সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সন্তানই নেই! অথচ স্বামীর বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ এনেছিলেন স্ত্রী। একই সঙ্গে যোগ করা হয়েছিল পণের জন্য অত্যাচারের কথাও। গার্হস্থ্য হিংসার দু’টি মামলাই ছিল বেশ গুরুতর। ওই আজব মামলায় পড়ে রীতিমতো হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল নৈহাটির বাসিন্দা তমোঘ্ন দাসকে। ন্যায় পেতে পালটা সওয়াল করেছিলেন তিনিও। তবে শেষমেশ আসল সত্য সামনে এসেছে। হলফনামা দিয়ে আদালতে মিথ্যা তথ্য পেশের কারণে (পারজারি) ওই বধূকে অভিযুক্ত করেছেন বারাকপুর আদালতের বিচারক প্রতীকরঞ্জন বসু। একই সঙ্গে ওই মহিলার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
[সন্তানই নেই, অথচ স্বামীর বিরুদ্ধে তাকেই মারধরের অভিযোগ আনলেন স্ত্রী]
২০১৪ সালে তমোঘ্নর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার দু’টি মামলা করেন তাঁর স্ত্রী। সেখানে বলা হয়, সন্তানকে মারধর করেছেন তিনি। এছাড়াও পণের জন্য তাঁর উপর নাকি অত্যাচারও করেছেন তমোঘ্ন। তবে পালটা সওয়ালে আদালতে স্বামী জানান, তাঁদের কোনও সন্তানই নেই। এছাড়াও ভালবেসে বিয়ে করায় পণের কোনও প্রশ্নও ছিল না। স্ত্রীর কাছে সন্তানের জন্ম শংসাপত্র আদালতে জমা দেওয়ার দাবি জানান অভিযুক্তর আইনজীবী রঞ্জন দাস ও অভিষেক দত্ত। কিন্তু দু’বছর মামলা চলার পরও সেই শংসাপত্র জমা দিতে পারেননি স্ত্রী। তারপরই মামলাটি খারিজ করে দেয় বারাকপুর মহকুমা আদালত। তারপরই মামলাটি সবিস্তারে জানার জন্য আরটিআই করেন তমোঘ্ন দাস। সেই সব নথি এবং পুলিশি রিপোর্ট ঘেঁটে সন্তুষ্ট হয়েই গত সপ্তাহে আদালত পিয়ালি বণিক নামে ওই বধূর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯১, ১৯৩, ১৯৬, ১৯৯ ও ২০০ ধারায় মামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। প্রয়োজনে বিচারক নিজেও সাক্ষ্য দিতে পারেন। দোষ প্রমাণিত হলে মিলতে পারে সাত বছরের কারাদণ্ড।
আইনের এহেন গেরোয় পড়ে বিচার ব্যাবস্থায় পুরুষদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ এনেছেন তিনি। তিনি বলেন, “নারী সুরক্ষা মানে পুরুষকে হেনস্তা করা নয়। যুগ পালটেছে। গার্হস্থ্য হিংসা শিকার পুরুষরাও। তবে তাদের বলার জায়গা নেই। স্ত্রী অভিযোগ আনা মাত্রই তারা সমাজের চোখে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যান। এমনকী স্ত্রী মিথ্যে তথ্য দিয়ে অভিযোগ করলে পুরুষদের সুরক্ষার কোনও আইন নেই। এর ফলেই বিবাহিত পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।” উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সদ্য আইন তৈরি হয়েছে, গার্হস্থ্য হিংসার মামলায় পণ সংক্রান্ত মিথ্যে তথ্য দিলে পাঁচ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকার জরিমানা পর্যন হতে পারে। পাকিস্তানেও এই মর্মে আইন রয়েছে। ব্যাতিক্রম শুধু ভারত। ইতিমধ্যে মিথ্যে তথ্য দেওয়ায় কেন স্ত্রীর সাজা হবে না, তা জানতে চেয়ে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস’-এ চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন তমোঘ্ন। কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগ সেই চিঠি কলকাতা হাই কোর্টে পাঠিয়ে দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
২০১০ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের পয়োধি বণিকের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় নৈহাটির বাসিন্দা তমোঘ্ন দাসের। বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে নানা বিষয়ে সমস্যা শুরু হয় তাঁর স্ত্রীর। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে দমদমের দুর্গানগরে ফ্ল্যাট কেনেন তমোঘ্ন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ। তারপর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা হয়। পরে খোরপোশ দাবি করে পৃথক মামলা করে তরুণীর পরিবার। সেখানেই সন্তানকে মারধর ও পণ নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। তমোঘ্ন দাস জানান, ‘সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁকে এই বিষয়ে অনেকটাই সাহায্য করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.