রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: আইআইটি খড়গপুরের হাত ধরে মহিষাদলের গয়না বড়ির জিআই মার্ক পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। রসগোল্লা বা জয়নগরের মোয়া যার জিআই তকমা শুধু বাংলার হাতে। বিচিত্র বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে কত রকমারি খাবার। তার জিআই তকমা নিতে বাইরের শক্তি মুখিয়ে আছে। কিন্তু রসগোল্লার পর বাংলার প্রশাসনিক কর্তারাও সচেতন। তাই বাংলার তথা পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের গয়না বড়ি অনেকটাই এগিয়ে জিআই তকমা নিতে।
গয়না বড়ি, বিউলির ডাল শিল নোড়া বা মিক্সিতে বেটে তার সঙ্গে বিভিন্ন মশলা মিশ্রণ করে, পোস্ত, তিল বা সুজির উপর জিলিপির মতো দেওয়া হয় বিভিন্ন নকশার আদলে। তিন দিন রোদ খাওয়ানোর পর তা বাজারজাত করা হয়। সূক্ষ্ম এই গয়না বড়ির প্রতিটির দাম চার থেকে পাঁচ টাকা। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিষাদল বিধানসভায় ঘরে ঘরে তৈরি হয় এই বড়ি। শীতের কয়েক মাস চলে এই বড়ি তৈরির কাজ। মা, ঠাকুমা, তারও পূর্বপূরুষরা দশকের পর দশক এই বড়ির কাজ করে আসছেন। আর এই মহিষাদলের গহনা বড়িকে জিআই মার্ক পাওয়ার জন্য অনেক দিন আগে থেকেই জেলা শিল্প দফতর চেষ্টা চলাচ্ছে। আইআইটি খড়গপুরের একটি প্রতিনিধিদল কয়েক মাস আগে মহিষাদলের গয়না বড়ির নমুনা সংগ্রহ করেছে জিআইয়ে আবেদনের জন্য। মহিষাদল ব্লকের বিডিও জয়ন্ত দে জানান, “জেলার কয়েকটি জায়গায় গয়না বড়ি হলেও মূলত মহিষাদলেই এই বড়ি তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণে। সম্প্রতি খড়গপুর আইআইটির একটি বিশেষ দল এই গয়না বড়ির নমুনা নিয়ে গিয়েছে। জেলা শিল্প দপ্তর উদ্যোগী হয়েছে গহনা বড়ি যাতে জিআই রেজিস্ট্রেশন পায়। আর তাই মহিষাদলের এই গয়না বড়ি যাতে জিআই ট্যাগ পায় তার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় রসগোল্লার মতো মহিষাদলের গহনা বড়ির জিআই মার্ক ভাগ্যে জোটে কিনা?
গয়না বড়ি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রস্তুত একটি অতি জনপ্রিয় খাদ্য। এটি নকশা বড়ি নামেও পরিচিত। এটি বিউলির ডাল, পোস্ত ও বিভিন্ন ধরনের মশলার মিশ্রণে প্রস্তুত এবং গয়নার মতো সূক্ষ্ম নকশা সমন্বিত অতি দৃষ্টিনন্দন একপ্রকার বড়ি বিশেষ। গহনা বড়ি বহু শতাব্দী প্রাচীন একটি কুটির শিল্প যা সাধারণত বাড়ির মহিলারা প্রস্তুত করে থাকেন। গহনা বড়ির ইতিহাস বহু শতাব্দী প্রাচীন। ভারতে ব্রিটিশ আসার আগে গয়না বড়ি প্রস্তুতিতে পোস্তর প্রচলন ছিল না। পলাশির যুদ্ধের পরে, ব্রিটিশরা বেআইনি আফিমের এক বিশাল বাজার আবিষ্কার করে চিনে। ব্রিটিশরা তখন বাংলার রাঢ় অঞ্চলের চাষীদের পোস্ত চাষে বাধ্য করে এবং তার থেকে বিপুল পরিমাণ আফিম নিষ্কাশন করে তা চিনে পাচার করতে শুরু করে। আফিম নিষ্কাশনের পর পোস্তর বীজ ফেলে দেওয়া হত। ক্রমে পোস্তর বীজ বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলার রান্নার উপাদান হয়ে ওঠে। সেই থেকে মেদিনীপুরে গয়না বড়িতে পোস্ত দানার ব্যবহার শুরু হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.