সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: একসময় সংস্থান ছিল না নিজেরও। ভরসা ছিল একমাত্র ভিক্ষাবৃত্তি। বাগনানের সেই রূপালি সরকারই এখন ১২০ জন ভিক্ষুকের আশ্রয়স্থল। সাংসারিক কলহের জেরে বছর ১৫ আগে বাবা মায়ের সংসার ছেড়েছিলেন রূপালি। হাতে কোনও কাজ ছিল না, ছিল না রোজগারের কোনও উৎস। তাই বাধ্য হয়ে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তিকে। তারপর ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হন, আশ্রয় দেন বাগনান স্টেশনে ঘুরতে থাকা আরও জনা পঞ্চাশেক ভিক্ষুককে। তাদের অন্নের সংস্থান করার পাশাপাশি, তাদের জীবনযাপনের পুরো দায়িত্বই নেন রূপালি। রূপালির এই মহান উদ্যোগকে প্রথম শিরোনামে আনে সংবাদ প্রতিদিনই। আমাদের করা খবরের জেরেই উদ্যোগ নেন বাগনানের তৎকালীন বিডিও ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য। রাজ্য সরকারের ‘সহায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে রূপালি সহ এই ৫০ জন দুঃস্থের পাশে দাঁড়ায় সরকার।
সরকারি সহায়তায় কাজটা কিছুটা সহজ হলেও সমস্যা কম ছিল না। সেসব অতিক্রম করে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বইপত্র তুলে দেওয়া, পথশিশুদের আশ্রয় দেওয়া, ভিক্ষুকদের পোশাক পরিচ্ছদ কিনে দেওয়া এসবই যোগ হয়েছে তাঁর সমাজসেবামূলক কর্মসূচিতে। সেই সঙ্গে ভাইফোঁটা, রাখীবন্ধনের মত সামাজিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন রূপালি। ধীরে ধীরে তাঁর পরিবারে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে, আপাতত সংখ্যাটা ১২০।
রূপালির সংগ্রামকে ইতিমধ্যেই সম্মান জানিয়েছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে রূপালি সরকারকে “অগ্নিকন্যা” সম্মানে ভূষিত করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে ফের সম্মানিত করল দুটি বেসরকারি সংস্থা।মঙ্গলদীপ শিশু কল্যাণ সমিতি এবং খড়দহ নিউএজ সোসাইটি ফর রুরাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড কালচারাল ইনিশিয়েটিভস-এর পক্ষ থেকে রুপালি সরকারের হাতে একটি মানপত্র ও পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মুখ্য আয়োজক পৃথ্বীশরাজ কুন্তি বলেন, ‘রূপালির মত মহীয়সী নারীকে সম্মান জানাতে পেরে তাঁরা অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন রূপালি দেবীর মতো যন্ত্রণাময় জীবন যেন কোনও নারীর না হয়।’ এদিনের অনুষ্ঠান শেষে বাগনান স্টেশন চত্বরে দুটি বৃক্ষরোপণ করেন রূপালি দেবী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.