Advertisement
Advertisement

Breaking News

মানবিকতার নজির, ভবঘুরে যুবককে ঘরে ফেরালেন করিমপুরের ব্যবসায়ীরা

অসমের পরিবার ধন্য ধন্য করছেন তিন ব্যবসায়ীর কৃতিত্বে।

Karimpur merchants helps Vagabond youth to going back to his family
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:April 27, 2018 7:51 pm
  • Updated:October 27, 2018 5:09 pm

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: ‘ও লোক আদমি নেহি ভগবান হ্যায়। হামারা বেটা কো মিলা দিয়া।’ ছেলের হাত ধরে করিমপুর থেকে বাসে ওঠার সময়ও চোখে জল নিয়ে কামাক্ষা মালা কথাগুলো বলে চলেছেন। এই ওঁরা হল করিমপুরের বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া তিন দোকানদার। গৌতম বিশ্বাস, গোপেন সাহা আর পিন্টু ঘোষ। এঁদের মানবিক প্রচেষ্টাতেই সাড়ে তিন বছর পর এক মানসিক ভারসাম্যহীন তাঁর পরিবার খুঁজে পেলেন।

[কিশোরীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ, অনশন প্রত্যাহার করে পালালেন কোচবিহারের যুবক]

যুবককে সুস্থ করে কয়েক হাজার কিমি দূরের অসমে তাঁর বাড়ির লোকের কাছে ফিরিয়ে দিলেন ওঁরা। চাষ-আবাদ ও অরুণাচল প্রদেশে দোকানে কাজ করা রবীন্দ্র মালার বাড়ির লোকজনের বিশ্বাস, কেউ বা কারা  গাছ-গাছরা খাওয়ালে তিনি পাগল হয়ে যান। এরপর থেকে আচমকা বাড়ির লোকজনকে মারধর করেন। চিৎকারও করতেন। বছর পাঁচেক আগে চিকিৎসার জন্য রবীন্দ্রকে উত্তরপ্রদেশে ওর দিদির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। গোরক্ষপুরে রাতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। বয়স্ক বাবা কামাক্ষা আর মা বিভিন্ন জায়গায় কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়ান। গত পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজের মধ্যে করিমপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এই যুবক সাড়ে তিন বছর ধরে রয়েছেন। বড় চুল, গায়ে গন্ধ বা নোংরা পোশাক পরে থাকলেও কাউকে কোনওদিন কুকথা বলেননি তিনি। এলাকার মানুষ প্রথম প্রথম নাম, বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। খাওয়ার সময় এলাকার কয়েকটা হোটেল থেকে খাবার খেতেন আর যে কোনও বারান্দায় শুয়ে পড়তেন রবীন্দ্র। অনেকদিন ধরে নিজের টুপির দোকানের পিছনে বসে থাকা রবীন্দ্রকে দেখছেন গোপেন সাহা। তিনি বলেন, ‘ওঁর পরিচয় জানতে চাইলে মালুম নেহি বলত। পয়লা বৈশাখের দুদিন আগে আমি দেখলাম জট ধরা ওর চুলগুলো পোকাভর্তি। রাতদিন মাথায় হাত দিয়ে চুলকায়। কেউ কাটতে রাজি হল না। তাই নিজে কাঁচি দিয়ে চুল কেটে দিই। তারপর কলের জলে সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিলাম। ভাল করিয়ে খাইয়ে কথা বলতেই ওঁ বলছে উত্তম লক্ষীনপুর, ববেইখানা। তখন ওঁর নাম জিজ্ঞেস করতেই বলে, রবীন্দ্র মালা। আমি সঙ্গে সঙ্গে পাশের দোকানদার পিন্টুকে বলি লেখত সব। ও লিখে রাখে।’ পাশেই ফার্নিচারের দোকানদার গৌতম বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আমি ওই নাম ঠিকানা ধরে থানার ওসির ফোন নম্বর জোগাড় করি। হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠাই। এরপরই ওখানকার পুলিশের মাধ্যমে এই যুবকের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওর বাবা, ভগ্নিপতি আসলে করিমপুরের পুলিশের মাধ্যমে আমরা তাদের হাতে তুলে দিই।

Advertisement
[বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড শিলিগুড়িতে, ভস্মীভূত ১৬টি গুদাম]

যাতায়াত খরচ বাবদ এদিন এলাকা থেকে দুহাজার টাকা চাঁদা তুলে বাবা কামাক্ষা ও ভগ্নিপতি শশী সাহানির হাতে দেন এলাকার এই ব্যবসায়ীরা। রবীন্দ্রকে নতুন পোশাক পরিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করাতেই কাঁদতে কাঁদতে তিনি প্রণাম করেন। বাবা বুকে জড়িয়ে ধরেন। কামাক্ষা মালা ও শশী সাহানি বারবারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ীদের কাছে। কামাক্ষা বলেন, ‘ছেলে কাজ করত। টাকা আনত। কিন্তু তুকতাক করতে কিছুর সঙ্গে গাছ গাছড়া মিশিয়ে কেউ খাইয়ে দেয়। তারপর থেকে ওঁ এরকম হয়ে যায়। তবে ও লোক আদমি নেহি ভগবান। তিন ব্যবসায়ীর মতো ওসি তাপস ঘোষও বলেন, ‘এ ধরনের মানবিক উদ্দেশে আমরা অংশীদার হতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ