ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: খুনের পর ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা করে দু’টি দুই জায়গায় ফেলে দেওয়া। সাম্প্রতিক অতীতে এত নৃশংস ঘটনা চোখে পড়েনি। হাসনাবাদ লোকালের কাটামুন্ডু কাণ্ডে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে রহস্যের জট। কে বা কারা, কেন এই খুন করেছে, সে প্রশ্নের উত্তর এই জটেই আটকে। তবে তদন্তে নেমে আপাতত একটি ‘ক্লু’ পেয়েছে পুলিশ। তা হল হাড়হিম করা এই হত্যাকাণ্ডে যোগ রয়েছে কোনও ফলওয়ালার। পুলিশ জানতে পেরেছে, বুধবার ডাউন হাসনাবাদ লোকালের ভেন্ডরের যে ঝুড়িতে কাঁকিনাড়ার যুবক লালা চৌধুরির কাটা মুন্ডু উদ্ধার হয়েছিল, সেটি এক ফলওয়ালার। তাই লালার সঙ্গে কোন কোন ফলওয়ালার যোগাযোগ ছিল তারই এখন সন্ধান চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
বুধবার সকালে ডাউন হাসনাবাদ-প্রিন্সেপঘাট লোকালের ভেন্ডারের ভিতর কাগজে ঠাসা একটি ঝুড়ির ঢাকনা সরে যেতেই বেরিয়ে আসে লালার কাটা মুন্ডটি। বারাসতের জিআরপি সেই ঝুড়িটি উদ্ধার করে। অন্যদিকে কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে ২৯ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় লাইনপাড়ের জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় লালার দেহ। লালার বাবা বিরজু চৌধুরি গিয়ে দেহ ও মুন্ডু শনাক্ত করেন। পুলিশ জানতে পারে পেশায় ফুচকা বিক্রিতা ছিলেন লালা। রোজ নৈহাটি স্টেশনে ফুচকা বিক্রি করে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরতেন। মঙ্গলবারও প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু আর ফেরেননি। পুলিশের ধারণা, বাড়ি ফেরার পথেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। বারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি জোন ১ অজয় ঠাকুর জানিয়েছেন, “যেখানে মুন্ডু আর দেহ পাওয়া গিয়েছে দু’টোর কোনও জায়গাতেই খুন করা হয়নি। কারণ গলা কাটা হলে সেখানে যে পরিমাণ রক্ত পড়ে থাকার কথা তা ছিল না।” অন্যদিকে জিআরপি তদন্তে নেমে সব সূত্র খতিয়ে দেখে মনে করছে, খুনের পর দেহটি কাঁকিনাড়ায় ফেলে গভীর রাতে মুন্ডুটি নিয়ে যাওয়া হয় শিয়ালদহে। সেখান থেকে ট্রেনে করে হাসনাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। যে ঝুড়িতে মুন্ডুটি ছিল, সেটিও খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ঝুড়িটি কোনও ফলওয়ালার। খুব সম্ভবত আম বা কাঠাল বিক্রেতার। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই ধরনের ঝুড়িগলিকে কাছা উঁচু ঝুড়ি বলা হয়। এগুলি সাধারণত ফলওয়ালারাই ব্যবহার করেন।
[আরও পড়ুন: আলাদা জায়গায় মিলল ধড়-মুন্ডু, লোকাল ট্রেনে দেহাংশ উদ্ধারে ভাটপাড়া যোগ]
এবিষয়ে ডিসি জোন ১ অজয় ঠাকুর বলেন, “ঝুড়িটি ফলওয়ালার সেটা আমরা নিশ্চিত। তাই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনায় কোনও ফলওয়ালা জড়িত আছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ঝুড়িতে প্রচুর পরিমাণ কাগজ ছিল। ফল বিক্রেতাদের ঝুড়িতেই এত পরিমাণ খবরের কাগজ থাকে। তার সঙ্গে একটি গামছাও পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ গামছাটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.