দেবব্রত মণ্ডল, গোসাবা: গত ২০ মে সুপার সাইক্লোন আমফান কেড়ে নিয়েছে বসতভিটা। গোমর নদীর নোনা জলে ভেঙে গিয়েছে একের পর এক বাড়ি। বাড়ি হারিয়ে একের পর আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছেন এখন অনেকেই। কিন্তু সহদেব দাস তিনি আশ্রয় শিবিরে যাননি। ঝড় জলের মধ্যেই নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকাটিকে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাড়ির বারান্দায়। তখন বাঁধ ভেঙে নোনাজল গ্রাস করে ফেলেছে অর্ধেক রাঙাবেলিয়া গ্রাম। তারপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে উঠে পড়ে নৌকাতে। আপাতত দু’সপ্তাহ ধরে সেখানেই পেতেছেন সংসার। স্ত্রী, বৃদ্ধ মা ও এক সন্তানকে নিয়ে আপাতত নদীর বুকে দিন কাটাচ্ছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বিস্তীর্ণ গ্রাম ভেসে যায় সুপার সাইক্লোন ও প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কারণে। এখনও বহু এলাকায় নদীবাঁধ বাঁধা সম্ভব হয়নি স্থানীয় মানুষের। আসন্ন ভরা কোটালের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা সকলেই। যদি আবার নতুন করে বাঁধ ভেঙে যায় তো আশ্রয় নেবেন কোথায়। ইতিমধ্যেই যে সমস্ত এলাকায় ভেঙে গিয়েছিল প্রশাসনের তরফ থেকে তড়িঘড়ি মেরামতিও শুরু হয়েছে। তবে রাঙাবেলিয়ায় এখনও খেলছে জোয়ার-ভাটা। সেই সমস্ত এলাকাগুলিতে দ্রুত বাঁধ মেরামত করার চেষ্টাও চলছে। সেখানেই থাকেন সহদেব দাস। আপাতত ঘর-সংসার বলতে সবটাই ত্রিশ ফুট ডিঙি নৌকার উপরে। সন্ধ্যা নামলেই নৌকাতে ছোট্ট একটি সোলার ল্যাম্প জ্বালিয়ে নদীর বুকে নোঙর করে থাকেন। তবে তাঁর এইভাবে থাকতে কয়েকদিন খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না বলেও জানান।
[আরও পড়ুন: বঙ্গে ঢুকে পড়ল পঙ্গপালের দল? একাধিক জেলায় জমিতে ফসলের দফারফা, তুঙ্গে আতঙ্ক]
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল নৌকার উপরে স্টোভে রান্না করছেন সহদেববাবুর স্ত্রী। শুধু তাই নয়, বাড়ির দুটো মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে নৌকার অন্য মাথাতে। আপাতত অন্যান্য দরকারি কাজ সারছেন নৌকার উপর বসে বসে। সৌরশক্তির মাধ্যমে চার্জ দিয়ে নিচ্ছেন মোবাইল ফোন। বন্ধুবান্ধবরা আসলে নৌকা নদীর পাড়ে ঠেকিয়ে সেরে নিচ্ছেন দরকারি কথাবার্তা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এমনিতে থাকতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। নৌকাতে থাকার অভ্যাস আমাদের আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাড়ির অন্য তিন সদস্যকে নিয়ে। তাঁরা এই ভাবে নৌকাতে থাকতে অভ্যস্ত নয়। আর মানুষের কিছু প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেগুলো নৌকায় সারতে অসুবিধা হচ্ছে। অন্যান্য কাজকর্ম খাওয়া-দাওয়া সব ঠিক আছে।”
এলাকার কোথাও ত্রাণসামগ্রী বিলি হচ্ছে খবর পেলেই নৌকা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন সেখানে। কিছু কেনাকাটা দরকার হলে ওই নৌকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন আশপাশের বাজারে। এমনকি অন্য দ্বীপে। গত ২০ মে’র পর থেকে এই নৌকাই তাঁর জীবন। বাড়িঘর বলতে সবটাই নৌকা। রাতদিন কাটছে সেখানেই। কিন্তু এইভাবে থাকতে রাজি নন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। স্ত্রী মণি দাস বলেন, “বাড়িতে ঘর আছে কিন্তু নোনা জল ঢুকে যাওয়ায় তা বসবাসের অযোগ্য। এইভাবে নৌকার উপর জীবন কাটানো খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। রাতের বেলা ভাল লাগলেও দিনের বেলা খুব কষ্ট হয়, থাকা যায় না। নৌকার উপরে তারপোলিনে বানানো ছোট্ট ঘরের মধ্যে থাকা কষ্টকর। যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফিরে নতুন করে সংসার করতে চাই।”