নন্দন দত্ত, সিউড়ি: একে শিবরাত্রি। সঙ্গে ভ্যালেন্টাইনস ডে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে গান্ধর্ব মতে বিয়ে হল শিব-পার্বতীর। পার্বতীকে সাজানো হল লাল চেলি আর চুয়া চন্দনে। আর তারপর পার্বতীর ঘরে সখীরা সাজালেন ছাদনাতলা। বরযাত্রীদের আপ্যায়নের জন্য বসল ভিয়েন। সকাল থেকে এই নিয়ে বিরাট তোড়জোড়। কারণ বিয়ের আসর বসেছে মেলার মাঠে। শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। মাটি আর গোবরের প্রলেপে নিকানো হয়েছে ছাঁদনাতলা। কাঁপা হাতে পিটুলি গুলে দেওয়া হল আলপনা।
নিয়ম মানলে শিব চতুর্দশীর পরে বরযাত্রীর মন্দির থেকে মেলার মাঠে রওনা হওয়ার কথা। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে ভর সন্ধেবেলাই বর রওনা দিল। বাজনা বাজিয়ে বরযাত্রীর কাঁধে চেপে এল শিবঠাকুর। আর বরযাত্রী হিসেবে এল তাঁর আপন দেশে বাগলপুর, ডানজোনা, মহম্মদবাজারের গ্রামের মানুষ। তাঁদের আপ্যায়ন করলেন আশ্রমের ভক্তরা। কারণ শিবঠাকুর যে তাঁদের ঘরের লোক। এদিন তাঁকে এভাবে কাছে পেয়ে উদ্বেল হল এলাকাবাসীরা। তারপর দু’পক্ষের মন্ত্রোচ্চারণে জমে উঠল বিয়ের আসর। উলুধ্বনি। শঙ্খধ্বনি। সিঁদুর দান। শুভদৃষ্টি। মালা বদল। গান্ধর্ব মতে বাঙালির শর্ট কার্ট বিয়ের মতই সব আয়োজন সম্পূর্ণ হল। শিব ঠাকুর তখন যেন ঘরের জামাই। তাকে নিয়েই বুধবারের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যত আমোদ। শিব-পার্বতীর বিয়ে দেখতে এসে সেখানেই ভ্যালেন্টাইনের উপহার দেওয়া নেওয়া হয়ে গেল কয়েকজনের। তবে এবার শিব ব্রতের দিনে ভালবাসার দিন বলে নয়, শিব-পার্বতীর এই বিয়ের প্রথা চলছে প্রায় তিনশো বছর ধরে।
[পুলিশ দাদাদের সাহায্যেই বিয়ের পিঁড়িতে দুই সিভিক ভলানটিয়ার]
মহম্মদবাজারের রায়পুর শঙ্করানন্দের আশ্রমে এটাই শিবরাত্রীর রীতি। এভাবেই বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করা হয় মিষ্টি দিয়ে। তারপর ভোজ খাওয়ানো হয় অন্যদিন। সেইমতো এবারও ভোজ খাওয়ানো হবে শনিবার দুপুরে। সেদিনও আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ আসবে ভোজ খেতে। মন্দিরের সেবাইত রাধেশ্যাম গোস্বামী জানান, ‘যুগ যুগ ধরে আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই শিব রাত্রির দিন শিব পার্বতীর বিয়ে দিয়ে আসছে । পৌরাণিক বিয়ে হলেও আমরা গান্ধর্ব মতে সেই নিয়ম মেনে আজও শিব পার্বতী বিয়ে দিই আমাদের আশ্রমে।’
[আরও কাছাকাছি দুই বাংলা, হলদিবাড়ি থেকে চিলাহাটি রেলপথ মার্চেই]