দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: জীবদ্দশায় দেহদানের অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও প্রশাসনিক ব্যর্থতায় দেহ দান করতে পারলেন না মৃতার পরিবার। তাঁদের তাই আক্ষেপ, মায়ের শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করা গেল না। মৃতের নাম সবিতা মজুমদার (৭৮)। বাড়ি মাহেশ নেহরুনগর কলোনি। উদারমনস্কা সবিতাদেবীর একান্ত ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ চিকিৎসা শাস্ত্রের কাজে লাগুক। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তাঁর এই শেষ ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে গেল। তবে, সবিতাদেবীর পরিবার পরিজনের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁর চোখ দু’টি দান করা সম্ভব হয়েছে।
সবিতাদেবী অসুস্থ অবস্থায় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ভরতি ছিলেন। বিজয়া দশমীর দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু তাঁর অন্তিম ইচ্ছা অধরা থেকে যায়। শুক্রবার দুপুর ৩টে ১৫ মিনিটে শ্রমজীবী হাসপাতালে মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা যায় তার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেন। মৃতের মেয়ে পূর্ণা সরকার ও জামাই দিলীপ সরকার জানান, তাঁরা প্রথমে গণদর্পণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ কিন্তু, কোনও সদুত্তর না পেয়ে বহু কষ্টে পিজি হাসপাতালের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তাঁদের বলা হয়, আধ ঘণ্টা বাদে যোগাযোগ করুন। পরে ফের পিজি হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের বলা হয়, আপনারা কতক্ষণের মধ্যে দেহ নিয়ে আসতে পারবেন।
[৭০০ জন বৃদ্ধার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বিজয়া সারলেন বিধায়ক]
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা দু’ঘণ্টা সময় চান। কিন্তু এরপরই হাসপাতাল থেকে তাঁদের জানানো হয়, বিকেল চারটের মধ্যে দেহ নিয়ে আসতে হবে, কারণ চারটের পর আর কাউকে হাসপাতালে পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে পরের দিন সকাল ১০টায় দেহ নিয়ে এলে তাঁরা দেহ নিতে পারবেন। তাই তাদের হাসপাতাল থেকে কলকাতার পিস হেভেনে দেহ রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়। পূর্ণা দেবী ও দিলীপবাবু জানান, ততক্ষণে অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। এরপর চোখ দু’টোও আর কোনও কাজে লাগবে না। তাই তাঁরা শ্রীরামপুর আই ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
[ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে পণ্য খালাসে নজির হলদিয়া বন্দরের]
আই ব্যাংকের সহযোগিতায় সবিতাদেবীর চোখ দু’টি দান করেন। এদিকে রাস্তায় বিজয়া দশমীর ভিড় তখন ক্রমশ জনসমুদ্রের আকার নিতে শুরু করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে দেহ নিয়ে কলকাতার পিস হেভেনে নিয়ে যাওয়া একরকম অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন সবিতা দেবীর দেহ শ্রীরামপুরের চাতরা কালীবাবুর ঘাটে দাহ করেন। মেয়ে পূর্ণাদেবীর আফসোস, মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারলাম না। তবে এটুকু জেনে ভাল লাগছে, মায়ের চোখ দু’টো কোনও অন্ধ মানুষকে আলোর পথ দেখাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.