রঞ্জন মহাপাত্র এবং ধীমান রায়: তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে খেজুরিতে ফিরল নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি৷ তৃণমূলের অভিযোগ, প্রথমে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা৷ তাতে বাধা দিতে গেলে দুপক্ষ সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী৷ উর্দিধারীদের রুখতে মহিলাদের সামনে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা৷ ভাঙচুর করে পুলিশের গাড়ি নয়ানজুলিতে ফেলে দেওয়া হয়৷ এই ঘটনায় তৃণমূল-বিজেপি দুপক্ষের দশজন জখম হয়েছেন৷ তবে কে বা কারা পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করল তা নিয়ে চলছে অভিযোগ-পালটা অভিযোগের পালা৷
[ আরও পড়ুন: সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের গাড়ি ঘিরে বোমাবাজি, আশঙ্কাজনক ৩]
শনিবার সকাল থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে দফায় দফায় উত্তপ্ত পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির বীরবন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্ঠীবাড়ী গ্রাম৷ ঘটনার সূত্রপাত বেশ ভোরের দিকে৷ এদিন তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সদস্য বিশ্বজিৎ বেরার বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়৷ অভিযোগ, এই কুকর্মে নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা সনৎ মাইতি৷ এই খবর চাউর হয়ে যায় নিমেষেই৷ স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করেন৷ বিজেপি কর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পাশাপাশি বিজেপি নেতা সনৎ মাইতিকে গণধোলাই দেয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। আবার দলীয় নেতাকে মারধরের খবর পেতেই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা৷ অভিযোগ, কন্ঠীবাড়িতে থাকা বিজেপি কর্মীরা এলাকায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। কার্যালয়ে থাকা তৃণমূল কর্মীদের মারধরও করা হয়। খেজুরি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়৷ বিজেপি কর্মীরা পুলিশের গাড়ির উপর চড়াও হয়। দুটি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়৷ একটি গাড়ি রাস্তার পাশে থাকা নয়ানজুলিতে ফেলেও দেয় হামলাকারীরা৷
খেজুরির বিধায়ক রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ‘‘সিপিএম বিজেপির ব্যানার হাতে খেজুরিতে সন্ত্রাস তৈরি করে মাটি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে৷’’ যদিও বিজেপি গোটা ঘটনার দায় তৃণমূলের উপর চাপিয়েছে৷ কাঁথির বিজেপি সভাপতি তপন মাইতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ তারাই পুলিশের গাড়ি আটকে রেখে মারধর করেছে৷ এর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই৷’’
[ আরও পড়ুন: তৃণমূল কর্মীর খামার বাড়িতে বিস্ফোরণ, চাঞ্চল্য কাঁকড়তলায়]
এদিকে, নির্বাচনের ফল পরবর্তী অশান্তিতে উত্তপ্ত পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা৷ গত ২৩ মে গুসকরার তকিপুর গ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মী সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন৷ এই ঘটনায় শুক্রবার তকিপুর গ্রাম থেকে চারজন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ধৃতদের মুক্তির দাবিতে গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। বিক্ষোভ হটাতে গেলে প্রথমে বিজেপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা শুরু হয়। তবে তাতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে৷ বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। বিজেপির ৫৫ নম্বর মণ্ডল কমিটির পর্যবেক্ষক সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ শুধু শাসকদলের হয়ে কাজ করছে। আমাদের কর্মীদের হেনস্তা করছে। দলের উচ্চস্তরে জানাব। প্রয়োজনে ফের আন্দোলন করা হবে।”
ছবি: জয়ন্ত দাস