৭ চৈত্র  ১৪২৯  বুধবার ২২ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

আস্তাকুঁড় থেকে কানাডায়, ‘বাবা-মা’ খুঁজে পেল ঝাড়গ্রামের পিঁপড়েয় খুবলে খাওয়া খুদে

Published by: Paramita Paul |    Posted: February 6, 2023 2:03 pm|    Updated: February 6, 2023 2:04 pm

Canadian couple adopts baby allegedly suffered from ant bite from Jhargram | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

কিংশুক প্রামানিক: ডাস্টবিনের মধ্যে পিঁপড়ের দল খুবলে খেয়ে নিয়েছিল প্রায়। নজরে যখন আসে তখন মৃতপ্রায়। কিন্তু রাখে হরি মারে কে? সদ্যোজাত বেঁচে গেল ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায়। ঠাঁই মানিকপাড়ার নিবেদিতা গ্রামীণ কর্মমন্দির আশ্রমে। সেই থেকে মাতৃস্নেহ পেয়ে বড় হতে হতে চলে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। অবশেষে ‘মা’, ‘বাবা’র খোঁজ পেল ‘রক্তিমা’(নাম পরিবর্তিত)।

এ মা সেই মা নয়, যিনি জন্ম দেওয়ার পর সন্তানের ডান গাল, ঠোঁটে ক্ষত দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এই বাবা সেই বাবা নয়. যিনি নিজের পাপ ঢাকতে সন্তানকে পরিচয়হীন করতে ফেলে দিয়ে গিয়েছিলেন ডাস্টবিনে। এই মা-বাবা থাকেন সুদূর কানাডায়। জঙ্গলমহলের প্রাচীন গ্রাম মানিকপাড়া থেকে এগারো হাজার কিলোমিটার দূরে। তাঁরা পরম আদরে মানুষ করবেন জঙ্গলমহলের এই কন্যাকে।

[আরও পড়ুন: SSC দুর্নীতি: নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ‘রেট’ ২০ লক্ষ, কাদের কাছে পৌঁছত বিপুল টাকা?]

আদর করে ওকে বললাম, তুমি কোথায় যাবে? ওমা দিব্যি আধো আধো স্বরে বলল, ‘চানাডা’। শুনলাম, একা নয়, সঙ্গে যাবে এক বছর বয়সি আর এক বন্ধুও।

দুধের শিশুদের কাছে কলকাতা আর কানাডার ফারাক কী! এখনও তো বোধটাই তৈরি হয়নি। তবু ওদের ঠিকানা দিতে পেরে চোখ ছলছল কল্পনা দামদের। এই অনাথ আশ্রমের শিশুদের ঘরে উঁকি দিয়ে পেলাম মর্মস্পর্শী এক কাহিনি। এখান থেকে শিশুরা সব বিদেশে চলে যায়। কারণ, একরত্তির ধর্ম, বর্ণ জাত খুঁজতে গিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় রাজ্যের দত্তক প্রার্থীরা। এই মুহূর্তে দত্তক নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আটটি শিশু। এরমধ্যে দু’জন যাচ্ছে কানাডায়, একজন স্পেন ও একজন ইটালিতে। আগেও কর্মমন্দিরের শিশুরা আমেরিকা তথা বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। সব ক’টি শিশুকে আনা হল আমাদের সামনে। আয়াদের তত্ত্বাবধানে কারও হাতে খেলনা, কেউ সাইকেলে। কারও হাতে টেডি বিয়ার। ঘরের ভিতর একসঙ্গে মক্কা, যিশু, গোপাল, গুরু নানক আর বুদ্ধদেবের ছবি। রয়েছেন মাদার টেরিজাও। এক ছাদের নিচে কোরান পুরাণ বাইবেল ত্রিপিটক, সব এলাকার।

শুনেছিলাম দত্তক নেওয়ার হাজারো হ্যাপা। অনেক দম্পতি চেয়েও পায় না। হোমের বাইরে দেওয়ালে লেখা নিয়মকানুন। স্বামী-স্ত্রীর মিলিত বয়স ৯০ হলে তবেই ০-৪ বছর বয়সি বাচ্চা দত্তক নিতে পারেন। এদের আবার কারও বয়স ২৫-এর কম, ৪৫-এর বেশি হবে না। ৪–৮ বছর বয়সি বাচ্চা তাঁরাই পাবেন যে দম্পতির মিলিত বয়স হবে ১০০। এক্ষেত্রেও ২৫-এর কম ও ৫০-এর বেশি হবে কারও বয়স। একইভাবে ১৮ বছর বয়সি পর্যন্ত দত্তক নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সরকারি স্তরে আবেদনের পর এই ধরনের হোম থেকে বাচ্চাদের দেওয়া হয়। দেখে নেওয়া হয় দম্পতির পারিবারিক সঙ্গতির কথাও।

 

[আরও পড়ুন: ‘ব্যোমকেশ’ দেব বাঙালির হাসির খোরাক! অভিনেতা রাহুলের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক]

কেন বাচ্চাদের ঠাঁই হচ্ছে বিদেশে? বাঙালি তথা ভারতীয় কেউ দত্তক নিতে এলে বাচ্চার নাড়িনক্ষত্র খুঁটিয়ে জানতে চায়। কল্পনাদেবী বলছিলেন, “যেহেতু জঙ্গলমহল এলাকা সেই জন্য অধিকাংশ দম্পতি এসে জানতে চায়, বাচ্চা কি আদিবাসীদের? আচ্ছা বলুন তো, দত্তক যখন নিতেই চান, তার পরিচয় জেনে কী হবে। আমরা জানলেও কারও পরিচয় দেব না। বলব না কীভাবে বাচ্চা হোমে এল। এরপরই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা চলে যায়। বাচ্চা পছন্দ হয় না। কিন্তু বিদেশিরা তা করে না। তারা কখনও কখনও ভিডিও কলে দেখে নিয়েই ফাইনাল করে নেয়। জাত ধর্ম বর্ণ, এমনকী লিঙ্গ কোনও কিছুতেই ওদের আগ্রহ নেই। তাই এতগুলো শিশু বিদেশে যাচ্ছে।” আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা হল এই মানিকপাড়ায়। দত্তক নিতেও জাতের নামে বজ্জাতি।

এই আবাসিক হোম শুধু অনাথ শিশুদের নয়। গরিব দুস্থ বালিকাদের পড়াশোনা থেকে গড়ে তোলার কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। দুর্দান্ত আশ্রমিক পরিবেশ। বারো ক্লাস পর্যন্ত মেয়েদের পড়ানো হয়। সরকারি সাহায্য আছে। টাটা স্টিলের মতো সংস্থা এখানে অর্থ দান করে।
মাওবাদীরা যখন জঙ্গলমহলের দখল নিয়েছিল তখন শিরোনামে ছিল মানিকপাড়া। কল্পনাদেবী আজও ভুলতে পারেন না সেই সব দিনের কথা। বাইরে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাইফেল তাক করে মাওবাদীরা বলেছিল, বাচ্চাদের নিয়ে যাবে মিছিলে। সেই সময় যৌথবাহিনীর অপারেশন সামলাতে শিশু ও মহিলাদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করত মাওবাদীরা। সেদিন অবশ্য আবাসিক শিশুদের তীব্র প্রতিবাদে পিছু হঠেছিল বন্দুকবাজরা। যেমন জাত-ধর্মের বিরুদ্ধে তারা এককাট্টা।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে