দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দ্বিতীয়বার অপহরণের পর নাবালিকার হাত-পা বেঁধে বাড়ির কাছেই ফেলে রেখে গেল দুষ্কৃতীরা। হুগলির হিন্দমোটরের দেবাইপুকুর ব্যাংক পার্ক এলাকার ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়েকে ফিরে পেলেও চরম আতঙ্কে পরিবার। উত্তরপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
মাস চারেক আগে টিউশন থেকে ফেরার পথে চতুর্থ শ্রেণির এই ছাত্রীকে অপহরণ করেছিল জনা কয়েক দুষ্কৃতী। এলাকারই মাঠের পাশে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। অপহরণকারীদের চোখে ধুলো দিয়ে কোনওক্রমে বাঁধন খুলে সে পালায়। তখনই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই তদন্ত শেষে অভিযুক্তরা ধরা পড়তে না পড়তেই ফের অপহরণ। ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধেবেলা প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছিল মেয়ে। সেখান থেকে ফেরার পথে গাড়ি করে দুষ্কৃতীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। স্প্রে করে মেয়েকে অচৈতন্য করে দেওয়া হয়। এরপর বাড়ি থেকে আট-দশটা বাড়ির পিছনে একটি সেপটিক ট্যাঙ্কের উপর ফেলে রেখে পালায় দুষ্কৃতীরা।

[আরও পড়ুন: বিয়েতে আপত্তি প্রেমিকার পরিবারের, যন্ত্রণা ভুলতে নাবালিকাকে খুনের পর আত্মঘাতী প্রেমিকও]
ওই বাড়ির গৃহকর্ত্রী মেয়েটিকে দেখে তার বাঁধন খুলে বাবাকে খবর দেন। বাবা ছুটে এসে মেয়েকে নিয়ে যান। প্রাথমিক আতঙ্ক কাটিয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটি জানিয়েছে যে দুই মহিলা তার মুখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, এরা কারা? স্থানীয় সূত্রে খবর, ছাত্রীর বাবার আগে বড়সড় ব্যবসা ছিল। তাতে লোকসান হওয়ায় প্রচুর ধারদেনা করে দুধের ব্যবসা করতে নামেন। সেই দেনা তিনি ধীরে ধীরে মেটাচ্ছেন। এমনকী দেনা মেটাতে নিজের বাড়িও প্রোমোটিংয়ে দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। এখন এই পাওনাদাররাই কি টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতে তাঁর মেয়েকে বারবার অপহরণ করছে? যদি তাও হয়, সেক্ষেত্রে কেন মুক্তিপণ দাবি না করে দ্বিতীয়বারও মেয়েটিকে ফেলে রেখে চলে গেল? এসব প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা।
এই নিয়ে পুলিশের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এর আগেরবারও যখন মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন এই ব্যক্তি, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়েছিল। তাতেই সন্দেহ বেড়েছে পুলিশের। তবে ধারদেনার কথা মেনে নিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ, পাওনাদারদের ফাঁকি দিতে নিজের মেয়েকে একাধিকবার অপহরণ করানোর ছক কষেছে বাবা নিজেই। তদন্তকারীরাও এই সংশয় উড়িয়ে দিচ্ছেন না। সবমিলিয়ে, গত ৬ মাসের মধ্যে দেবাইপুরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর দু’বার অপহরণ এবং ফিরে আসার রহস্য বেশ জটিল হচ্ছে।