Advertisement
Advertisement

কেরলের আতঙ্ক বাংলায়, বারুইপুরের লিচুবাগানে খোঁজ নিপা ভাইরাসের

বাদুড়ে খাওয়া ফল সংগ্রহ করলেন বিশেষজ্ঞরা।

Nipah virus: expert doctors take initiative to detect this virus in Baruipur
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 24, 2018 9:39 am
  • Updated:May 24, 2018 9:41 am

গৌতম ব্রহ্ম: ঘরপোড়া গরু! সিঁদুরে মেঘ দেখলে তো ডরাবেই! কেরলের নিপা ভাইরাস সংক্রমণ তাই কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে বাংলার শিরা-উপশিরায়। আতঙ্ক এতটাই তীব্র যে কেরল কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিপা ভাইরাসের সন্ধানে বিশেষ অভিযান শুরু হল বাংলায়। ভাইরাসের সন্ধানে বারুইপুরের লিচুবাগানে অভিযান চালালেন রাজ্যেরর ডাক্তার-গবেষকরা। সংগ্রহ করা হল নিপা ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়ের বিষ্ঠার নমুনা।

এর আগে দু’ দফায় এই মারণ ভাইরাস পশ্চিমবঙ্গে ৫০ জনের জীবন কেড়েছে। ২০০১ সালে শিলিগুড়িতে নিপার ছোবলে প্রাণ হারান ৪৫ জন। ২০০৭-এ নদিয়ায় পাঁচজন। এই প্রেক্ষাপটে ‘সাবধানের মার নেই’ আপ্তবাক্যটি মাথায় রেখেই নিপার সন্ধান জারি রেখেছেন ডাক্তার-গবেষকরা। বাদুড়ের বিষ্ঠার পাশাপাশি সংগ্রহ করা হচ্ছে বাদুড়ে খাওয়া ফলের নমুনাও। জানা গিয়েছে, লিচু ও আঙুর বাদুড়ের অত্যন্ত প্রিয়। বাদুড়ের হামলায় পাকিস্তান ও ভারতের লিচু চাষের প্রবল ক্ষতি হয়।  তাই লিচুবাগান থেকেই গবেষণার শুরু। বারুইপুর থেকে শুরু হলেও অন্য এলাকা থেকেও বাদুড়ের বিষ্ঠা সংগ্রহ করা হবে। বুধবার এমনটাই জানালেন গবেষক দলের অন্যতম সদস্য পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. অভিষেক দে। গত সপ্তাহে কেরলের কোঝিকোড়,  মল্লপুরম-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় নিপা ভাইরাসের সন্ধান মেলে। এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে দশটি মৃত্যুর খবর মিলেছে। যদিও মৃত্যু আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। রবিবার কেরল কাণ্ড দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন অর্থাৎ সোমবার থেকেই নিপার সন্ধানে ময়দানে নামে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’।

Advertisement

     [মোদি-হাসিনা-মমতার আগমন ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে বিশ্বভারতীতে]

Advertisement

অধ্যাপক ডা. সুদীপ দাস ও সহকারী অধ্যাপক ডা. অভিষেক দে’র তত্ত্বাবধানে শুরু হয় বিশেষ প্রকল্প। সমস্যা বাধে অন্যত্র। এরাজ্যে নিপা ভাইরাস নির্ণয় করার মতো অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি নেই। ভাইরাসের চরিত্র জানার জন্য বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করল ন্যাশনাল। অভিষেক জানালেন,  ‘পলিমারাইজড চেন রিঅ্যাকশন’-এর মাধ্যমে মৃত ভাইরাসের রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ বিশ্লেষণ করা হবে। প্রয়োজনে সাহায্য নেওয়া হবে পুণের ‘ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’-র। নিপা ভাইরাসের হামলার অভিজ্ঞতা অবশ্য বাংলার ভালই আছে। দু’ দফায় এই ভাইরাস ৫০ জনের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। রোগীর রক্ত সংগ্রহ করতে এসে এক ‘ব্লাড কালেক্টর’-ও নিপার ছোবল খেয়েছিলেন। তিনিও প্রাণ হারান। শিলিগুড়িতে মৃত্যুর হার ৬৮ শতাংশ হলেও নদিয়াতে ছিল ১০০ শতাংশ। এই দুই অভিজ্ঞতাই ন্যাশনালের প্রকল্প শুরুর অনুপ্রেরণা। মত অভিষেকের। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের পর্যবেক্ষণ, বেশিরভাগ রোগীই আক্রান্ত হওয়ার দু’তিন দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। অর্থাৎ চিকিৎসা করারও সময় পাওয়া যাচ্ছে না। ওষুধও নেই। শুধু উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মত,  এত ভয়ংকর বলেই নিপা নিয়ে বাড়তি সাবধানতা চাই।

মাটিতে পড়া বা পাখিতে ঠোকরানো ফল কোনওভাবেই খাওয়া চলবে না। সব ফলমূল ধুয়ে খেতে হবে। এর আগে এ রাজ্যে লিচু খেয়ে বহু শিশুর মৃত্যু হয়। সেই সময় যাদবপুরের ‘ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’ মালদহের কালিয়াচকে গিয়ে বাদুড়ের বিষ্ঠা ও বাদুড়ে খাওয়া লিচুর নমুনা সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নিপা ভাইরাসের সন্ধান মেলেনি। এবার কি ফনা তোলার আগেই ন্যাশনালের হাতে ধরা পড়বে নিপা?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ