Advertisement
Advertisement

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই আটকে রইল শাহী সফর, বাংলায় বিজেপির সংগঠন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব

দলীয় কর্মীর মৃত্যুশোকের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বের সৌরভের বাড়িতে ভোজ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

Central leadership of BJP is uncertain about party organization in Bengal | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:May 8, 2022 12:10 pm
  • Updated:May 8, 2022 12:11 pm

নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: বঙ্গ বিজেপির (BJP) গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের গেরোতেই আটকে রইল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র (Amith Shah) সফর। বঙ্গ বিজেপি নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্পূর্ণ দু’-ভাগ। সদ্য সমাপ্ত শাহ-র বঙ্গ সফরে একেবারেই গুরুত্ব পেলেন না বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) থেকে শুরু করে দলীয় সাংসদ লকেট চট্রোপাধ্যায়-সহ কোনও দলীয় সাংসদ।

দলীয় বৈঠকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করলেও বলতে দেওয়া হয়নি দিলীপ, লকেটকে। অথচ বঙ্গ বিজেপির হাল জানতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এই দিলীপ, লকেটকে তলব করেই বিশদ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। আবার শুভেন্দু অধিকারী দিল্লি গিয়ে দেখা করেন শাহ-র সঙ্গেই। সুকান্ত অবশ্য কোনওদিকেই বিশেষ গুরুত্ব পান না। এদিকে শাহ-র বঙ্গ সফরে দিল্লি থেকে তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ ও রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। বাংলার প্রধান পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বা দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা শিবপ্রকাশ গত বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে যে একবারেই বাংলার মুখ দেখেননি, সেই ধারা বজায় রইল শাহর সফরেও।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সমকামী সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে ‘খুন’? বারাকপুরে বান্ধবীর বাড়িতেই উদ্ধার তরুণীর দগ্ধ দেহ]

কেন্দ্রীয় বিজেপির সূত্রের খবর, শিবপ্রকাশ এবং কৈলাসকে বাংলা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। অথচ এই নির্দেশ নাড্ডা দেননি। শাহর ইচ্ছেতেই বাংলা থেকে পুরোপুরিভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। বঙ্গ সফরে এসে শাহ পুরানো বিজেপি নেতাদের পরিবর্তে যেভাবে দলের নতুন নেতা শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছেন এবং এই দুই নেতাকেই যে নাড্ডা সেভাবে কোনওদিনই গুরুত্ব দেননি, তা থেকেই বঙ্গ বিজেপির নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতানৈক্যর ছবি স্পষ্ট।

Advertisement

বাংলাতে যে বিজেপি আর কিছুই অবশিষ্ট নেই নিজের সফরে তা ভালই বুঝে গিয়েছেন শাহও। তিনি ‘শূন্য থেকে শুরু করতে হবে’ বলে পরামর্শ দিয়েছেন। আবার শাহর সামনে মুখ খোলার সুষোগ পাননি বঙ্গ বিজেপির কোনও নেতাই। তাতে শাহর সফরকে কেন্দ্র করে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই তুমুল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শাহ দশ মিনিটের মধ্যে নিজের বক্তব্য রাখা, নির্দেশ, পরামর্শ দেওয়ার কাজটুকু সেরেই চলে গিয়েছেন। বাকি বৈঠকে সামলেছেন সন্তোষই। সেখানেও বেছে বেছে বঙ্গ বিজেপির বর্তমান শাসক শিবিরের পছন্দের লোকদেরই বলতে দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজ্যের কোনও বিজেপি সাংসদকেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। সন্তোষের আচরণেও বিজেপি সাংসদরা অত্যন্ত হতাশ।

[আরও পড়ুন: অসংখ্য হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি আছে তাজমহলে! পরীক্ষার দাবিতে আদালতে বিজেপি নেতা]

সূত্রের খবর, দলের উপর ক্ষিপ্ত অর্জুন সিং নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “বাংলায় বিজেপির কিছু হবে না। এদের ভরসাতে থাকলে চলবে না, আমাকে তো জিততে হবে।” আবার সন্তোষের বৈঠকে যাদের বলতে দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে আগে থেকেই সেটিং করে রাখা হয়েছিল বলেই বৈঠকের মধ্যেই বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে সন্তোষের সামনেই বীরভূমের জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন। শাহ-র সফরে বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের আঁচ স্তিমিত হবে বলে দলের যে সমস্ত নেতারা আশা প্রকাশ করেছিলেন, তারা এখন বলছেন, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের আগুনে শাহ ঘৃতাহুতি দিয়েছেন।

সূত্রের খবর, বৈঠকের মধ্যেই সন্তোষ দলের পুরানো নেতা রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষদের নাম করে ‘তাঁরাও একসময় নতুন ছিলেন’ বলে মন্তব্য করে সুকান্তর রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার প্রশ্ন সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার, এমন মন্তব‌্যও করেছেন, “দলে ট্যালেন্টের প্রয়োজন নেই, ট্যালেন্ট আমরা তৈরি করে নেব। ডিসিপ্লিন থাকলেই হল।” তাতে বঙ্গ বিজেপির একাংশ এবং দলীয় সাংসদরা বেজায় চটেছেন। দলের একাধিক সাংসদ শাহর সফর নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তাঁরা যে হতাশ সেই অভিব্যক্তিই ব্যক্ত করেছেন। একাধিক সাংসদের অভিযোগ, সন্তোষ বাংলা সম্পর্কে কিছুই বোঝেন না, রাজ্যে কী ঘটছে কিছুই জানেন না, শুধু কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘরে বসে প্ল্যানিং করে যাচ্ছেন আর নিজের রাজ্য কর্নাটক মডেলকে বাংলায় চালানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে যখন দলীয় সদস্যের মৃত্যুতে দলের অন্দরে শোকের ছায়া তার মধ্যেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে সুকান্ত, শুভেন্দুদের হাসিমুখে নৈশভোজের ভিডিও প্রকাশে যে দলের মুখ পুড়েছে সেই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। রাজ্যের এক বিজেপি সাংসদের কথায়, “যা হয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জার। আমাদের তো লোকের সামনে মুখ দেখাতে হয়। দলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তারা কী দেখল, অমিত শাহজিকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তিনি সৌরভের বাড়িতে গিয়েছিলেন, এতটা পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু রাজ্যের নেতারা দলীয় সদস্যের খুন হওয়ার দিনে কবজি ডুবিয়ে নৈশাহার করছেন। সেই ছবি দেখে দলের কর্মীদের মনে কী প্রভাব পড়বে সেটা একবার তাঁরা ভাবলেন না। এমন নেতৃত্ব থাকলে দলের বাড়বাড়ন্ত কীভাবে সম্ভব সেই প্রশ্ন তো সবার মনে উঠেই গিয়েছে।”

শাহ-র সফরের পরে আশাহত বেশ কিছু বিজেপি সাংসদ থেকে বিধায়ক, এমনকী দলের নেতারাও বিকল্প ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন বলেই জল্পনা। বিজেপির সঙ্গে থাকলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত যে অনিশ্চিত সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ভাবনা । আগামী দিনে এই আশাহত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে ঘাসফুলের দিকে পা বাড়ালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ