জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম – নানা রাজনৈতিক শিবির রয়েছে এলাকায়। রয়েছে রাজনৈতিক বিবাদও। পরস্পরের সঙ্গে দেখে হলে বাক্যালাপ দূর অস্ত, সামান্য সৌজন্য বিনিময়টুকুও হয় না বোধহয়। কিন্তু করোনার থাবা আর লকডাউন সবাইকে এনে ফেলল এক ছাতার তলায়। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে এলেন ত্রাণবণ্টনে। বনগাঁর শক্তিগড় এলাকায় এই রবিবারের অন্য এক ছবি রয়ে গেল। লকডাউনে এলাকার শ্রমজীবী মানুষজনকে একই শিবির থেকে খাদ্যসামগ্রী বিলি করলেন তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম নেতারা। কোনও ঝাণ্ডা নয়, নয় পৃথক কোনও প্রতিশ্রুতির বহর। লক্ষ্য একটাই, লকডাউনে সকলের মুখে যেন অন্ন তুলে দেওয়া সম্ভব হয়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পালটে দিয়েছে অনেক কিছুই। চেনা পৃথিবীর ছবি আচমকাই অচেনা ঠেকছে। তবে তারই মধ্যে কিছু ইতিবাচক ঘটনাও চোখে পড়ছে ইতিউতি। যেমন বনগাঁর শক্তিগড়ের অগ্রগামী স্পোর্টিং ক্লাবের সামনের দৃশ্য ছিল তেমনই আশাব্যঞ্জক। এ যে একেবারে উলটপুরাণ। এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দান করতে পাড়ার ক্লাবে মিলিত হলেন বিভিন্ন দলের নেতা, কর্মীরা। রাজনৈতিক রং ভুলে ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েই সকলের হাতে খাবারদাবার তুলে দিলেন তাঁরা। চাল, ডাল, তেল, নুন সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার পথে এক বৃদ্ধ আশীর্বাদ করে বললেন, ”বাবা, তোমরা এমন ভাবেই থেকো”।
[আরও পড়ুন: কেমো নিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত ক্যানসার রোগী, খড়গপুরের ঘটনায় আতঙ্ক]
লকডাউনের পর থেকে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ত্রাণ বিতরণ নিয়ে দলবাজির অভিযোগও কম নেই। অভিযোগ, পালটা অভিযোগ করে বিজেপি তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অনেক এলাকায়। বনগাঁর শক্তিগড় এলাকায় তার ব্যতিক্রম নয়। বনগাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের পাড়ার ক্লাবে একত্রিত হওয়া নয়া দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। ক্লাবের সভাপতি শান্তিকুমার দাসের কথায়, “আমাদের এলাকায় সব দলেরই নেতা,কর্মী রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষ ভুলে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে ক্লাবের সামনে থেকে এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে সেসব তুলে দিলেন।” এর আগে এই ছবি দেখা গিয়েছিল বাম শাসিত কেরলে। সেখানে রাজনৈতিক আদর্শের সংঘাত ভুলে আরএসএস কর্মীদের সঙ্গে দুস্থদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সিপিএম নেতা, কর্মীরা। এবার তারই প্রতিচ্ছবি যেন বনগাঁয়।