দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: আশঙ্কা সত্যি হল। প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে বাঘের মুখ থেকে কাঁকড়া শিকার এবার বিফলে যেতে বসেছে। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সুন্দরবন থেকে আপাতত কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিল বেজিং। যার জেরে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু সুন্দরবনই নয়, একই সমস্যায় রাজ্যের অন্যান্য জায়গার কাঁকড়া চাষিরাও।
নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ইতিমধ্যেই চিনে মহামারীর আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও। চিনের পর্যটকদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করেছে অধিকাংশ দেশ। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা, জাপান, পাকিস্তান, ইটালি-সহ একাধিক দেশ চিন থেকে সমস্ত আমদানি-রফতানিও বন্ধ করে দিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর সেই করোনা ভাইরাস আতঙ্ক প্রভাব ফেলেছে সুন্দরবনের ব্যবসায়ীদের জীবনেও।
[আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোর ভাসানে ‘হামলা’ বালি মাফিয়াদের, চলল গুলি]
কারণ, সুন্দরবন থেকে যত কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয় তার বেশিরভাগ রপ্তানি করা হয় চিন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াতে বড় বড় সাইজের গ্রেট কাঁকড়া গুলি বিক্রি হলেও ছোট ছোট কাঁকড়া মূলত যেগুলো একশো গ্রামের কম ওজন, সেগুলোই চলে যেত চিনে। এই কাঁকড়াগুলিকে সমুদ্র জলে খাঁচা তৈরি করে সেখানে খাবার দিয়ে বড় করা হতো। এরপর নির্দিষ্ট মাপে আসলে চিন সেগুলি বিদেশের বাজারে রপ্তানি করত। এর ফলে ব্যাপকভাবে মুনাফা লাভ করত চিন। সুন্দরবনের কাঁকড়া বিক্রি করে চিনের এই লক্ষ্মীলাভ হয়ে আসছে বহুদিন ধরে।
কিন্তু এবার দেখা দিয়েছে সমস্যা। সেই সব ছোট কাঁকড়াগুলি আর বিক্রি হচ্ছে না সে দেশের বাজারে। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এই সমস্ত সামগ্রী। ফলে চিন দেশে আপাতত ভারতের কাঁকড়া আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। আর সেই কারণেই কাঁকড়ার বাজার যথেষ্ট মন্দা। প্রতিদিন বড় কাঁকড়ার সঙ্গে প্রায় কয়েক টন ছোট কাঁকড়া রপ্তানি হতো বিশেষ বিমানে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেইসব ছোট কাঁকড়াগুলো সেখান থেকে ফেরত আসছে। তা অন্যত্র বিক্রি করা আর সম্ভব হচ্ছে না।
ইতিমধ্যেই যে সমস্ত কাঁকড়াগুলি সুন্দরবনের বিভিন্ন বাজারে দেড়শো থেকে দু’শো টাকা কেজি বিক্রি হতো, সেগুলোর দাম সত্তর থেকে আশি টাকায় নেমে এসেছে। সুন্দরবন থেকেও ধরা কাঁকড়াগুলি এখন আর বিদেশের বাজারে নয় স্থানীয় বাজারগুলিতে তা সরবরাহ হচ্ছে। তবে বড় গ্রেডের কাঁকড়ার দাম প্রায় একই আছে। কারণ, এই কাঁকড়াগুলি কিনে নেয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলো। ফলে বড় কাঁকড়ার বাণিজ্যে কোনও প্রভাব না পড়লেও করোনা ভাইরাস যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে ছোট কাঁকড়ার ব্যবসায়। জানালেন কাঁকড়া ব্যবসায়ী অজয় কয়াল ।
[আরও পড়ুন: ‘ঝাঁটা মেরে গ্রাম থেকে বের করে দেব’, বিজেপি কর্মীদের কড়া হুঁশিয়ারি তৃণমূল নেতার]
চিনা নববর্ষের সময়ে ব্যাপকভাবে কাঁকড়ার বিভিন্ন পদ পরিবেশন করা হয়। ফলে শীতের এই সময়ে সুন্দরবনের কাঁকড়ার বাজার যথেষ্ট ভাল থাকে বেজিং, সাংহাই-সহ অন্যান্য শহরগুলিতে। যথেষ্ট সুস্বাদু পদ বানানো হয়ে থাকে চাইনিজ রেস্তরাঁগুলিতে। যার জন্য চিনে ব্যাপক চাহিদা হয়। কিন্তু বর্তমানে চিনে কোন কাঁকড়ার চাহিদাই নেই।কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, চিনে এখন নববর্ষ। এই সময় সারা বছরের দেনা পাওনা মিটিয়ে দেয় সে দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ২৩ জানুয়ারি থেকে কাঁকড়া বন্ধ হয় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে সমস্ত ব্যবসায়ী।কারণ একদিকে যেমন সে দেশের বাজারে ভারতের কাঁকড়া ঢুকতে পারছে না তেমনি পুরনো দেনাপাওনা পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাই করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে এখন সুন্দরবনের কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা।