সম্যক খান, মেদিনীপুর: গোয়ালতোড় (Goaltore) থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত শুরু করল রাজ্য গোয়েন্দা শাখা। বৃহস্পতিবারই রাজ্য আইবির তিন সদস্যর একটি দল ঘটনাস্থল সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গেও। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ্য গোয়েন্দা শাখার আধিকারিকরা কিছু বলতে চাননি। জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানান, তদন্ত চলছে। তাই এখনই বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র কারা লুকিয়ে রেখেছিল, তা নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ।
ভৌগোলিক দিক থেকেও উখলা থেকে বড়ডাঙার দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। উখলার জঙ্গলে মাওবাদীদের যে শক্তিশালী ডেরা ছিল তা প্রায় সকলেরই জানা। উলটোদিকের নলবনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ছিল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। মাওবাদীদের রুখতে পালটা সশস্ত্র ঘাঁটি গেড়েছিল সিপিএমও। দু’পক্ষের মধ্যে একাধিকবার গুলি বিনিময়ের সাক্ষী অনেক গ্রামবাসী। কিন্তু রাজ্যে ২০১১ সালে পালাবদলের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পালটে যায়। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর কঙ্কালকাণ্ড মামলায় ওইবছরই সেপ্টেম্বরে সুশান্ত ঘোষ গ্রেপ্তার হন। তার ঠিক মাসদুয়েক পর এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজি ওরফে কোটেশ্বর রাওয়ের। তারপর থেকেই পাততাড়ি গোটাতে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। কোথাও গভীর জঙ্গলের মধ্যে তো কোথাও মাঠে ময়দানে মাটির নিচে নিজেদের ব্যবহৃত অস্ত্র পুঁতে দেয় বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীকালে বিভিন্ন জায়গা থেকে এভাবেই একের পর এক অস্ত্র উদ্ধার হতে থাকে।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গোয়ালতোড়ের উখলার জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে সাতটি মাস্কেট, একটি এসবিবিএল গান-সহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রের ভগ্নাবশেষ উদ্ধার হয়। অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও ল্যান্ডমাইন তৈরির সামগ্রী যেমন অ্যালুমিনিয়ামের ক্যান, বিদ্যুতের তারও উদ্ধার হয়। তাতে পুলিশ নিশ্চিত ছিল যে, ওই অস্ত্রশস্ত্র মজুত করা ছিল মাওবাদীদেরই কাজ। কিন্তু এখন নলবনা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড়ডাঙায় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের সময় দেখা গিয়েছে যে জংধরা ওই বন্দুকগুলি যে ফেস্টুনে মোড়া ছিল তাতে লেখা ছিল ‘চলো সবাই গ্রামসভায় যাই।’ ওই লেখা দেখে পুলিশের একাংশ মনে করছে, এধরনের স্লোগান মাওবাদীদের হতে পারে না।
এই ঘটনায় জারি রাজনৈতিক চাপানউতোর। শাসকদল তৃণমূল থেকে শুরু করে পুলিশের একাংশেরও সন্দেহের তীর সিপিএমের দিকে। জেলা তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি বলেন, “এলাকা দখলের লক্ষ্যে গোটা জঙ্গলমহলকে অস্ত্রাগারে পরিণত করে ফেলেছিল মাওবাদী ও সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী।” তাঁর দাবি, “এখনও বহু অস্ত্র মাটির নিচে এভাবে পোঁতা আছে। সিপিএম নেতাদের জেরা করলেই সেসব জানা যাবে। ২০১১ সালে পালাবদলের পর অস্ত্রগুলি লুকিয়ে হার্মাদরা গা ঢাকা দিয়েছিল।” যদিও সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেছেন, “সিপিএম অস্ত্রের রাজনীতি করলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জন্মই হত না। বরং মাওবাদীদের ডেকে এনেছিল তৃণমূলই। তারাই অস্ত্রের আমদানি ঘটিয়ে একের পর এক কমরেডকে খুন করেছে। মাওবাদীরাই যে পরবর্তীকালে তৃণমূল হয়ে গিয়েছে তা প্রমাণিত। মাওবাদীদের প্রথম সারির নেতা ছত্রধর মাহাতো আজ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.