সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা তোলপাড় ফেলেছিল গোটা রাজ্যে। সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের সুরক্ষার হাল এমন কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। নানাভাবে ঘটনার সঙ্গে শাসকদলকে যুক্ত করে অপপ্রচারের চেষ্টাও কম হয়নি। কিন্তু এই ঘটনার পর পরই ধর্ষণ রুখতে ও নারী সুরক্ষায় রাজ্য সরকার ‘অপরাজিতা’ বিল এনেছে। যা বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর রাজ্যপালকে পাঠানো হয় স্বাক্ষরের জন্য। আপাতত তা রাষ্ট্রপতির কাছে রয়েছে। তাঁর স্বাক্ষর মিললে এরাজ্যে অপরাজিতা আইন অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি দেওয়া সম্ভব। দেশের আর কোন রাজ্যে কোন মুখ্যমন্ত্রী এত তৎপর হয়েছেন? শনিবার আমতলায় ডাক্তারদের সমাবেশে আর জি কর প্রসঙ্গ ‘অপরাজিতা’ বিলকে সামনে রেখে এই প্রশ্ন তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিলের প্রশংসা করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকার কথা বার বার তুলে ধরলেন তিনি। সেইসঙ্গে ধর্ষণের অপরাধে আবারও ফাঁসির পক্ষে সরব হলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
শনিবার অভিষেকের ডাকে আমতলায় ‘ডক্টরস কনভেনশনে’ হাজির ছিলেন প্রায় ১৩০০ চিকিৎসক। সম্প্রতি আর জি কর আবহে যাঁদের আন্দোলন ঘিরে বহু সমালোচনা হয়েছে। এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আর জি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “প্রথম দিন থেকেই আর জি করের ঘটনা নিন্দা করছি। আজও বলছি, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে সমাজে তাদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। কিন্তু যেভাবে তাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক।”
অভিষেক বলেন, “আমি গর্বিত বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করার সৎ সাহস দেখিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্য রাজ্যে যান চারটে মিছিল বার করলেই এনকাউন্টার করে দিচ্ছে। এখানে প্রতিবাদের সৎ সাহস যেমন মানুষ দেখিয়েছে তেমনি রাজ্য সরকারও যেভাবে একজনকেও না আটকে একটা গুলি না চালিয়েও তিনমাস প্রতিবাদ চালানো মানুষের দাবিকে মান্যতা দিয়ে অপরাজিতা বিল পাশ করিয়ে কেন্দ্রকে পাঠিয়ে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করেছে সঙ্গে সঙ্গে আমি এজন্যও গর্বিত। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন, একাধিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ রাজ্য ছাড়া কোথায় হয় এসব? কিন্তু মনে রাখবেন শুধু প্রশাসনিক পদে পরিবর্তন করেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না, এজন্য আইনের প্রয়োজন।”
এ প্রসঙ্গে তিনি গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, “গুজরাটে ১০ বছর পর সব ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদেরও ছাড়া হয়নি। আসলে এসব বন্ধে একমাত্র প্রতিকার আইন। অ্যান্টি রেপ বিল চাই। রাজ্য সরকার অপরাজিতা বিল ইতিমধ্যেই পাশ করেছে। আর কোন রাজ্যে এমনটা হয়েছে? ওই বিল পাশ হলেই ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের সমাধান হবে। সেই বিল দু মাস হয়ে গেল রাষ্ট্রপতির কাছে পড়ে রয়েছে। কোনও উচ্চবাচ্য নেই। অথচ ওই বিল পাশ হলে ৫০ দিনে শাস্তি হবে। অ্যাসিড অ্যাটাকের ক্ষেত্রেও এই বিলের গুরুত্ব রয়েছে। কেন্দ্র সরকার চাইলে অর্ডিন্যান্স জারি করে একদিনেই এই বিল আনতে পারে। শুধু প্রতিবাদ প্রতিরোধ করে সমাজ থেকে এই অপরাধ দূর হবে না। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থাকলে কেন অপরাধীকে খাইয়ে- পরিয়ে পাঁচ-ছ বছর ধরে জেলে রেখে আদালতের পর আদালত ঘুরিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে? ওই অপরাধীর পিছনে কেন সরকার টাকা খরচ করবে? অপরাজিতা বিল পাশ করিয়ে অপরাধী সে যেই হোক তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যেতে হবে। এসব দানবদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.