নন্দন দত্ত, বীরভূম: ক্রাইমের ‘লাভ জিহাদ’। বীরভূমের লাল মাটিতে অ্যান্টি রোমিওরা যেন বেপরোয়া। প্রেম নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তাদের লক্ষ্য নিভৃতে থাকা যুগল। প্রতি সন্ধায় নিষ্পাপ ছেলেমেয়েগুলি টার্গেট হচ্ছে। দল বেঁধে এইসব ভালবাসার লোকেদের কাছে হাজির হয় অ্যান্টি রোমিওরা। তারপর তাদের থেকে জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। মোবাইল, টাকা-পয়সা যা মেলে। এমনই কাণ্ড শুরু হয়েছে জেলার বিভিন্ন অংশে। যার জেরে সন্ধ্যা হলে প্রেমিক প্রেমিকারা আর নিভৃতে দেখা করতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছেন। পুলিশ জেনেও কিছু করতে পারছে না। কারণ বেশিরভাগ প্রেমিক যুগল বাড়িতে জানাজানির ভয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছে। পুলিশের চিন্তা অন্যত্র। এখনই পদক্ষেপ না নিলে জল আরও গড়াতে পারে। এইসব ছোট ছোট ঘটনায় সাহস জোগাচ্ছে আগামী দিনের অপরাধীদের।
[এক ফোনেই বাড়িতে রান্নার গ্যাস, প্রতিবার ঠকে যাচ্ছেন না তো?]
গুরুদেবের জেলায় ‘অ্যান্টি রোমিও’
এ জেলা প্রেমের জেলা। এখানকার মাটি চণ্ডীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। অসম প্রেমে জোয়ার এসেছে হাঁসুলির বাঁকে। জয়দেব কেন্দুলির বুকে যেখানে ভক্তের ভালবাসায় ভগবান উজান বয়েছেন। তারাশঙ্করের সেই বেদেনির জেলায় এখন প্রেমে জুজু। জেলায় নিভৃতে মন দেওয়া-নেওয়ায় হাজারো বাধা। কেরলে লাভ জিহাদ শুরু হয়েছিল। সেই তরঙ্গ যেন উত্তরপ্রদেশে অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড হিসাবে দেখা দিয়েছে। যেখানে প্রেমিক প্রেমিকাদের একান্তে নিভৃতে দেখলেই তাদের সামাজিক জ্ঞান দিতে এগিয়ে আসত একদল যুবক। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের ২৫০ একরের একটি পার্কে যেখানে দম্পতিদেরও টার্গেট করা হয়েছিল গত মার্চে। ঠিক সেভাবেই লাল মাটির দেশে এখন প্রেমিক-প্রেমিকারা টার্গেট নেশাড়ু যুবকদের। তাদের দৌরাত্ম্য মূলত জাতীয় সড়কের ধারে। পার্কের বাইরে দীনান্তে উদয় হচ্ছে এই সব স্বঘোষিত অ্যান্টি রোমিওর দল। যারা প্রথমে চমকায়। পরে দুই ভালবাসার মানুষের থেকে যাবতীয় জিনিস লুঠ করে নিচ্ছে এই সব অ্যান্টি রোমিওর দল।
গোপন কথাটি
এই সব অ্যান্টি রোমিও, অ্যান্টি সোশ্যালদের জ্বালায় আর বোধহয় তা গোপনে হবে না। কোনওদিনই প্রেম সামাজিক ছিল না। এখনও নেই। রজকীনির প্রেমে পাগল বামুন ঠাকুরকে নিয়ে চরম হেনস্তা হতে হয়েছে নানুরে। আবার লাভপুরের সুবলপুরে পরধর্মে প্রেমের জেরে খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে সারারাত ধরে গণধর্ষিতা হয়েছে আদিবাসী মেয়ে। মল্লারপুরে কিশোরীকে উলঙ্গ করে ঘুরিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। কিন্তু প্রেমকে ঘিরে ক্রাইম এতদিন নজরে আসেনি। সিউড়ি রামপুরহাট বা দুবরাজপুর। এমনই বেশ কিছু উপদ্রপের খবর কানে এসেছে পুলিশের। সাহস করে দু-একজন পুলিশে রিপোর্ট করেছে। ধরাও পড়েছে কিছু গ্যাং। কিন্তু মামলা করা নিয়ে বেশ ফাঁপরে পড়েছে পুলিশ।
[চলন্ত ট্রেনে প্রসব, রামপুরহাটে ১৫ মিনিট দাঁড়াল এক্সপ্রেস]
নির্জনতাই নিশানা
সিউড়িতে সাঁইথিয়া ক্যানাল পাড় কিংবা বাইপাসের রাস্তার ধার, লম্বোদরপুরে পাইপ লাইনের রাস্তা, কড়িধ্যা গ্রামের কাঁচা রাস্তা, আনন্দপুরের নিচের রাস্তা, তিলপাড়া যাওয়ার কাঁচা রাস্তা, দুবরাজপুরে রেলস্টেশনের পারে পণ্ডিতপুরের রাস্তা, বক্রেশ্বরের নীল নির্জন, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ। রামপুরহাটে রেলস্টেশনের পাশে ফটক দুয়ার, পাকুড়িয়া সানঘাটা পাড়া, তারাপীঠ রোড। যেখানে সন্ধ্যে হলে টিউশন পড়তে যাওয়া একটা স্কুটি বা লেডিস সাইকেল এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরেই বাইকে চেপে আসে প্রেমিক। একান্তে প্রেমালাপে কিছু সময় কাটে। তবে সাঁইথিয়া বাইপাসে এমনই কিছু যুগলের কাছে ছিনতাই করেছে নেশারুর দল। কুকুড্ডি গ্রামের সেই দলকে ধরেওছে সিউড়ি থানার পুলিশ। তিলপাড়া ব্যারেজের কাঁচা মাটির রাস্তায় সূর্য ডুবলে পথে এলাকার ভূগোল যেন বদলে যায়। রামপুরহাটের ফটক দুয়ারে পরের পর ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কোনও অভিযোগ দায়ের হচ্ছে না কোথাও।
তারপর…
অগ্রহায়ণ যখন হিম ঘিরেছে বীরভূমে তখন বিষাদ ছড়িয়েছে যুগলের মনে। সিউড়ির ভগৎ সিং পার্ক বা রামপুরহাটের গান্ধী পার্কে কপোত-কপোতিদের আনাগোনো কমেছে। কেউ কেউ সাহস করে গেলেও নেশারু থেকে ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়ছে। অলিখিতভাবে ওই এলাকার যুগলকে অন্ধকারে সময় কাটাতে দেখলে তাদের তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু যৌবন যে এত কড়াকড়ি মানে না। যেমন বাগ মানে না নেশারুদের নেশা করার সময়। তাই বেপরোয়া নেশারুরা তৃপ্তির জন্য নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে গড়ে তুলেছে অ্যান্টি রোমিওর দল। যাদের কাজই হচ্ছে ছিনিয়ে নিয়ে নেশা করা। অতএব রবি ঠাকুরের জেলায় প্রেম থাকলেও সে এখন বন্দি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.