টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: নৃশংস! জন্মের দ্বিতীয় দিনেই সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে হাসপাতালের জানলা থেকে ছুঁড়ে ফেলল মা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুকন্যার। ইতিমধ্যেই মা ঝুমা মণ্ডলকে আটক করেছে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। খবর পৌঁছেছে ঝুমাদেবীর শ্বশুরবাড়িতেও। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছেন স্বামী সঞ্জয় মণ্ডল। স্ত্রীর এহেন আচরণে তিনি হতবাক। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সদ্যোজাত। হাসপাতালের এসএনসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছিল তার। সেখানে কর্তব্যরত নার্সদের আনাগোনা ছিল। এত লোকজনের চোখ এড়িয়ে কি করে হাসপাতালে জানলা থেকে ঝুমাদেবী সদ্যোজাতকে ফেললেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঝুমাদেবীর শ্বশুর বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি থানা এলাকার কুকুড়াঝোড় গ্রামে। শনিবার সেখানেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। জন্মের পর সদ্যোজাত শিশু কন্যার নাভি থেকে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় অমর কানন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সেখানে শিশুটির শারীররিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাতেই বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালের এসএনসিইউ ওয়ার্ডে মা ঝুমাদেবীর সঙ্গে বাচ্চাটিকে রাখা হয়েছিল। কর্তব্যরত নার্সরাও নিয়মিত দেখাশোনা করছিলেন। রাতে কি হয়েছে কেউ জানতে পারেনি। সকালে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় শিশুটি বেডে নেই। ঝুমাদেবী ও তাঁর মা টুম্পা নায়েক সেখানে বসে আছেন। নার্সরা বারবার জিজ্ঞাসা করেও কোনও সন্তোষজনক উত্তর পাননি। অনেকক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর ঝুমাদেবী জানান, ওয়ার্ডের জানলাতে বাচ্চাকে রেখে এসেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে আর কোনও জবাব দেননি ঝুমাদেবী। এরপর জানলাতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিশুটি নেই। জানলার বাইরে হাসপাতাল চত্বরের মেঝেতে পড়ে আছে সদ্যোজাত। এসএনসিইউ ওয়ার্ডটি হাসপাতালের দোতলাতে অবস্থিত। দোতলার জানলা থেকে বাচ্চাটিকে ছুঁড়ে ফেলেছে ঝুমাদেবী। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঝুমাদেবী কেন নিজের সন্তানকে জানলা থেকে ছুড়ে ফেললেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, ঝুমাদেবীর আগেও কন্যা সন্তান রয়েছে। ফের শিশু কন্যার জন্মের পরেই শ্বশুর বাড়িতে অসন্তোষের ছায়া। সেকারণেই অসুস্থ বাচ্চাকে জানলা থেকে ছুঁড়ে ফেলেছেন তিনি। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি ঝুমাদেবীর স্বামী সঞ্জয়বাবু। এদিকে এসএনসিইউ-র মত গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে ঢুকে শিশুর মা শিশুকে ছুড়ে ফেলে দিল, কেউ দেখতে পেল না। এটা কি করে ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা কী করছিল তখন ? প্রায় ৫৭ জন নার্স রাতে ডিউটিতে ছিলেন। তারপরেও এই ঘটনায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের প্রিন্সিপাল পার্থপ্রতিম প্রধান বলেছেন, খবরটা শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কি হয়েছে। তবে রবিবারের ছুটির বাজারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.