Advertisement
Advertisement

Breaking News

Burdwan

ভাতারে মা-ছেলে মিলে বৃদ্ধ দম্পতিকে খুনের পর টাকা ও গয়না লুট! জেরায় স্বীকার

মা ও বড় ছেলে মিলে খুন করেছিল ওই দম্পতিকে। ছোট ছেলে আলমারি থেকে টাকা, গয়না খুঁজছিল। চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে জেরায়।

Burdwan: Mother and son looted money and jewelry after murdering an old couple in Bhatar

প্রতীকী ছবি

Published by: Suhrid Das
  • Posted:December 23, 2024 12:09 pm
  • Updated:December 23, 2024 1:09 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: ধৃত মহুয়া সামন্ত এবং তাঁর বড় ছেলে অনিকেত দুজনে মিলে সেদিন খুন করেছিল বৃদ্ধ দম্পতিকে। আর মহুয়ার ছোট ছেলে অরিত্রর দায়িত্ব ছিল সেই সময় আলমারি খুলে মূল্যবান জিনিসপত্র খুঁজে বের করা। এছাড়া বাইরের দিকে নজর রাখতেও অরিত্রকে নির্দেশ দিয়েছিল তার মা। ভাতারে বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনায় ধৃত তিনজনকে জেরা করে এমনই জানতে পেরেছে পুলিশ। জোড়া খুন এবং লু্টপাটের পর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেনি মহুয়ারা। বারান্দার গেটে এবং সদর দরজায় তালা দিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যায় তারা।

গত মঙ্গলবার ভাতার বাজারে রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা অভিজিৎ যশ ও সবিতা ওরফে ছবিরাণী যশের দেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে। নিঃসন্তান দম্পতির বাড়িতে আর কোনও আত্মীয় থাকতেন না। আত্মীয়রা ফোনে খোঁজ নিতেন। বর্ধমান থানার রায়ান গ্রামে শ্বশুরবাড়ি সরিতাদেবীর মেজো বোনের মেয়ে ন্যায়স্বরূপা চৌধুরীর। তিনি কয়েকদিন ফোনে তাঁর মাসি মেসোমশাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে মঙ্গলবার ভাতার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে আসেন। তারপর পুলিশকে জানিয়ে ন্যায়স্বরূপাদেবী ও আরও কয়েকজন আত্মীয় ও প্রতিবেশী মিলে ওই বাড়ির পরপর দুটি তালা ভেঙে ভিতরে গিয়ে দেখতে পান শোওয়ার ঘরে অভিজিতবাবুর দেহ উবু হয়ে পড়ে রয়েছে। পাশে রান্নাঘরে চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছে সরিতাদেবীর দেহ। দেহদুটি দেখার পরেই সন্দেহ হয় তাঁদের খুন করা হয়েছে।

Advertisement

এরপর পুলিশ ওদিন রাতে পুলিশ বর্ধমান শহর থেকে মৃতা সবিতাদেবীর আর এক বোনের মেয়ে মহুয়াকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে মহুয়া স্বীকার করে, সে এবং তাঁর দুই ছেলে মিলেই গত ১৪ ডিসেম্বর সকালের দিকে রবীন্দ্রপল্লীতে এসে ওই দুজনকে খুন করেছে। টাকা ও সোনাদানার লোভেই এই খুন বলে তাঁরা স্বীকারও করে। বর্তমানে ধৃতরা পুলিশ হেপাজতে। পুলিশ ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে মহুয়া ছোটছেলেকে বলেছিল, “তুই আলমারিগুলো খুঁজে দেখ। আর বাইরের দিকে একটু নজর রাখিস।” আর অভিজিতবাবুকে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে ধরেছিল মহুয়া। বড় ছেলে অনিকেত বৃদ্ধের দুই পা ধরেছিল। ৭৭ বছরের বৃদ্ধকে কাবু করতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি দুজনের। ততক্ষণে আওয়াজ পেয়ে রান্নাঘর থেকে সবিতাদেবী বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। দুজনে রান্নাঘরে গিয়ে তাঁকেও শ্বাসরোধ করে মারে। অরিত্র তখন আলমারি থেকে জিনিসপত্র বার করতে ব্যস্ত ছিল।

উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর বর্ধমান থেকে সকালের ট্রেন ধরে এসেছিল মহুয়া ও তার দুই ছেলে। খুন এবং লুটের পর দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। তদন্তে জানা গিয়েছে, ভাতার বাজার থেকে একটি টোটো ধরে বর্ধমান রওনা দিয়েছিল তিনজন। টোটোয় চড়েই বর্ধমান ফেরার ইচ্ছা ছিল মহুয়ার। কিন্তু টোটোচালক এতটা দূরত্ব যেতে চাননি। বেলেণ্ডা পুল পেরিয়ে আমারুন বাসস্ট্যান্ড ঢোকার আগেই বিপরীত দিক থেকে একটি ফাঁকা অটো আসছিল। ওই টোটোচালক তখন হাত তুলে অটোচালককে দাঁড় করান। দুপুরের দিকে খাওয়ার সময়, তাই অটোচালক প্রথমে ভাড়া যেতে রাজি হননি। কিন্তু টোটোচালক তাঁকে অনুরোধ করলে যেতে রাজি হন। অটোচালক বর্ধমানে তিনজনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা ভাড়া চেয়েছিলেন। কিন্তু মহুয়ার দুই ছেলে দরাদরি করে ২৫০ টাকায় রাজি হন।

প্রথমে ওভারব্রিজের কাছে নামার কথা ছিল। শেষে আরও অতিরিক্ত ৫০ টাকা দিয়ে বর্ধমান শহরের বিগ বাজারের সামনে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে মহুয়া। দুপুর প্রায় দেড়টা নাগাদ বর্ধমানে অটো থেকে নেমে যায় তিনজন। খুনের পর যে টোটো এবং অটোয়া চড়ে মহুয়ারা বর্ধমানে ফিরে গিয়েছিল তাদেরও চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

তদন্তকারীদের ধারণা, খুনের পর দম্পতির ঘর থেকে বেশ কিছু নগদ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী লুঠ করে তারা। কিন্তু ঠিক কত টাকা এবং গয়না লুট করে তারা? পুলিশের কাছে সেই কথা স্বীকার করেনি ধৃতরা। আর কিছু মূল্যবান সামগ্রী তারা নিয়েছিল কি? সেই সবও দেখা হচ্ছে। ধৃতদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ রবিবার বর্ধমান শহরে মহুয়া সামন্তদের আবাসনে যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement