Advertisement
Advertisement

মহাষষ্ঠীতেই চন্দননগরে জমজমাট জগদ্ধাত্রী পুজো

মঙ্গলবারেই প্রতিমা দর্শনে উপচে পড়েছে ভিড়।

Jagaddhari puja is a famous festival of Chandannagar

সুরের পুকুর সর্বজনীনের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:November 13, 2018 7:00 pm
  • Updated:September 20, 2021 12:16 pm

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দুর্গাপুজোতে কলকাতা, কালীপুজোতে বারাসত ঘুরে বাঙালির ১৩ পার্বণ এখন গঙ্গার পাড়ের চন্দননগরে থিতু হয়েছে। মা জগদ্ধাত্রীর কল্যাণে সেখানেই দিন কতক থেকে যাওয়ার ইচ্ছা তার। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে সেজে উঠেছে হুগলির চন্দননগর। আজই ষষ্ঠী। সকাল থেকেই সাজসাজ রব চন্দননগরে। এই ষষ্ঠীর দিনেই আবার ছট পুজোর সরকারি ছুটি। ছুটির দিনে জগদ্ধাত্রী দর্শনে চন্দননগরে ভিড় উপচে পড়ছে। এমনিতে নবমীতেই জমজমাট থাকে চন্দননগর। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে ছুটির দিনটা আর কেই বা মিস করতে চায়। তাই ভিড় এড়াতে ষষ্ঠীতেই বেশকিছু ঠাকুর দেখতে চন্দননগরে হাজির পুজোপাগল বাঙালি।

দুর্গাপুজোর খ্যাতি উত্তর-দক্ষিণ-মধ্য কলকাতা ভাগাভাগি করে নিলেও জগদ্ধাত্রী পুজোর খ্যাতি কিন্তু চন্দননগরেরই প্রাপ্য। সেইসঙ্গে রয়েছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। যার জগৎজোড়া গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য। বছর দুয়েক আগেই দিওয়ালিতে বাংলো সাজাতে এই চন্দননগরের আলোক শিল্পীদেরই বরাত দিয়েছিলেন বিগ-বি অমিতাভ বচ্চন। যে আলোর কৃতিত্ব দেশ রাজ্যের গণ্ডী ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে প্রশংসা কুড়িয়েছে, সেই আলো যদি চন্দননগরকেই সাজায় তবে তা অনন্যতাকে স্পর্শ করবে সন্দেহ নেই। তাই পঞ্চমীর রাত থেকেই অভিনব আলোর মালায় সেজেছে অধুনা ফরাসি কলোনি। জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে থিমের লড়াইয়ে নেমেছে বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলি। শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে কে কাকে চমকে দেবে তানিয়েই চলছে নিরন্তর প্রতিযোগিতা।

Advertisement

[ইসলামপুর কাণ্ডে ধৃতদের শর্তসাপেক্ষ জামিন আদালতের]

ফিরে আসি পুজোর কথায় চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীপুজোর দুটি ভাগ রয়েছে। একসময় চন্দননগর রেলস্টেশনের পূর্ব পাড়েই সমস্ত জগদ্ধাত্রী পুজো হত। পূর্ব পাড় যখন আলোর মালায় ঝকমকিয়ে উঠত, পশ্চিম পাড় তখন অন্ধকার মেখেই দুয়োরানির মতো প্রহর গুনত। সেই সময় আজ আর নেই। একদিন অন্ধকারকে জয় করে আলোকে বরণ করে নিয়েছিল ব্রাত্য পশ্চিম পাড়। এই পাড়ের ব্যবসায়ীরাই জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনায় এগিয়ে এসেছিলেন। এখন তো পূর্ব পাড়ের সঙ্গে টক্কর দিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজো করছেন তাঁরা। কতকটা এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ, গোছের। সেই পশ্চিম পাড়ের বউবাজার সর্বজনীনের পুজোর বেশ নামডাক রয়েছ। এবার বউবাজার সর্বজনীনের পুজো ৫১ বছরে পড়ল। এখানে দেবী জগদ্ধাত্রী কাঠের তৈরি বিশালাকার রথে বিরাজমান। এই বউ বাজার সর্বজনীনের মণ্ডপসজ্জায় জায়গা করে নিয়েছে ঘরকন্নায় ব্যবহৃত কাঠের সামগ্রী। তালিকায় হাতা, খুন্তি থেকে শুরু করে বেলনা, চাকি মায় কাঠের কোশাকুশিও মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহারের ভারে দূষণে ছেয়েছে চরাচর। আগেও দৈনন্দিন কাজে প্রচুর কাঠের সামগ্রী ব্যবহার হত। বর্তমানে সেই জায়গাও এখন প্লাস্টিকের দখলে। দিনের পর দিন প্লাস্টিক যেভাবে অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাতে বিপদ বাড়ছে বই কমছে না। সেই বিপদের বার্তা দিয়ে কাঠের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়াতেই এই থিমের আয়োজন করা হয়েছে। মণ্ডপে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে কাঠের ব্যবহারের বার্তা দিতে এই আয়োজন। জানিয়েছেন, বউবাজার সর্বজনীনের কর্মকর্তা অয়ন মান্না। এই পুজোকমিটির বিসর্জনেও রয়েছে বিশেষত্ব। প্রতিমাকে মণ্ডপ থেকে লরিতে শুইয়ে নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। স্টেশনের পূর্ব পাড়ে লরি পৌঁছাতেই শায়িত প্রতিমাকে ফের দাঁড় করিয়ে নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

চন্দননগর সুরের পুকুর সর্বজনীনের এবছরের থিম রক্তকণিকা। ৩০ বছরে পড়ল সুরের পুকুরের জগদ্ধাত্রী পুজো। থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়েই তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। লোহার খাঁচা, পাট কাঠি, গাছের শিকড়, সুতো দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। সেখানে মানুষের ধমনীর মধ্যে দিয়ে কীভাবে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে তার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুজোকমিটির তরফে বিশ্বজিৎ পাল জানান, রক্তকণিকা মানুষের জীবনে কতটা অপরিহার্য তাই গোটা মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে। মণ্ডপের আর একপাশে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু একফোঁটা রক্তের জন্য ভিক্ষা চাইছে। এক বোতল রক্তই বাঁচাতে পারে প্রাণ। অথচ অনেকেই এখনও রক্তদানে ভয় পান। রক্তের কোনও ধর্ম হয় না। থিমের মধ্যে দিয়ে এই বার্তাই তুলে ধরেছে সুরের পুকুর পুজোকমিটি।

[চোখ উপড়ানো দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়িতে চাঞ্চল্য]

বলা বাহুল্য, জগদ্ধাত্রী আরাধনার মধ্যেও রয়েছে অন্তর্নিহিত অর্থ। একমাত্র শান্তির কামনায় জগদ্ধাত্রী আরাধনায় ব্রতী হন চন্দননগরের বাসিন্দারা। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব জগদ্ধাত্রীর প্রকৃত অর্থ খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন। ১৮৮৩ সালের ২২ জুলাই দক্ষিণেশ্বরে তাঁর মানসপুত্র রাখাল তথা শ্রীমকে বলেছিলেন,  ‘জগতকে যিনি ধারণ করে আছেন তিনি হলেন জগদ্ধাত্রী।’ মা যদি জগতকে পালন না করেন তবে জগৎ ধ্বংস হয়ে যায়। এক কথায় তিনি বুঝিয়েছিলেন, অশান্ত মন হল মত্ত হাতির মতো। সেই অশান্ত মনকে বশে আনতেই জগদ্ধাত্রীর উদয় হয়। ঠাকুর রামকৃষ্ণের সেই বাণী, আজও প্রাসঙ্গিক। তাই বর্তমানের অসহিষ্ণুতা ভুলে মানুষের মনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে চন্দননগরের বাসিন্দারা জগদ্ধাত্রীর আরাধনায় মেতে ওঠেন। তাই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীকে শুধু পুজো হিসেবে দেখলে চলবে না। এই পুজো থেকেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায় মানুষ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ