রাজা দাস, বালুরঘাট: অভাব কাড়তে পারেনি আশার আলো। ফি বছর বন্যায় ঘর ভাসলেও স্বপ্ন অটুট থেকেছে। সেই আশা আর স্বপ্নই এনে দিল সাফল্য। প্রায় অপরিচিত রবি সরকার এখন দক্ষিণ দিনাজপুরের গর্ব। হ্যাঁ গর্বই তো। চরম অভাবে মধ্যেও বসতির ঘুপচি ঘরে রবি সূর্যের আলো এনে দিয়েছে। সেই আলোতে উদ্বাসিত গোটা জেলা। মাধ্যমিকে ৬৭৩ পেয়ে জেলার মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বালুরঘাট ললিতমোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র।
[পরপর ছ’বার মাধ্যমিকে রাজ্যে সেরা পূর্ব মেদিনীপুর]
বাবা পরাণ সরকার ভাজা বিক্রেতা । মা টুলটুল সরকার বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে সরকার দম্পতির অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বালুরঘাট শহরের আত্রেয়ী কলোনি পাড়ার এক কামড়ার ঘর। কলোনি পাড়ার একপ্রান্তে সরকার পরিবারের ঝুপড়ি। সেখানে ঠাসাঠাসি করে ছ’জনের বাস। ঠেলায় করে বাদাম, বুট ভাজা ও মুড়ি মশলা বিক্রি করে সংসার চালানো বাবার পক্ষে ছেলেক প্রাইভেট টিউটর দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। স্কুলের মাস্টারমশাই ও কলেজ চাত্রী দিদির কাছেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছিল রবি। গত বর্ষায় আত্রেয়ীর জল ভাসিয়ে নিয়ে যায় গোটা বস্তি। কোনওক্রমে বইখাতা বাঁচিয়ে বাঁধে আশ্রয় নেয় গোটা পরিবার। তাইবলে পড়ায় কোনও রকম ছেদ পড়েনি। বন্যা ঘর কাড়লেও মেধা কিন্তু রবির সঙ্গেই ছিল। তাই বাংলায়, ৯২, ইংরেজিতে ৯২, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৭, ভুগোলে ৯৬ পেয়ে সে এখন ওই এলাকা তথা জেলার গর্ব। বুধবার খুশির জোয়ারে ভাসছে আত্রেয়ী কলোনি পাড়ার এক কামরার ঘর।
[মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল কোচবিহারের, প্রথম দশে কতজন জানেন?]
তবে মুখ গুঁজে পড়াশোনা করেই দিন কাটিয়ে দিত না মেধাবী রবি। সময় সুযোগ মতো স্কুলের লাইব্রেরি থেকে গল্পের বই নিয়ে এসেও পড়ত। মাঝে মাঝে টিভিতে ক্রিকেট খেলা। এই তার শখের ঝুলি। এতদিন ছিল কত ভাল ফল হবে, তা নিয়ে চিন্তা। এদিন থেকে শুরু হল উচ্চ শিক্ষার খরচ কোথা থেকে আসবে তার চিন্তা। তবে মেধাবী ছাত্রের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে বালুরঘাট ললিতমোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘রবি বরাবর পড়াশোনায় ভাল। পরিবারের অভাব অনটনের কথা জেনে তাকে সবসময় সাহায্যের চেষ্টা করা হয়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে মাধ্যমিকে। শুধু স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর নয়, রবি জেলার মধ্যে তৃতীয় হয়েছে। তাঁর উচ্চ শিক্ষায় স্কুল সব রকম ভাবে পাশে থাকবে।’
ছবি: রতন দে