সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রশান্ত কিশোর। ভারতীয় রাজনীতির মেঘনাদ। নরেন্দ্র মোদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তৈরি করার কারিগর। আবার মোদির প্রতাপের মধ্যে পাঞ্জাব, বিহারের মতো রাজ্য বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেপথ্য নায়ক। রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে তাঁর সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। ব্যর্থতার দাগ শুরু একটাই ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছিলেন। কিন্তু, সাফল্য আসেনি। সেটুকু বাদ দিলে গোটা কেরিয়ারেই সাফল্যের শীর্ষ ছিলেন পিকে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ, অন্ধ্রপ্রদেশে জগনমোহন রেড্ডিকে মুখ্যমন্ত্রী করা। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের এই সাফল্যের রসায়ন কী?
[আরও পড়ুন: রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ, নীতি আয়োগের বৈঠকে যাচ্ছেন না মমতা]
আসলে, ভারতীয় রাজনীতিতে পরামর্শদাতার ধারণাটাই আমদানি করেছেন প্রশান্ত। রাজনীতির পিছনেও যে গবেষণা থাকতে পারে সেকথা হয়তো প্রশান্ত কিশোরের আগমনের আগে কারও জানা ছিল না। প্রশান্তের এই গবেষণামূলক রাজনীতির ধারণাটাই তাঁর সাফল্যের কারণ। বুথকেন্দ্রিক গবেষণা, প্রতিটি এলাকা ধরে সমীক্ষা এবং যে দলের হয়ে কাজ করছে, সেই দলের উপর মানুষের অভাব-অভিযোগ, এসব নিয়ে পর্যালোচনা করেই রণকৌশল ঠিক করেন প্রশান্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিখুঁত তথ্যনির্ভর সমীক্ষা এবং সমস্যার সমাধান হিসেবে নতুন ‘পলিটিক্যাল লাইন’ তৈরি করাই প্রশান্ত কিশোরের মূল ইউএসপি।
বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও সেই একই কাজ করতে চলেছেন পিকে। প্রথমেই তাঁর দলের লোকজন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যাবে। তারপর করা হবে বুথভিত্তিক সমীক্ষা। দলের ভিতরে মানুষের ক্ষোভ কেন? কোন নেতাকে তাঁর এলাকার মানুষ পছন্দ করছেন না? দলনেত্রীর কোন কাজ মানুষের না-পসন্দ, এসবই খতিয়ে দেখবে প্রশান্তের দল। তারপর এলাকাভিত্তিক রণকৌশল তৈরি হবে। কোন এলাকায় গিয়ে তৃণমূল নেতারা কী ধরনের বার্তা দেবেন সেটাও হয়তো ঠিক করে দেবেন প্রশান্তই। সবটা মেনে চলতে পারলে, রাজ্যের শাসকদল সাফল্য পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: নির্বাচনে সাফল্য পেতে নয়া অস্ত্র, প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজিতে বিধানসভায় লড়বে তৃণমূল]
কিন্তু, এর উলটো প্রভাবও আছে। যদি কোনও কারণে প্রশান্তের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতবিরোধ হয়, সেক্ষেত্রে উলটো ফলও হতে পারে। এর আগে কংগ্রেসকে ভুগতে হয়েছে একই কারণে। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস সাফল্য না পাওয়ার একটা কারণই হল প্রশান্তের সঙ্গে রাহুলের মতবিরোধী। প্রশান্ত চাইছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে কংগ্রেসের মুখ করতে, কিন্তু কংগ্রেস তা শোনেনি। মতবিরোধের জেরেই শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হতে হয় কংগ্রেসকে। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই ভুল করেন, নাকি পিকের পরামর্শ মেনে সাফল্যের পথে ফিরে আসেন, সেটাই এখন দেখার।