সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার শুরুতেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল রোহিঙ্গা (Rohingya) ক্যাম্পে যাতায়াতও। প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা ও চিকিৎসা ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বাকি সব কার্যক্রম। লক্ষ্য ছিল, গাদাগাদি করে বাস করা সাড়ে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের করোনার থাবা থেকে রক্ষা করা।
এর ফলে দীর্ঘ দু’মাসেরও বেশি সময় রোহিঙ্গাদের করোনামুক্ত রাখা গেলেও বৃহস্পতিবার সেখানে হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে বৃহস্পতিবার ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যাতে পজিটিভ আসা ১২ জনের মধ্যে দুজন রোহিঙ্গাও রয়েছে। তারা দুজনেই পুরুষ ও রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা। একজন উখিয়ার লম্বাশিয়া এলাকার একনম্বর পশ্চিম ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাকে আইওএমের দু’নম্বর ক্যাম্পের পশ্চিম ব্লকে আইসোলেশন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অপরজন, কুতুপালং(কপিপি)-এর শরণার্থী। তাকে এমএসএফের ওসিআই আইসোলেশন হাসপাতাল নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রয়াত শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের রিপোর্টেও মিলল এবার করোনার হদিশ ]
আরআরআরসি অফিসের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু মহম্মদ তোহা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের পরিবারের সদস্য ও তাদের সংস্পর্শে আসা সকলকে চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। শুক্রবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে টেস্টের জন্য পাঠানো হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার করোনা শনাক্ত হওয়াদের মাঝে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৯ জন, চকরিয়া উপজেলায় একজন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী দুজন রয়েছেন। এছাড়া পাঁচজন পুরাতন করোনা রোগীর ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বাকি ১৬৯ জনের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। এনিয়ে কক্সবাজার জেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩২ জন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ) ডা. মহম্মদ শাহজাহান নাজির জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেলে ১৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেখানে দুই রোহিঙ্গা-সহ কক্সবাজারের ১৩১ জন, আর বান্দরবানের ৯ জন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় সাতজন রয়েছেন। চকরিয়ার এক রোগী ঢাকায় পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন। করোনা পজিটিভদের মাঝে চকরিয়া উপজেলায় ৩৭ জন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩৫ জন, পেকুয়া উপজেলায় ২০ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১২ জন, উখিয়া উপজেলায় ১৪ জন, টেকনাফ উপজেলায় সাতজন, রামু উপজেলায় চারজন রয়েছেন। অপরদিকে, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর গত ৪৪ দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২ জনের নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন।