ফাইল ছবি৷
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাম নবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার অভিযোগে বজরং দলের জেলা সহ-সংযোজক গৌরব সিংকে পুলিশ গ্রেপ্তার করায় মঙ্গলবার অচল হল পুরুলিয়া শহর। গত সোমবার দুপুরে তাকে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ আটক করে রাতে গ্রেপ্তার দেখায়। তবে সোমবার দুপুরে তাকে আটক করার পর থেকেই এই শহরের চকবাজার ও মধ্যবাজার এলাকার দোকানপাট বজরং দল বন্ধ করে দিতে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তাদের নেতাকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে পুরুলিয়া সদর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপর সন্ধ্যার মুখে তারা ঘোষনা করে তাদের নেতাকে মুক্তি না দিলে শহর জুড়ে অনির্দিষ্টকালীন বনধ চলবে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে বজরং দলের নেতাকে কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার জামিন নাকচ হয়। পুরুলিয়া জেলা আদালত তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠায়।
এরপরই শহরে বজরং দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে এবং বাইক নিয়ে শহরকে অচল করতে মাঠে নেমে পড়ে বলে অভিযোগ। সকাল সাড়ে ন’টার পর থেকে বজরং দলের দাপাদাপিতে শহরে যে কটা দোকান খুলে ছিল সেগুলির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকজনকে বজরং দলের কর্মীরা রীতিমতো চোঙরাখানি দেখিয়ে দোকান বন্ধ করায় বলে অভিযোগ। ফলে পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে নডিহা এলাকায় লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠিতে গুরুতর জখম হন বজরং দলের মহিলা কর্মী তথা শহরের কর্পূর বাগানের বাসিন্দা উষা ওঝা। তিনি পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া আরও পনেরো-কুড়ি জন জখম হন বলে বজরং দলের দাবি। তবে এদিন বিকালে বজরং দলের পুরুলিয়া সংযোজক সুরজ শর্মা বলেন, “আমরা শহর পুরুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালীন বনধ ডেকেছি। কিন্তু কখনও আমরা জোর করে এই বনধ করব না। পুলিশ আমাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এটা সাধারন মানুষ দেখছেন। আজকেও আমাদের কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ-ই এই শহরে অশান্তি পাকাচ্ছে। তাই আমাদের বনধ। সেইজন্যই আমরা আমাদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য শহরের মানুষকে আহ্বান করছি।”
তবে সপ্তাহের শুরুতেই এই শহর যেভাবে পরপর দু’দিন বনধের চেহারা নিল তাতে সাধারণ মানুষ ভীষণ ক্ষুব্ধ। ২০১১ সালের নভেম্বরের পর সাড়ে ছ’বছর পর জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় বনধ দেখল এই শহর। সেইসময় সিপিআই(মাওবাদী)-র ডাকা বনধে এই জেলায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। তারপর এই ছ’বছরে একাধিক রাজনৈতিক দল বনধ ডাকলেও এই শহর বা জেলায় কোন বনধ হয়নি। ফলে এদিন সকালে ও সোমবার দুপুরের পরে বজরং দল যেভাবে শহরে দোকানপাট বন্ধ করতে বলছিল তা মেনে নেননি সাধারন মানুষজন। বলা যায় বজরং দলের ভয়েই দোকানপাট বন্ধ রাখে। তবে এদিন শহরের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও জেলা জুড়ে বাস চলাচল করেছে। পুরুলিয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জিতেন আশ বলেন, “সকালে একদল যুবক বাস বন্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা প্রতিরোধ করি।” বজরং দল এভাবে এদিন শহর অচল করে দিলেও এদিন শাসকদলের তরফে কোন কর্মসূচি ছিল না। যেখানে এই জেলায় গেরুয়া শিবির হু-হু করে বাড়ছে। এদিন সকাল থেকে জেলা যুব সভাপতি সুশান্ত মাহাতোকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। দলের মধ্যেই নেতা-কর্মীরা বলতে শুরু করেছেন, পুলিশ দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে কাজ হবে না। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য দলকে রাস্তায় নামতে হবে। এদিন বজরং দলের চোখরাঙানিতে শহরের ক্ষুব্ধ মানুষও প্রতিরোধ করার জন্য শাসকদলের অভয় চেয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের কোন ভূমিকা না থাকায় শহরের মানুষ বনধ মেনে নিতে বাধ্য হন। ফলে এই শহর থেকে যেন ক্রমশই শাসকদল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ছবি- সুনীত সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.