কৃষ্ণকুমার দাস: রেল দুর্ঘটনা রুখতে দেশের সমস্ত ট্রেনে ‘কবচ’ নামের ‘অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস’ লাগিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তারপরেও বালেশ্বরের মতো দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন ট্রেনযাত্রীর প্রাণহানির ঘটনার উল্লেখ করে ‘কবচ’ নিয়ে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
নবজোয়ার কর্মসূচিতে হুগলির আরামবাগের জনসভায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নাম নিয়েই এদিন অভিষেক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে যে কবচ দেননি তার প্রমাণ বালেশ্বরের দুর্ঘটনা। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত তাঁদের কবচ দিয়েছে বিজেপি। টিভির পর্দায় হাত বাড়িয়ে যে নারদায় টাকা নিয়েছে তাঁকে কবচ দিয়েছে। দেশের গর্ব মহিলা কুস্তিগীরদের যে বিজেপির সাংসদ শ্লীলতাহানি করেছে তাঁকে কবচ দিয়েছে। আগে মানুষ দেখত চোর চুরি করে জেলে যায়, এখন চোর চুরি করে বিজেপিতে যাচ্ছে কবচের জন্য। সারদা-নারদায় যাদের নাম রয়েছে তাঁদের সবাইকে কবচ দিয়ে নিরাপত্তা দিয়েছে বিজেপি। উল্টোদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সমস্ত মানুষকেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ দিয়েছেন। সে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি যাঁকেই ভোট দিন না কেন, সবাইকে মুখ্যমন্ত্রী সুরক্ষা কবচ দিয়েছেন। এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি, ভোটের পর রাজনীতি নয়, সমস্ত মানুষকে সঙ্গে নিয়েই উন্নয়ন। এটাই মানব ধর্ম।”
[আরও পড়ুন: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইকে খুন ও সেপটিক ট্যাঙ্কে দেহ লুকনোর চেষ্টা দাদার!]
হুগলির আরামবাগে বিশাল জনসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে গণজাগরনের ডাক দেন অভিষেক। গেরুয়া শিবিরকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কোনওভাবেই আমরা দিল্লির কাছে মাথা নত করব না। অমিত শাহরা চেষ্টা করছে আমাদের মাথা নত করিয়ে দিল্লির পা ধরার। আর আমরা বলছি, এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে, আমরা শিরদাঁড়া সোজা রেখেই লড়ছি, লড়ব। নবজোয়ার শুরুর পর নানা এজেন্সি লাগিয়ে চেষ্টা হয়েছে কর্মসূচি বাধা দেওয়ার। কিন্তু শুরুর সময় যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল তার চেয়ে দশগুন বেশি উৎসাহ নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি।” সভায় হাজির জনতার উদ্দেশ্যে বলেন,”আপনারা ইভিএমে বোতাম টিপলে বিজেপির সমস্ত নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। নোট বদলের পরিবর্তে লোকসভা ভোটে ইভিএমে বোতাম টিপে প্রধানমন্ত্রী বদল করুন।” একই সঙ্গে এদিন দিল্লিতে গিয়ে বাংলার বকেয়া পাওনা নিয়ে আন্দোলন করার বিষয়ে আরামবাগবাসীর কাছে শপথ নেন অভিষেক। বলেন, “রাজ্যের পাওনা ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার যদি অর্ধেকও কেন্দ্র দিয়ে দেয় তবে বাংলার অবশিষ্ঠ সবার মাথায় ছাদ হয়ে যাবে।”
আরামবাগের জনসভায় এসে মঙ্গলবার খানাকুল, গোঘাট ও কামারপুকুরের রোড-শো-তে পাওয়া একাধিক চিঠিতে জনসমস্যা ও বাসিন্দাদের দুর্ভোগের তথ্য উল্লেখ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কৃষকদের সুবিধা ঘোষণা করেন তিনি বলেন, “আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে দামোদর ও মুন্ডেশ্বরী নদীতে গিয়ে মিশেছে প্রায় ৬২/৬৪টি খাল। খালগুলি পারাপার করতে ৩২/৩৪টি ঘাট আছে। সেখানে এতদিন কৃষিপণ্য নিয়ে পারাপারে অতিরিক্ত টাকা লাগত। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশি চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলে আজ ঘোষণা করছি, কাল থেকে কৃষিজ পণ্য নিয়ে এই খেয়া পারাপারে আর টাকা লাগবে না। শুধুমাত্র ব্যক্তি বা গাড়ির জন্য নির্ধারিত টাকা দিলেই হবে।’’ এরপরই তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘কেউ যদি কৃষি পণ্য নিয়ে খেয়া পার হতে মকুব হওয়া অতিরিক্ত টাকা দাবি করে তবে এক ডাকে অভিষেকে ফোন করুন। পঞ্চায়েত প্রধানকে তক্ষুনি জানান, প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’