Advertisement
Advertisement

ভিনরাজ্যের যৌনপল্লিতে বিক্রির ছক, বুদ্ধির জোরে বেঁচে ফিরল কিশোরী

দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে কিশোরীকে পাচারের ছক কষে দূর সম্পর্কের আত্মীয়।  

Hooghly girl escapes traffickers in Tamil Nadu
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:August 24, 2018 11:16 am
  • Updated:August 24, 2018 11:16 am

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: পক্ষাঘাতে পঙ্গু বাবা। মা দিনমজুরের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও সংসার চলে না। রোজগারের আশায় তাই আত্মীয় উপর ভরসা করেই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল খানাকুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু রক্ষকই ছিল ভক্ষক। জোর করে নাবালিকাকে দেহব্যবসায় নামানোর চেষ্টা করে আত্মীয়ই। কিন্তু বুদ্ধি থাকলে উপায়ও মেলে। আর সেই উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই পাচারকারীদের হাত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হল ১৬ বছরের কিশোরী।

খানাকুলের ঠাকুরানিচকে বাড়ি ওই কিশোরীর। জানা গিয়েছে, চরম দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক যুবক নির্মল কর তাকে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তামিলনাড়ুর নারী পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। চলতি মাসের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পাচারকারীদের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরী। দেহব্যবসায় তাকে নামানোর চেষ্টা করা হয়। রাজি না হওয়ায় তাকে বেধড়ক মারধরও করা হত।

Advertisement

[অশরীরী আতঙ্কের অবসান, অবশেষে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরা পড়ল ‘ভূত’]

Advertisement

জানা গিয়েছে, দূর সম্পর্কের আত্মীয় নির্মল ওরফে আকাশের নিয়মিত যাতায়াত ছিল কিশোরীর বাড়িতে। তামিলনাড়ুতে নির্মলের পোশাকের ব্যবসার পাশাপাশি সোনার দোকানও রয়েছে। কিশোরীর অভিযোগ, তাদের পরিবারের অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে নির্মল তাকে ভাল রোজগারের প্রলোভন দেখায়। সংসারের কথা চিন্তা করে কিশোরী নির্মলের সঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাসে তামিলনাড়ু চলে যায়। তাকে তামিলনাড়ুতে নিয়ে গিয়ে নির্মল বেশ কয়েকদিন একটা ঘরে লুকিয়ে রাখে। কিশোরী জানায়, সে কাজের কথা জিজ্ঞাসা করলে তাকে দেহ ব্যবসায় নামার কথা বলে। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় তাকে বেধড়ক মারধর করত নির্মল। বাড়ির লোকের যাতে সন্দেহ না হয়, সেজন্য নির্মল বাড়িতে মাঝে মধ্যে ফোন করে তাকে দিয়ে বলতে বাধ্য করত যে সে ভাল আছে।

কিন্ত কয়েকদিনের মধ্যেই কিশোরী বুঝতে পারে তার মতো এরকম বহু মেয়ে ফাঁদে পড়ে এই পেশায় নামতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যেই নির্মল পতিতাপল্লির সাথে যোগাযোগ করে কিশোরীকে বিক্রি করে দেওয়ার পুরো ব্যবস্থা করে ফেলে। জানতে পেরে কিশোরী একবার পালানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। এরপর মারধরের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাকে একটি ঘরে তালা বন্ধ করে আটকে রেখে দেওয়া হয়। এরপরই নিজের বুদ্ধি খাটাতে শুরু করে কিশোরী। নির্মলের সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে শুরু করে সে। নির্মল ভাবে হয়তো এবার আর কিশোরী সেরকম কিছু করবে না। এরপরই একদিন ওই কিশোরী বুদ্ধি করে মোবাইল রিচার্জ করার নাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। নির্মলের সোনার দোকানের এক কর্মচারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাকে সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বলে। দোকানের ওই কর্মচারী মেঙ্গলুরুতে মেয়েটির এক মামার ঠিকানা জোগাড় করে। তারপর সুযোগ বুঝে তিনি কিশোরীকে মেঙ্গালুরুতে তার মামার কাছে পাঠিয়ে দেন।

[স্কুলে হিন্দি গানের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচ শিক্ষিকাদের, ভাইরাল ভিডিও]

চলতি মাসের ২০ আগস্ট মামা খানাকুলের বাড়িতে খবর দেন। কিশোরীর মা স্থানীয় ভিলেজ পুলিশ সুদীপ্ত ভৌমিককে ঘটনার কথা জানান। তিনিই টাকাপয়সা জোগাড় করে মেঙ্গালুরুতে নিজের বন্ধুদের পাঠিয়ে বলেন, তারা যেন কিশোরীকে বিমানের টিকিট কেটে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। সুদীপ্তবাবুর বন্ধুরাই বুধবার ভোরের ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু থেকে কিশোরীকে বিমানে তুলে দেয়। বুধবার দমদমে বিমানবন্দরে নামার পর তাকে খানাকুলের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এদিকে অভিযোগ, কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে নির্মল। খানাকুল থানায় কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে নির্মলের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি খানাকুলের মানুষ ভিলেজ পুলিশ সুদীপ্ত ভৌমিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সকলে এক বাক্যে স্বীকার করছেন, সুদীপ্তবাবু যেভাবে অর্থ জোগাড় করে মেয়েটিকে ফিরিয়ে এনে মানবিকতার নজির সৃষ্টি করেছেন তা সত্যি বিরল!

[এবার পশ্চিম মেদিনীপুরেও মোমো আতঙ্ক, পুলিশের তৎপরতায় রক্ষা পেল কিশোর]        

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ