Advertisement
Advertisement

Breaking News

রক্ত দান

ঝাড়ুদার থেকে সচেতনতা প্রচারক, সাইকেলে ভারত ভ্রমণেই বার্তা নদিয়ার জয়দেবের

রক্তদান সম্পর্কে সচেতন করতে সাইকেলে মিরিক পাড়ি দিয়েছেন জয়দেব৷

Nadia's man's cycle odyssey to spread blood donation awareness
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:June 7, 2019 4:52 pm
  • Updated:August 17, 2021 3:06 pm

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: পেশায় ঝাড়ুদার৷ দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা৷ পঞ্চাশের দোরগোড়ায় বয়স। সময়েরর সঙ্গে সঙ্গে চেহারাতেও বদল এসেছে৷ তাতে কী? স্বপ্ন দেখার বিরাম নেই৷ সেইসঙ্গে প্রবল ইচ্ছাশক্তি। আর এসবকে পাথেয় করে তিনি স্বচ্ছ ভারত প্রচার অভিযানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলেন৷ এবার আরেক নতুন লক্ষ্য নিয়ে ফের ভারত ভ্রমণে পাড়ি দিলেন৷ আর এখানেই অন্যদের থেকে আলাদা নদিয়ার বাসিন্দা জয়দেব রাউত৷

[আরও পড়ুন: এবার অনলাইনে কাটতে পারেন সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট]

শুক্রবার সাইকেল নিয়েই রক্তদানের জন্য মিরিকের উদ্দেশে রওনা দিলেন জয়দেব রাউত। সাতশো কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে ‘রক্তদান মহৎ দান’ এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আগে জয়দেব দুটি বড় কাজ করে গিয়েছেন। হুগলির চাঁপদানিতে জন্ম, বড় হওয়া, পড়াশোনা করা জয়দেবের পৈতৃক ভিটে অবশ্য ওড়িশায়। বাবা ডালহৌসির জুটমিলে কাজ করতেন। তিনি মারা গিয়েছেন। তারপর মাধ্যমিক পাশ করা জয়দেব রাউত ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেন।

Advertisement

চারপাশে পানের পিক, জঞ্জাল,আবর্জনা সাফ করা জয়দেব মনে করেন, সারা ভারতবর্ষে আবর্জনা পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা দরকার৷ আর তাই সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বছ ভারত অভিযানে প্রচারে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সাইকেলের সামনে এবং পিছনে দুটি বোর্ড লাগিয়ে প্রচারে বেরোনো জয়দেব পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্র, কর্ণাটক, গোয়া, অসম, বিহারের মতো কুড়িটি রাজ্য পরিক্রমা করেন৷ প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এক বছর ধরে প্রচারের পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে জয়দেব বাড়ি ফেরেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সিসিটিভিতে নজরবন্দি নবদম্পতিদের গোপন দৃশ্য, তারাপীঠে আটক হোটেলের ম্যানেজার়]

তবে সে বছরই অক্টোবরে ফের বেরিয়ে যান ঝাড়ুদার জয়দেব রাউত৷ দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড- সহ আটটি রাজ্যের মোট আট হাজার কিমি পথ রক্তদানের জন্য প্রচার চালিয়ে এবছরের ৭ মার্চ বাড়ি ফিরেছেন। পাঁচ মাস সময় লেগেছে এই প্রচারের ক্ষেত্রে। রক্তদান বা স্বচ্ছ ভারত অভিযান জয়দেব যাই করুন না কেন, সে সময় তাঁর কাজের জায়গা থেকে বেতন কাটা যায়৷ জয়দেব বলেন, ‘আমি দিনমজুর। কাজ করলে চারশো টাকা পাই। কাজ না করলে কোন টাকা পাই না। আমি কোনও রেকর্ড গড়া বা ভাঙার জন্য এসব করিনা। এই প্রচারে যদি মানুষের সচেতনতা বোধ জাগে, তাতেই আমার ভাল লাগবে।’ কিন্তু রক্তদান নিয়ে এই প্রচার কেন? উত্তরে জয়দেব জানালেন, ছোটবেলায় ফুটবল খেলার সময় তাঁর পেটে চোট লাগে। আঠারো বছরে পেটে বড় অস্ত্রোপচার করা হয়। সেসময় চার ইউনিট ও পজিটিভ রক্ত লাগে। তা যোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা হয়েছিল। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ১৯৯৩ সালে ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন জয়দেব।

[আরও পড়ুন: এক বছর পুরনো মায়ানমারের ইলিশই ভরসা জামাইষষ্ঠীতে, দর হাজার টাকারও বেশি]

তারপর থেকেই তাঁর মনে হত, যদি কিছু করা যায় মানুষের জন্য। তাই একে একে স্বচ্ছ ভারত অভিযান এবং রক্তদান নিয়ে সচেতনতা প্রচার করে বেরিয়েছেন৷ গত ৫ তারিখ বারাসত থেকে মিরিকের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন জয়দেব। রাস্তায় অনেকেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে পঁয়ত্রিশবার রক্ত দিয়েছি। মানুষের কাছে রক্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছেন তাঁদের জন্য। তাই এই প্রচার চালিয়ে যাব।’ সব ঠিক থাকলে ২১ জুন মিরিকে পৌঁছাবেন জয়দেব৷ রওনা দেওয়া সাইকেলের পিছনে ‘ডোনেট ব্লাড, সেভ লাইফ’ লেখাটা বড় উজ্জ্বল লাগছিল। ঘটনা প্রসঙ্গে তেহট্ট ১ এর বিডিও অচ্যুতানন্দ পাঠক বলেন, ‘উনি যে কাজটা করছেন,তা যথেষ্ট প্রশংসাজনক। এজন্য ওনাকে পঞ্চায়েত সমিতিতে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’ রেডক্রসে তেহট্ট মহকুমার সম্পাদক অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘প্রচারের পর রক্তদানের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে। অনেকে এগিয়ে আসবেন বলে আমাদের আশা৷’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ