির মঠ এখন বেওয়ারিশ। এদের বংশধররা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন। পুরনো বেওয়ারিশ মঠগুলোকে সংস্কার করে যে ক’টির সন্ধান মিলেছে, তাতে খোদাই করে পরিচয় লেখা হয়েছে। মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘পুরাকীর্তি আর দৃষ্টিনন্দন এই পবিত্র স্থানটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, সব সম্প্রদায়ের লোকজনই এখন সেখানে যায়। এই মহশ্মশানে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, নেত্রী মনোরমা মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালীচন্দ্র ঘোষ-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমাধি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.