টিটুন মল্লিক: বসে আছি পথ চেয়ে, ফাগুনেই গান গেয়ে… এ গানের কলি যেন অক্ষরে অক্ষরে সত্যি উর্মিলা কর্মকারের কাছে। কিন্তু যে ফাগুনের আশায় থেকেছেন সে আর আসে কই! দিন গোনা সার। হাতের শাঁখা, কপালের সিঁদুরের দিকে তাকিয়ে কত বসন্তে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে আঁচলে মুখ ঢেকেছেন। এতদিন কেটে গেল পথ চেয়ে আর কাল গুনে। অবশেষে দেখা হল ফাল্গুনে। ২৮ বছর পর ঘরে ফিরল নিখোঁজ স্বামী। তাও নাতনির অন্নপ্রাশনে।
[ যৌনকর্মী সেজে বৃহন্নলাদের দাপাদাপি, দিঘায় নাজেহাল পর্যটকরা ]
ছেলেদের বিয়ে দিয়ে ঘরে বউমা এনেছেন। নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার। ছোট ছেলের সদ্যোজাত সন্তানের মুখে ভাত দেওয়ার সব প্রস্তুতি যখন সারা, ঠিক তখনই প্রায় আঠাশ বছর আগে আচমকা উধাও হওয়া স্বামীর খোঁজ পেলেন উর্মিলা কর্মকার। আর কয়েকদিন বাদেই নাতনির অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের আগে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা স্বামী বাড়ি ফিরে আসায় আনন্দে আত্মহারা উর্মিলাদেবী। বোনের বাড়ি বাঁকুড়া যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বছর আঠাশ আগে নিখোঁজ হন ছাতনার সরবেড়িয়ার বাসিন্দা সুধীর কর্মকার। এখন বয়স ৫৭ বছর।সরবেড়িয়ার ওই বাসিন্দা বাড়ি ও ভরা সংসার ফেলে উধাও হওয়ার সময় বাড়িতে ফেলে গিয়েছিলেন স্ত্রী আর নাবালক দুই পুত্র সন্তান। বছর আঠাশ পর বাড়ি ফিরে তিনি দেখলেন স্ত্রীর যৌবন ফুরিয়েছে, চুলে পাক ধরেছে। শৈশব পেরিয়ে দুই সন্তান আজ যৌবনে পা দিয়েছে। বড় ছেলে শান্তি কর্মকারের দুই মেয়ে। ছোট ছেলে সন্তোষ কর্মকার। সন্তোষবাবুর বিয়ে হয়েছে বছর খানেক আগে। মাস পাঁচেক আগে তাঁর স্ত্রীও জন্ম দিয়েছেন এক কন্যা সন্তানের। জানা গেল, এই কন্যা সন্তানেরই মুখে ভাতের অনুষ্ঠান হবে আর কয়েক দিন বাদেই। সেই অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছে এই কর্মকার পরিবারের। সুধীরবাবুর স্ত্রী হারানো স্বামীকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
[ পারিবারিক অশান্তির জেরে মদ্যপ বাবাকে কুপিয়ে খুন করল ছেলে ]
তবে বাড়িতে ফেরার পরেও আগের তুলনায় সুধীরবাবু কিছুটা সুস্থ হলেও এখনও বাড়ির ঠিকানা তাঁর মনে নেই। বলতে পারছেন না কারও নাম। উর্মিলা দেবী বলছেন, বহু খোঁজাখুঁজির পরেও তার কোনও হদিশ মেলেনি। সেই সময় পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য নিখোঁজ হওয়ায় পরিবারের অবস্থা ক্রমশ করুণ হয়ে যায়। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী উর্মিলা শোকে পাথর । তিনি বলছেন, নাবালক দুই সন্তনকে নিয়ে হিমশিম খাই। তখন কখনও খাবার জুটতো, কোনও দিন আবার পেটে গামছা বেঁধে দিন কাটে আমাদের। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, বছর আঠাশ আগে বাঁকুড়া শহরে বোনের বাড়িতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেন ধরে প্রথমে মেদিনীপুর, পরে রাজস্থান পৌঁছে যান সুধীরবাবু। পুলিশের দাবি মানসিক অসুস্থতার কারণেই তিনি এ কাণ্ড ঘটিয়ে ছিলেন। রাজস্থানের যোধপুর থেকে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ব্যাক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা চালায়। সেই চিকিৎসায় নিজের জেলা আর নাম বলতেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন তাঁকে বাড়িতে এনে পৌঁছে দিয়েছেন। স্বামী হারানোর শোকে আকুল স্ত্রী উর্মিলা বলছেন সিঁথির সিঁদুর ফিরে পেয়েছি। আর কিছু চাই না আমার। পরিবার ফিরে পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা সুধীরবাবুও। যদিও তাঁর কথাবার্তায় অসংলগ্নতা রয়েছে। তবে সুধীরবাবু বলছেন যদিও আমার মনে নেই আমি কীভাবে রাজস্থান পৌঁছে গেলাম। সেখানে কী কী করলাম। তবে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। কথাগুলো বলতে বলতে তার দুচোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। সকলেই জানেন সে আসলে আনন্দের অশ্রু।
[ হনুমানের মতো দেখতে ছাগলছানা, চতুষ্পদের অদ্ভুত দর্শনে মেলা লোক ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.