সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঝাড়খণ্ডের কুকরু হাটের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে এ রাজ্যের সীমানা লাগোয়া জঙ্গলমহলের সমস্ত হাট-বাজারকে ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে৷ জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার সমস্ত হাট সিসিটিভিতে মুড়ে নজরদারি চালাবে জেলা পুলিশ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি লাগোয়া ঝাড়খন্ডের সরাইকেলা–খরসোঁওয়া কুকরু হাটে পাঁচ সশস্ত্র পুলিশ কর্মীকে গুলিতে ঝাঁজরা করে ইনসাস ও পিস্তল লুঠ করে নেয় মাওবাদীরা। তারপরেই নড়েচড়ে বসেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: ‘দিল্লির বাবারাও খুনিদের বাঁচাতে পারবে না’, খানাকুলে বিজেপিকে তোপ অভিষেকের]
শনিবার বাঘমুন্ডির একেবারে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সুইসা বাজার পুরুলিয়া জেলা পুলিশের দল পরিদর্শন করে জেলার সীমানা লাগোয়া হাটগুলিতে ক্যামেরা বা সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিষয়ে পুলিশ কর্তাদের বৈঠকও হয়। এই সুইসা বাজারেই হাট বসে। এখান থেকেই এই সিসিটিভি বসানোর কাজ শুরু করবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে সীমানা লাগোয়া এলাকায় সিসিটিভি বসানো-সহ ওয়াচ টাওয়ার বসানোর কাজ চলছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ার সমস্ত হাটেই ক্যামেরায় বসিয়ে নজরদারি চালানো হবে। বাঘমুন্ডির সুইসা থেকে আমরা এই কাজ শুরু করছি।’
এদিকে গত শুক্রবার রাত থেকে অযোধ্যা পাহাড়-সহ ঝাড়খণ্ড সীমানায় শুরু হওয়া মাওবাদী দমন অভিযান এখনও চলছে। এদিন এই অভিযানে শামিল হয়েছেন মাও দমনে প্রশিক্ষিত রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী-কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্স। কমদিনের ব্যবধানে বনমহল পুরুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের রায়সিঁদরি পাহাড় লাগোয়া জঙ্গলে ধারাবাহিক আইইডি বিস্ফোরণ এবং তারপর কুকরু হাট জায়গায় মাওবাদী নাশকতায় রীতিমতো কেঁপে গিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ৷ পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায় অস্ত্র নিয়ে টহল দেওয়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করা যেন আতঙ্কের হয়ে গিয়েছে রাজ্য পুলিশের কাছে। মাওদমন অপারেশনে মোবাইল ভ্যান নিয়ে রোজ নজরদারি চালানোর কাজও ধাক্কা খাচ্ছে৷
[আরও পড়ুন: টাকা না দেওয়ায় ট্রাকচালককে বেধড়ক মারধর, দাদপুরে পুড়ল পুলিশের আউটপোস্ট]
এর আগে বাম আমলেও এই এলাকার হাট, বাজারগুলিই ছিল মাওবাদীদের সফট টার্গেট৷ সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে গেরিলা কায়দার হামলা চালিয়ে জঙ্গলমহলে ক্রমশই ত্রাস ছড়িয়েছিল মাওবাদী সংগঠন৷ সীমানা এলাকার হাটগুলিতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের উপস্থিতিও থাকত৷ আর হামলা চালিয়ে বারবার পুলিশের ব্যর্থতা প্রমাণই একটা সময়ে মাওবাদীদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল৷ পরবর্তী সময়ে সেই আতঙ্ক কেটে গেলেও, ফের তা ফিরে আসছে৷ তাই ঝাড়খণ্ড সীমানার হাট, বাজারই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের নজরবন্দি হতে চলেছে৷