Advertisement
Advertisement
North Dinajpur

বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়নে প্রতিবাদ এপারে, কাঁটাতারে রক্তক্ষরণ সীমান্তবাসীর!

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্তে ভিড় বাড়ছে, কী বলছেন কাঁটাতারের দুই পাড়ের মানুষজন?

Bangladesh Unrest: people gather near border on North Dinajpur seeking safe centre in West Bengal
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:November 30, 2024 9:43 pm
  • Updated:November 30, 2024 9:46 pm  

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ওপার অশান্ত। কাঁটাতারের বাধা ভেঙে সীমান্তের বাংলাদেশে ভিড় জমছে ওপারের দিশাহীন মানুষজনদের। ওপারের মানচিত্র পিছনে রেখে শয়ে শয়ে বাসিন্দাদের এপারে আসার আর্তনাদ, পরিচিত ঠিকানা খোঁজার প্রবল আর্তি। গত তিন-চার মাস ধরে উত্তর দিনাজপুর সীমান্তের প্রায় প্রত্যেক জায়গায় বাংলাদেশিদের আনাগোনা দ্রুত হারে বাড়ছে। অথচ রাষ্ট্রের ঠিক করে দেওয়া ভূমির অধিকার আটকে কাঁটাতারের ফাঁকে। ওপারের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এখন সীমান্তে যাতায়াত আরও কড়াকড়ি। ঠিকানা ওপার বাংলায় হলেও মন পড়ে থাকে এপাড়ে। এখন স্রেফ কাঁটাতার ছুঁয়ে কথা বলেন সীমান্তবাসী।

হেমন্তের দুপুরে হেমতাবাদের মাকরহাট সীমান্তে দাঁড়িয়ে কাঁটাতারের ওপারে যতদূর দৃষ্টি যায়, ভারতীয় ভুখণ্ডে বিঘার পর বিঘা আবাদী জমি। সবে সোনালি আমন ঘরে তুলেছেন। এখন ভুট্টা আর সরিষা চাষের ব্যস্ততা তুঙ্গে এপারের কৃষকদের। রোজ ঘড়ির কাঁটার সময় মেনে সীমান্তের লোহার গেট খোলে। সেখান দিয়ে কাঁটাতারের ওপারে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ সেরে ফের এপারে নিজভিটায় ফিরে আসতে হয় সশস্ত্র জওয়ানদের হুকুম মেনে।

Advertisement
হেমতাবাদের মারকহাট এবং মহিষাগাঁও সীমান্ত। নিজস্ব ছবি।

হাত বাড়ালেই অনায়াসে ছুঁয়ে ফেলা যায় ভাতুরিয়া, টেংরি, গোপালপুর ও ঢাকদহ মতো বাংলাদেশের ছোট ছোট জনপদগুলো। কিন্তু ওপারে বিজিবির কড়া নজর। ‘একচুল ফসকালেই লোহার গারদের অন্দরে পৌঁছতে হবে’, স্মরণ করিয়ে দিলেন স্থানীয় বাসিন্দা চৈনগর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপ প্রধান আবদুল রহিম। তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক বছর কার্তিকপুজোর পর এই সীমান্ত মিলন মেলা হত। দুই দেশের মানুষজন কাঁটাতারের এপার ওপার থেকে কুশল বিনিময় করতেন। খাবার কাঁটাতারের উপর দিয়ে ছুড়ে দিতেন। কিন্তু বাংলাদেশের গোলমালের জন্য পুলিশ মাইকে ঘোষণা করে দিয়েছে, সীমান্তে এবার মিলনমেলা হবে না।” কাঁটাতার ঘেঁষে পিচের রাস্তার ধারে বাড়ির দাওয়ায় নতুন ধানের ছড়া ছাড়াতে ছাড়াতে এপাড়ের মহিষাগাঁও সীমান্তের বছর পঁয়ষট্টি বছরের মহম্মদ হারুণ বলছেন, “বাংলাদেশে আর শাসন নেই। প্রতিদিন মারামারি, ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন তো ভয়ে পালিয়ে রাতের বেলায় কাঁটাতার পেরিয়ে এপারে ঢুকতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা খায়।” এখন প্রায় ওপার থেকে লোকজন এপারে ঢোকার খবর পাচ্ছি। কিন্ত এপার খুব শান্তি আছে এখনও।”

হেমতাবাদের মালোন সীমান্তের কাঁটাতার থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার ফাঁকে ওপারের কামাটুলি ছোট্ট জনপদ। ওইসব গ্রামেই দাস, ভৌমিক কিংবা সরকার প্রভৃতি পরিবারের দীর্ঘদিনের বাসভূমি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় রীতিমতো সন্ত্রস্ত ওঁরা। ভয়াবহ আবহে দিন তিনেক আগের এক সকালে ওপারের হরিপুর থানার সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন আতঙ্কিত একদল পরিবার। লক্ষ্য একটাই জন্মভিটার মায়া কুলিকের জলে ভাসিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ। কিন্তু হেমতাবাদের ৬৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের মালোন সীমান্তে পৌঁছনোর আগেই বিএসএফের জওয়ানদের অতি সক্রিয়তায় দিকভ্রষ্ট ওপারবাসীদের পরিকল্পনা অঙ্কুরের আগেই ভেসে যায় সীমান্ত নদীর স্রোতে।

স্থানীয় সীমান্তবাসীদের দাবি, অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়তে হয়েছিল কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানদের। অথচ নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়ে তীব্র নিরাপত্তাহীনতায় কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার পরিবার-পরিজন একচিলতে আশ্রয়ের আশায় চরম অনিশ্চতায় দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন ওপারে। বস্তুত ভারতে পাড়ি দিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওপারের সীমান্ত এলাকায় রাতভর ভিড় জমছে। বিষ্ণুপুর সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াকে বাঁদিকে রেখে পিচের রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল, টোটো ভর্তি প্লাস্টিকের রঙবেরঙে থালা, বাটি, বালতি কিংবা ঝুড়ি সাজিয়ে ক্রেতাদের খোঁজে মাইকে চিৎকার করছে। পাশে কালীমন্দিরের পিছনে এক দম্পতি নতুন ধান ঝাড়তে জোর ব্যস্ত। বছর চল্লিশের রূপনারায়ণ বর্মন বলেন, “কয়েকদিন ধরে কাঁটাতারের উপরে আর বড় নেট লাগানো হয়েছে। ওপারের লোকজনের আনাগোনা শোনা যাচ্ছে। রাতে ভয় লাগে এখন।” আর তাঁদের বছর আটেক সন্তান সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার সামনে ছুঁয়াছুঁয়ি খেলতে যেন মগ্ন। পাশেই হিন্দিভাষী ৭২ নম্বর ব্যাটেলিয়নের বিএসএফ সশস্ত্র জওয়ান। শিশুর কোনও ভয় নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement