BREAKING NEWS

১৭ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  বৃহস্পতিবার ১ জুন ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

করোনায় বদলেছে শ্রাদ্ধের রীতিও, দেড় মাস পর পারলৌকিক অনুষ্ঠান!

Published by: Biswadip Dey |    Posted: June 20, 2021 12:39 pm|    Updated: June 20, 2021 12:39 pm

Funeral ceremony has changed in pandemic time | Sangbad Pratidin

প্রতীকী ছবি।

নব্যেন্দু হাজরা: এক যাত্রায় পৃথক ফল! অপঘাত নয়, রোগে ভুগে যাঁরা পরপারে পাড়ি দিচ্ছেন, করোনাকালে (Coronavirus) তাঁদের মধ্যেও পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মাদিতে (Funeral ceremony) বৈষম্য। যার মূলে করোনাই। অতিমারীর (Pandemic) ছোঁয়াচ বাঁচাতে ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ উপায়ে শাস্ত্রবিধিও নিজেকে বদলে নিচ্ছে!
যেমন, বালি চৈতলপাড়ার সুবিমল রায়। করোনা থেকে সেরে ওঠার‌ দিন দুই পর, গত ৪ জুন তিনি মারা যান। ক্লাস নাইনে পড়া ছেলে মুখাগ্নি করেছে। শাস্ত্রীয় হিসেবে তেরো দিনের মাথায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য ঘাটকাজ হওয়ার কথা। কিন্তু পুরোহিতের নিদান, শ্রাদ্ধশান্তির নিয়ম যা পালন করার, সব হবে এক মাস বাদে। কারণ, তিনি এখন রায়বাড়ির ধারকাছ মাড়াবেন‌ না। করোনা বলে কথা!

শান্তিপুরের এক ব্যবসায়ী বাড়িতেও একই কিসসা। ব্যবসায়ী করোনায় মারা গিয়েছেন। ছেলে করোনা আক্রান্ত। ফলে পরিবার দেহ সৎকার করতে পারেনি। পুরোহিতমশাই নিদান দিয়েছেন, এখন নয়, শ্রাদ্ধ হবে বিয়াল্লিশ দিন পর। ছেলের সাদা কাপড় পরে কাছা নেওয়ার যে রীতি, সেটাও শ্রাদ্ধের একদিন আগে করলেই হবে। “অসুস্থতায়‌ আবার এত নিয়ম কীসের?” সাফ বলেছেন পুরোহিত।

[আরও পড়ুন: মালদহ হত্যাকাণ্ড: খুনের আগে অপহরণের নাটক! বাবার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল আসিফ]

হিন্দুশাস্ত্র মতে, মৃতের আত্মার শান্তিলাভের জন্য মৃত্যুর ১১ অথবা ১৩ দিনের মাথায় পারলৌকিক ক্রিয়া বা শ্রাদ্ধশান্তি হওয়ার কথা। প্রথমে ঘাটকাজ, পরের দিন শ্রাদ্ধ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সব অঙ্ক ঘেঁটে দিচ্ছে। করোনায় অথবা করোনা থেকে সেরে ওঠার দিনকয়েকের মধ্যে কেউ মারা গেলে অনেক পুরোহিতই এক মাসের আগে শ্রাদ্ধশান্তি করতে চাইছেন না। কেউ বলছেন এক মাসের মাথায় করতে, কেউ বিয়াল্লিশ দিনের ব্যবধান হাঁকছেন। শুনে মাথা চাড়া দিচ্ছে প্রশ্ন,‌ তবে কি অসুখভেদে শ্রাদ্ধরীতি বদলে গেল? পুরোহিত সম্প্রদায়ের প্রধানরা অবশ্য এমনটা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, অবস্থাবিচারে কেউ কেউ নিয়ম বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন, সকলের ভালর জন্যই।‌

৩০ দিন বা ৪২ দিনে শ্রাদ্ধের কথা কোথাও লেখা নেই। কিন্তু বর্তমানের অতিমারী পরিস্থিতিতে এই নিয়ম আঁকড়ে রাখলে মুশকিল। কেন? ওঁদের ব্যাখ্যা, করোনায় মৃতের পরিবারের অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের প্রভূত সম্ভাবনা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর পরেই পরিজন কাছা নেবেন, হবিষ্যি খাবেন, মাটিতে শোবেন, চুল আঁচড়াবেন‌ না, এ সব আশা করা যায় না, উচিতও নয়। বরং এ সবে হিতে বিপরীত হতে পারে। গুরুতর অসুস্থ‌ হয়ে পড়তে পারেন তাঁরা। তাই এক মাস বা বিয়াল্লিশ দিনের মাথায় শ্রাদ্ধ-শান্তির‌ নিদান।

[আরও পড়ুন: একটানা বৃষ্টি থেকে কবে মিলবে রেহাই? জেনে নিন হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস]

তবে ঘটনা হল, যে বাড়িতে করোনা প্রবেশ করেছে, তেরো দিনের মাথায় সেখানে শ্রাদ্ধাদির কাজ করতে পুরোহিতরাও বড় একটা আসতে‌ চান না, ছোঁয়াচের ভয়ে। এক মাস বাদে নিয়ম পালনের উপদেশের‌ নেপথ্যে এটাও বড় কারণ। এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় পুরোহিত কল্যাণ পরিষদের সম্পাদক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অতীতে ব্রাহ্মণ ছাড়া সকলকেই ৩০ দিনের মাথায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে হত। পরে তা সংক্ষিপ্ত করা হয়। আসলে যিনি শ্রাদ্ধের কাজ করবেন তাঁর শরীর যদি ঠিক না থাকে, করোনা হয় বা করোনা থেকে সদ্য সেরে ওঠেন তবে তো তিনি ১৩ দিনের নিয়ম মানতে পারবেন না। অশৌচ পালন করাটাও কষ্টসাধ্য। তাই সেই অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে শরীর ঠিক রেখে কিছুদিন পর করাই ভালে।”

বৈদিক পণ্ডিত ও পুরোহিত মহামিলন কেন্দ্রের সভাপতি নিতাই চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আত্মার মুক্তিলাভের জন্য শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান করা হয় ১১, ১৩ অথবা ১৫ দিনের মাথায়। এক মাস বা ৪২ দিনের কথা কোথাও লেখা নেই। পুরোহিতরা নিজেদের এবং মৃতের পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এমন বিধান দিচ্ছেন।” খানিকটা একই দাবি মহারাজ কল্যাণেশ্বরের।‌ তাঁর কথায়, “শাস্ত্রমতে শ্রাদ্ধ পিছিয়ে দেওয়ার কথা কোথাও নেই। শুধু অপঘাতে মৃত্যু হলে তিন দিনে শ্রাদ্ধ হয়। পুরোহিতরা নিজেদের মতো করে এটা করছেন। তাছাড়া করোনার মহামারী এখন হয়েছে। শাস্ত্রে তার উল্লেখ থাকবে কী করে?”

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে