Advertisement
Advertisement
2024 Lok Sabha Election

হলুদ রঙে সাজল ‘কাড়া’, মানভূম সংস্কৃতি রক্ষায় অভিনব প্রচারে পুরুলিয়ার কুড়মি প্রার্থী

এভাবে মহিষ নিয়ে প্রচার কি বিধি লঙ্ঘন নয়? আদিবাসী কুড়মি সমাজের বক্তব্য, মানভূম সংস্কৃতি রক্ষার কারণেই ভোট প্রচারে 'কাড়া' এনে আলাদাভাবে বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

2024 Lok Sabha Election: Kurmi candidate from Purulia is campaigning with Ox as tradition

ছবি: সুনীতা সিং।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 15, 2024 11:49 am
  • Updated:April 15, 2024 3:08 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একেবারে অভিনব। ভোটের আবহে তো একেবারেই অন্যরকম। প্রচারে গিয়ে প্রার্থীদের কত কী করতে না দেখা যায়। চা তৈরি থেকে রান্নাবান্না, কিংবা কখনও গান শোনানো। এমনকী মন্দিরে ঢুকে হনুমান চল্লিশা পাঠও করে থাকেন কোনও কোনও প্রার্থী। নানা রঙবাহারি কাজে রকমারি প্রচার। কিন্তু তাই বলে গোয়াল ঘরে থাকা ‘কাড়া’ অর্থাৎ মহিষকে একেবারে ভোটের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া! এর চেয়ে অভিনব প্রচার বোধহয় বিশেষ দেখা যায়নি। বৈশাখী দুপুরে এহেন দৃশ্য দেখা গেল পুরুলিয়ায়। হলুদ রঙের মহিষ নিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে প্রচার করছেন পুরুলিয়ার (Purulia) কুড়মি প্রার্থী তথা আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো।

হ্যাঁ, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Election) পুরুলিয়ায় কুড়মি প্রার্থীর প্রচার চলছে এমনই অভিনবভাবে। যেখানেই ভোট প্রচারে যাচ্ছেন সঙ্গে থাকছে একটি ‘কাড়া’। সেই ‘কাড়া’কে আবার কুড়মিদের পতাকার রঙে মিলিয়ে হলুদ রঙে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। তার গলায় দেওয়া হচ্ছে ফুলের মালা। যেন ভোট প্রচারে ওই ‘কাড়া’ যেন ভিআইপি! আর তাকে সামনে রেখেই চলছে পদযাত্রা।

Advertisement
‘কাড়া’ বা ‘মহিষ’ নিয়ে ভোটের প্রচারে পুরুলিয়ার কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো। ছবি: সুনীতা সিং।

কিন্তু ঠিক কী কারণে এমন প্রচার? আদিবাসী কুড়মি (Kurmi) সমাজের প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “জাতিসত্তার আন্দোলনে যেমন আমাদের এই ভোটের লড়াই। তেমনই হারিয়ে যাওয়া মানভূম সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা ও তার প্রচার, প্রসার। প্রশাসন বলছে, ঐতিহ্যবাহী ‘কাড়া লড়াই’ বন্ধ করতে হবে। আর এই জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সংঘাত চলছে। এই ‘কাড়া লড়াই’ মানভূম সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ। সাবেক মানভূমের বিনোদনের বিষয় এই লড়াই। সেই সংস্কৃতিকে যাতে কোনওভাবেই বন্ধ না করা যায় তার জন্য লড়াই। ভোটপ্রচারে ‘কাড়া’ নিয়ে এসে আমরা সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছি। প্রশাসনকে বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে শেয়ার বাজারে বিরাট ধস, ৮ লক্ষ কোটি লোকসানের মুখে লগ্নিকারীরা!]

পশুদের উপর অপ্রয়োজনীয় ব্যথা বা কষ্টের প্রবণতা রুখতে ১৯৬০ সালে প্রণীত হয় প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন। এই কারণেই এই জেলায় ২০১৬ সালে ‘কাড়া লড়াই’ বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল পুলিশ। একদিকে সরকারি আইন। অন্যদিকে এই ‘কাড়া লড়াই’-কে ঘিরে একের পর এক দুর্ঘটনা। কিন্তু আইন হার মেনে ছিল সাবেক মানভূমের আবেগ, ঐতিহ্যের কাছে। মানভূম সংস্কৃতি রক্ষা সমিতির আন্দোলনের জেরে ওই ‘কাড়া লড়াই’ বন্ধ না হলেও এখন অবশ্য সর্বত্র এই মহিষ লড়াইয়ের অনুমতি দেয় না প্রশাসন। মূলত অনুমতি ছাড়াই ‘কাড়া লড়াই’ হয়ে থাকে। ‘কাড়া লড়াই’ যাতে কোনওভাবেই বন্ধ না হয় তার জন্য আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন পুরুলিয়ার কুড়মি প্রার্থী তথা মানভূম সংস্কৃতি রক্ষা সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। এইভাবে ভোট প্রচারে ‘কাড়া’ ব্যবহারের মধ্যেও কিন্তু সরকারি বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে, মানভূম সংস্কৃতি রক্ষার কারণেই ভোট প্রচারে ‘কাড়া’ এনে আলাদাভাবে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ভোট প্রচারও চোখ টানছে।

[আরও পড়ুন: অভিষেকের পর রাহুল গান্ধী, এবার তল্লাশি কংগ্রেস নেতার কপ্টারে]

রবিবার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের কুড়মি প্রার্থী ও নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয় পুরুলিয়া শহরের বি টি সরকার রোড এলাকায় আদিবাসী কুড়মি সমাজ কার্যালয়ে। বৈঠকে ভোট প্রচার কীভাবে হবে তার পরিকল্পনা যেমন করা হয়। তেমনই মনোনয়নের দিন ঠিক হয়। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় পুরুলিয়া কেন্দ্রে কুড়মি প্রার্থীর মনোনয়নে একাধিক ‘কাড়া’ ও তার রসিক থাকবেন। ‘কাড়া’য় চেপে মনোনয়ন দেবেন।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ