শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকেও বিরহের যন্ত্রণা কঠিন, ভয়াবহ। এমনই এক অনুভবের কথা লিখেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর সেই রচনাই যেন পরতে পরতে অনুভব করছে হাতির হামলায় নিহত উত্তরবঙ্গের মাধ্যমিক (Madhyamik) পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের পরিবার। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার প্রথম দিন বৈকুন্ঠপুরের জংলি হাতি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) টাকিমারির বাসিন্দা, পাচিরাম নহাটা স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুনের। পুত্রশোক বুকে নিয়েই এতদিন দিন কাটিয়েছেন তার বাবা-মা। শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার খবর যেন সেই যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিল। ছেলের মার্কশিট হাতে আসার পর নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না মা সুমিত্রা দাস। ছেলের ছবি দেওয়া মার্কশিটের প্রতিটা ঘরেই অনুপস্থিতির চিহ্ন। শুধু প্রকল্পভিত্তিক বিষয়ে সবকটিতেই ১০এ ১০ পেয়েছে অর্জুন।
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন বাবা বিষ্ণু দাসের বাইকে করে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল অর্জুন। পরিবারের প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, তাই ছেলেকে নিয়ে একবুক প্রত্যাশা ছিলো কৃষক বিষ্ণু দাসের পরিবারের। কিন্তু মাঝপথেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে সব স্বপ্ন চুরমার! বুকে পাথরচাপা যন্ত্রণা নিয়ে দিন গুজরান করছিলেন ছেলে হারানো পরিবার। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর মার্কশিট এসেছে অর্জুনের পরিবারের হাতেও। সব বিষয়ের পাশেই লেখা ‘Ab’ মার্ক।
পাশে প্রকল্প ভিত্তিক (Project) নম্বরে চোখ আটকে যাচ্ছে সকলের। ইংরেজি, অঙ্ক, বাংলা থেকে বিজ্ঞান প্রতিটি বিভাগেই ১০ এ ১০। যা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়া স্ত্রীকে সামলাতে ব্যস্ত বিষ্ণু দাস বলেন, “হাতিটা ওকে পরীক্ষায় বসার সুযোগটুকুই দিল না। নাহলে ও খুব ভাল ফল করত।” স্ত্রীর পাশে বসে অনেকক্ষণ কান্না চাপার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না বিষ্ণুবাবু। কান্নাভেজা কণ্ঠেই বলেন, “ওর বন্ধু বিশাল সরকার, দেবব্রত দাস, রাকেশ দাস সকলেই পাশ করেছে শুনলাম। কিন্তু কেউই আসেনি। বুঝতে পারি, ওরা বাড়িতে এলে অর্জুনের কথা মনে পড়ে যাবে। তাই বোধহয় ওরা আসেনি।”
এ বছর অর্জুনের স্কুল পাচিরাম নাহাটা স্কুল থেকে ২৩৬ জন ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। পাশ করেছে ১৪৮ জন। সকলের মার্কশিট চলে এসেছে স্কুলে। অর্জুন দাসের মার্কশিটও পাঠিয়েছে পর্ষদ। তবে পরীক্ষায় বসতে না পারায় এসেছে “এবি “মার্ক। স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিলীপ হোড় জানান, স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল অর্জুন। স্কুলের প্রকল্প ভিত্তিক পরীক্ষায় অর্জুনের ১০ এ ১০ পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পরীক্ষায় বসার সুযোগটুকু পেলে ভাল ফল করতো বলেই আশাবাদী ছিলেন তাঁরা। স্বাভাবিক ভাবেই আজকের দিনে অর্জুনের না থাকা আজকের দিনে বেদনাতুর করে তুলছে তাঁদের সকলকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.