সুব্রত বিশ্বাস: টানা সাতদিন যমে মানুষে টানাটানির পর মারা গেলেন লিলুয়া ওয়ার্কশপের সেই ইঞ্জিনিয়ার অমিতাভ সেনগুপ্ত। অভিযোগ, প্রশাসনিক গাফিলতিতে ২৫ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এক সপ্তাহ আগে। পরিকাঠামো না থাকায় রেলর বি আর সিং হাসপাতাল থেকে তাঁকে গার্ডেনরিচ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরে সেখান থেকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। কিন্তু সেখান থেকে ফের বি আর সিং হাসপাতালে ফেরত পাঠানোর পর শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান। রেলকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এই অভিযোগে এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ দেখছে মেনস ইউনিয়ন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন। শনিবার মৃত্যুর খবর চাউড় হতেই লিলুয়া ওয়ার্কশপ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ওই একই ওয়ার্কশপে আরও এক সেকশন ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বিশ্বাস মারা যান। সামাজিক দূরত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগও উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আমিতাভবাবুর আত্মীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর বিআর সিং হাসপাতালে ভরতি হওয়ায় পর সেখান থেকেই তিনি সংক্রমিত হন। ফলে মৃত্যুর জন্য দায়ী রেলের সব রকমের গাফিলতি।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে ছ’মাস বকেয়া মেটায়নি স্বাস্থ্যদপ্তর! নাজেহাল রাজ্যের ওষুধ সরবরাহকারীরা]
মৃত ইঞ্জিনিয়ারের সহকর্মীদের অভিযোগ, কোনওরকম কাগজ-কলম ছাড়াই মৌখিক নির্দেশে লিলুয়া ওয়ার্কশপের সহকারী ওয়ার্কস ম্যানেজার কোচিং ভার্মা গত শনিবার দুই সিনিয়ার সেকশন ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে ডানকুনি যান। সেখানে পুরনো কোচকে ওভারহেড তারের কাজের জন্য ট্রাকসান ভ্যান রূপান্তরের কাজ হচ্ছিল। এই কাজ দেখতে কোচের উপর প্রিন্সিপাল সিনিয়ার সেকশন ইঞ্জিনিয়ার অমিতাভ সেনগুপ্তকে উঠতে বলেন ভার্মা। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না থাকায় ২৫ হাজার ভোল্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আমিতাভবাবু। শরীর ঝলসে কোচের উপর থেকে নিচে পড়েন। বাঁচাতে গিয়ে আহত হন সহকর্মী এসএসই মৃনাল ঘোষদস্তিদার। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে আমিতাভবাবুকে বি আর সিং হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সোমবার পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে গার্ডেনরিচে পাঠানো হয়। বি আর সিং হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে ভেনিস ভেন কেটে ফ্লুইড দিতে হয় আহতকে। তাদের হাসপাতালে প্লাস্টিক সার্জেন বা থাকায় স্থানান্তর করতে হয়েছিল। পরে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর বি সিং হাসপাতালে করানো পরীক্ষার রিপোর্ট পসিটিভর আসায় আমিতাভবাবুকে বি আর সিং হাসপাতালে ফেরত পাঠানো হয়।
ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ তোলে সহকর্মী থেকে ইউনিয়নগুলি। পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কাগজে কলমের নির্দেশ ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ন কাজে নিয়ে যাওয়াটাই চরম গাফিলতি। এরপর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কর্মীকে ওভারহেডের কাজে তোলা ভয়ঙ্কর অপরাধ। তার উপর মৃত্যুর মতো ঘটনা মেনে নেওয়া হয় না।” এদিকে, পূর্ব রেল গাফিলতি ছিল না বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি মৃতদেহ নিতে পুরসভা গাড়ি ভাড়া নিচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। মৃত্যুর পরেও সরকারি এই কোপ অসহনীয় বলে জানিয়েছেন, মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ। আমিতাভবাবুর নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ রেল দেবে বলে জানালেও ক্ষোভ রয়েছে পরিবারে। একমাত্র মেয়ে বেঙ্গালুরুতে পড়ছে। এই অবস্থায় চরম ক্ষতি। এই প্রথম নয়, প্রশাসনিক উদাসীনতায় এমন বহু ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন এমনকি মারাও গিয়েছেন কর্মী। নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়া কাজ করানো রেলের নীতি বলে অভিযোগ তুলেছেন কর্মীরা। বিগত দিনে আসানসোল এমন ঘটনা ঘটেছে। লিলুয়ায় ওয়ার্কশপে রেলের চাকা আনার সময় তা ছিটকে এক গার্ড মারা যান। খড়গপুর ওয়ার্কশপে ওয়াগন থেকে চাকা নামানোর সময় তাতে চাপা পড়ে মারা যান এক শ্রমিক। বারবার এই ঘটনা ঘটলেও শিক্ষা নেয়নি রেল।