সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ফোর-জি দূর অস্ত। গোটা গ্রাম এখনও মোবাইল বর্জিত। গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার গেলে তবে মেলে সিগন্যাল। তবু সেটিও পর্যাপ্ত নয়। প্রিয়জনদের খোঁজখবর জানতে হলে মোবাইলে টাওয়ার লোকেশন টুকুই সম্বল। রাতবিরেতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও দ্রুত খবর পৌঁছতে হয় সশরীরে হাজির হয়েই। শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মান্তাদাড়ির সমস্তিপুর চা বাগান এলাকার কেডি লেন বস্তির সাতশো মানুষের কাছে মোবাইল ফোনই শুধু নয়, পৌঁছয়নি অন্যান্য অনেক ন্যূনতম পরিষেবাই। ক্ষুব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা বঞ্চনামুক্তির পথ খুঁজছেন। প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে থেকেই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেবেন বলে জানিয়েছেন। দল না মিললে নির্দল থেকেই দাঁড়াবেন।
[১৪ বছরের কর্মজীবনে একদিনও ছুটি না নিয়ে নজির শিক্ষাকর্মীর]
প্রধানমন্ত্রী যেখানে ডিজিটাল ভারত গড়তে চাইছেন, যেখানে ফোর-জি ধারণাও এখন পুরনো হতে চলেছে, সেখানে মোবাইল বর্জিত গ্রাম হিসেবে কেডি লেন এক বিস্ময়। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের মান্তাদাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন সমস্তিপুর চা বাগানের মধ্যে ওই গ্রাম। এখানকার প্রায় একশো মানুষ সমস্তিপুর চা বাগানে কাজ করেন। চা বাগান কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও মোবাইলের টাওয়ার নেই। সবচেয়ে কাছের টাওয়ারটি রয়েছে আমবাড়িতে ১০ কিলোমিটার দূরে। ওই টাওয়ার থেকে সিগন্যাল মেলে ৫ কিলোমিটার গেলে তবেই। তাও কথা স্পষ্ট শোনা যায় না। তাই মোবাইল রাখার প্রয়োজন মনে করেন না কেউই। দু-একজন শখে ফোন কিনলেও তা গ্রামের বাইরে গেলে ব্যবহার করেন। বাকি সময়ে তা ছবি তোলার কাজে ব্যবহার হয়। এলাকার অনির রায়, বিন্দু মাহাতো, সিলাস খালকোরা জানান, শুধু মোবাইল নয়, তাঁদের না পাওয়ার তালিকায় রয়েছে আরও অনেক কিছুই। যেমন কাছের স্কুলটি ১২ কিলোমিটার দূরে গজলডোবায়। নিকটবর্তী বাজারও সেই আমবাড়ি। হাসপাতালে যেতে হলে ছুটতে হয় জলপাইগুড়ি কিংবা শিলিগুড়ি।
[জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা অনুব্রতর, গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল জেলা সভাপতি]
সমস্যার কথা এলাকার বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের মানলেও জানেন না পঞ্চায়েত প্রধান হরিপদ রায়। খগেশ্বরবাবু বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে কেউ দাবি নিয়ে আসেনি। তবে ব্যাপার এতটা গুরুতর জানা ছিল না। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।” এলাকার প্রধান হরিপদবাবুর দাবি তিনি সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহল নন। তবে তিনিও খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বন দপ্তরের স্থানীয় রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত নিজের উদ্যোগে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেছেন। তৈরি করা হয়েছে একটি শৌচাগারও। তবে গ্রামের মানুষ আবেদন-নিবেদন করেও ফল পাননি। ফলে তাঁরা চান দাবি আদায়ে লড়ুক নিজেদের ছেলেরাই। স্থানীয় সিলাস খালকোকে তাঁরা এবার প্রার্থী করে পঞ্চায়েত সদস্য করতে চান। সিলাসও তৈরি। তিনি জানান, “নিজেদের জন্য এবার নিজেদেরই লড়তে হবে। গ্রামে আনতে হবে স্কুল থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর মোবাইল পরিষেবা। নইলে পিছিয়ে যাব যে!”
[চাক ভাঙার লোক নেই, মৌমাছি-আতঙ্কে তটস্থ চাঁচোলের সরকারি হাসপাতাল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.