শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: ‘***- এর লোকজন আজ থেকে আউট অফ মাই লাইফ…আউট অব মাই থটস। আজকে থেকে মি অ্যান্ড মাই ড্রিমস।” জলপাইগুড়ির বিমা আধিকারিক উত্তম মোহন্তের মেয়ে শ্বেতা মোহন্তের শেষ ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নতুন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন এমন পোস্ট করেছিল শ্বেতা? তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ওই ফেসবুক পোস্টের একদিন পর, অর্থাৎ ২৯ জুন রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় উত্তম মোহন্তের। মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লিপিকা মোহন্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ লিপিকার প্রেমিক অনির্বাণ রায় পলাতক। বিমাকর্মীকে খুনের তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবারই উত্তম মোহন্তর মেয়ে শ্বেতা মোহন্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। বাবার রহস্যমৃত্যুর একদিন আগে ২৭ জুন সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে শ্বেতার ওই ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বাবাকে হত্যার ছক আগেই জানত শ্বেতা? তবে কি বাবার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না? মা এবং মায়ের প্রেমিকের সঙ্গেই ছিল বেশি ঘনিষ্ঠতা? সব মিলিয়ে শ্বেতার ওই পোস্টকে আতসকাচের নিচে ফেলে বিমাকর্মীর রহস্যমৃত্যুর জট খুলতে চাইছে পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে এই সব প্রশ্নেরই জট খোলার চেষ্টা চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, শ্বেতা জানত তাঁর মায়ের সঙ্গে অনির্বাণ রায় নামে এক যুবকের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে৷ ওই অনির্বাণকে পালাতে নাকি শ্বেতাই সাহায্য করে, জানতে পেরেছে পুলিশ৷ ওই অভিযোগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ শ্বেতার ফেসবুক প্রোফাইল দেখলেও চমকে উঠতে হয়৷ ভারচুয়াল জগতে শ্বেতার বহু পুরুষ অনুরাগী রয়েছে৷ তার এক একটা ছবিতে লাইক পড়েছে তিনশোরও উপর৷ আবেদনময়ী ভিডিওতে শ্বেতার হাবভাব চমকে দিয়েছে তদন্তকারীদের৷ যে মেয়ের মা ও বাবার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে হতে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তার এরকম আচরণ ধন্দে ফেলেছে পুলিশকে৷ একটি সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে মা ও মেয়ে দুজনেই নাকি তাদের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে দিল্লি যায়৷ মায়ের প্রেমিককে ভালরকমই চিনত শ্বেতা৷
উত্তম মোহন্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পদে পদে রহস্যের খোঁজ পান তদন্তকারীরা৷ তদন্তেই উঠে আসে লিপিকার প্রেমিক অনির্বাণ রায়ের নাম৷ জানা যায়, স্বামীর উপস্থিতিতেই রাতের পর রাত অনির্বাণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হত লিপিকা৷ বেশ কয়েকবার ভিনরাজ্যেও গিয়েছিল তারা দু’জন৷ উত্তমবাবুর মৃত্যুর পর থেকেই পলাতক অনির্বাণ৷ তাকে খুঁজছে পুলিশ৷ লিপিকা আরও জানায়, তার স্বামীর সম্পত্তির দিকে নজর ছিল অনির্বাণের। একাধিকবার তাদের দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে থেকে স্বামী উত্তম মোহন্তকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা অনির্বাণের মুখ থেকেই শুনেছে সে। পুলিশ সূত্রে খবর, লিপিকা মোহন্তর দাবি, সে উত্তম মোহন্তকে খুন করেনি। আমের রসের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে অনির্বাণই খুন করেছে বলে দাবি করেছে সে। এমনকী, ঘটনা আড়াল করতে অনির্বাণই আয়ুর্বেদ চিকিৎসককে ডেকে ডেথ সার্টিফিকেট লিখিয়ে দেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছিল বলেও জানিয়েছে লিপিকা। সেই অনির্বাণকে পালাতে সাহায্য করে লিপিকার মেয়ে শ্বেতা, জানতে পেরেই এদিন তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে লিপিকা৷ তবে লিপিকার বক্তব্য, প্রেমিক অনির্বাণই বিষ খাইয়ে খুন করে স্বামীকে৷
বিমাকর্মী খুনের ঘটনায় বারাসতের মনুয়া কাণ্ডের ছায়া দেখছেন অনেকেই৷ ছক সেই একই৷ প্রেমিকের সঙ্গে প্রণয়ঘটিত কারণে ছক কষে স্বামীকে খুন৷ উত্তম মোহন্তর অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য তাঁর স্ত্রী লিপিকার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন স্থানীয়দের একাংশ৷ তাঁদের বক্তব্য, প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কের মাঝে স্বামী যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ান, তাই পৃথিবী থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে লিপিকা৷ লিপিকা নিজেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, উত্তমবাবুকে পাশের ঘরে খাটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে একাধিকবার অনির্বাণের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়েছে সে৷ প্রায় প্রতিদিনই স্বামীকে খাটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখায় উত্তমবাবুর হাতে ও পায়ে স্থায়ী ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়ে যায়৷ একদিকে ফেরার অনির্বাণের খোঁজ ও অন্যদিকে, শ্বেতাকে জেরা করে মা-বাবার মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন কমেন ছিল, এই জোড়া প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলেই এই হত্যাকাণ্ডের জট অনেকটাই খুলে যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.